গাজীপুরে আগুনে নিহতদের শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা হচ্ছে

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:০২

গাজীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

গাজীপুর সদর উপজেলার কেশরিতা গ্রামে রওজা হাইটেকের লাক্সারি ফ্যান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১০ শ্রমিকের মরদেহ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত দলের প্রধান।

দুর্ঘটনায় নিহত ১০ জনের নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে কার লাশ কোনটি সেটি ডিএনএ টেস্ট ছাড়া নির্ণয় করা যাবে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নিহতরা হলেন, ময়মনসিংহের বাঘবপুর গ্রামের মো. সেলিমের ছেলে তরিকুল ইসলাম, দিনাজপুরের বারপাটিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে মো. লিমন ইসলাম, সদর উপজেলার কালনী খান বাড়ি গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে ফয়সাল খান, একই উপজেলার কেশরিতা গ্রামের বীরবল চন্দ্র দাসের ছেলে উত্তম চন্দ্র দাস, শ্রীপুর উপজেলার মারতা গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের ছেলে মো. শামীম, একই উপজেলার মারতা গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে রাশেদ, রংপুরের কাচুবকলতলা গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলাম, নরসিংদীর চর কাশিমনগর  গ্রামের সজল মিয়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুর থানার মোর্শেদ মিয়ার ছেলে ইউসুফ মিয়া।

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ ঢাকা টাইমসকে জানান, কেশরিতা গ্রামের প্রত্যন্ত এই এলাকায় গড়ে তোলা হয় রওজা হাইটেক’র লাক্সারি ফ্যান নামের  কারখানাটি। রবিবার সন্ধ্যার এই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে মারা যান ১০ শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট পৌনে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। এরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারসহ ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।

এদিকে, ভয়াবহ এই প্রাণহানির ঘটনার পর সোমবার সকাল থেকেই কারখানার সামনে শ্রমিক ও স্থানীয় জনতা ভিড় জমাচ্ছে। কারখানা ফটকে রয়েছে পুলিশ সদস্যরা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও নিহতের সহকর্মীরা জানান, নিয়মকানুন না মেনে কারখানাটি চলমান থাকায় এত বেশিসংখ্যক লোজনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আবাসিক এলাকায় ভবন নির্মাণ করে ফ্যান কারখানাটি পরিচালিত হয়। এতে ছাদে নির্মিত টিনশেডে প্রয়োজনীয় দরজা জানালা ছিল না। ফলে অগ্নিকাণ্ডের পর শ্রমিকরা বের হয়ে আসতে পারেনি।

শহীদ তাউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষন দাস ঢাকা টাইমসকে জানান, তার হাসপাতালে ওই ঘটনায় দগ্ধ স্থানীয় কেশরিতা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ও জামুনা এলাকার আব্দুল মোতালেববের ছেলে মো. হাসান ভর্তি আছেন।

ঘটনা তদন্তে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শাহিনুর ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় দেয়া হয়েছে সাত কার্যদিবস। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার করে টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও আলাদা তদন্ত টিম গঠন করা হচ্ছে জানিয়ে সংস্থাটির উপ-সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ জানান, নিভৃত এবং গ্রাম এলাকায় গড়ে ওঠা লাক্সারি ফ্যান কারখানায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি ছিল না। ছোট কারখানার টিনশেডের বর্ধিত অংশে জরুরি একাধিক বহির্গমন পথ না থাকায় একসঙ্গে এতগুলো প্রাণহানির ঘটনা চলছে। কারখানায় নিহতদের শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতি পূরণ দেয়া হবে। তবে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি ও কারণ এখনো জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৬ডিসেম্বর/জেবি)