মোতালেব প্লাজায় তৈরি হচ্ছিল নকল আইফোন

প্রকাশ | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:১৫

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

দোকানে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন ব্রাণ্ডের মোবাইল। রয়েছে চার্জার, হেডফোন এবং স্টিকার। অনলাইনে আইফোনের অর্ডার পেলে তৈরি করা হতো বিভিন্ন মডেল। কম দাম কিংবা ছাড় থাকায় ক্রেতার সংখ্যাটাও ছিলো বেশি। লেনদেন হতো কয়েক লাখ টাকা। ক্রেতারা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে আইফোন কিনলেও সবই ছিলো নকল। কারণ রাজধানীর মোতালেব প্লাজার একটি দোকান ভাড়া নিয়ে চলছিলো আইফোন তৈরির কাজ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে মার্কেটটিতে নকল আইফোন তৈরির দোকানের সন্ধান পায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পঞ্চম তলার একটি কর্নারে 'ক্লাসিক টেলিকম' নামের প্রতিষ্ঠানটি দুইমাস ধরে দোকান ভাড়া নিয়ে এ কার্যক্রম চালাচ্ছিলো। অভিযানের খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তালা ভেঙে দোকানে প্রবেশ করে এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড ধরা পড়ে। এসময় আইফোন ছাড়াও অপপো, ভিভো, নকিয়াসহ বিভিন্ন ব্যাণ্ডের সেট তৈরির সিল ও সরঞ্জাম পাওয়া যায়। অভিযানে আটটি প্রতিষ্ঠানকে ১১লাখ টাকা জরিমানা এবং একজনকে একবছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করেন বিটিআরসির সহকারী পরিচালক কাজী মাঈনুল হাসান, র‌্যাব-৩ এর উপ অধিনায়ক মেজর রাহাত আমিন খান।

সারওয়ার আলম ঢাকাটাইমসকে জানান, 'র‌্যাব-৩ এবং বিটিআরসি যৌথভাবে হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজায় অভিযান চালায়। আটটি প্রতিষ্ঠানকে ১১ লাখ টাকা জরিমানা এবং একজনকে বিনাশ্রম কারাদণ্ড করা হয়েছে। আমরা বেশ কয়েকটি অনিয়ম পেয়েছি। এখানে বিভিন্ন ব্যাণ্ডের নকল মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন মোবাইল ফোন সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আনা হয়েছে।'

 

'অনলাইনে নকল আইফোন বিক্রির একটি দোকান পাওয়া গেছে। যেখানে আইফোনের নকল মোবাইল, চার্জার, ব্যাটারি এবং হেডফোন পাওয়া গেছে। এই সমস্ত মোবাইল সেট যারা তৈরি এবং বিক্রির সঙ্গে জড়িত তাদের কারণে ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, প্রতারিত হচ্ছে। তাছাড়া এসব মোবাইল দিয়ে বিভিন্ন ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিস্ট কর্মকাণ্ড ঘটছে। বিভিন্ন সময় এসব মোবাইল ব্যবহার করে অপরাধ কর্মকাণ্ড চলছে। একই সঙ্গে সরকারের বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে।'

এসব মোবাইল ব্যবহারের কারণে হাই রেডিয়েশনে সাধারণ ব্যবহারকারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে জানিয়ে সারওয়ার আলম বলেন, 'অল্প সময়ে এসব ফোন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমাদের ই-ওয়েস্টে বা ইলেক্ট্রনিকস বর্জ্যের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে। একটি অরিজিন্যাল মোবাইল সেট তিনবছর থেকে পাঁচবছর যাবে কিন্তু ক্লোন বা নকল সেট, যন্ত্রাংশ ব্যবহারের ফলে একমাস বা ছয়মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এসব কারণে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি এবং এই ধরনের অভিযান অব্যাহৃত থাকবে।'

ক্রেতারা কিভাবে আসল নকল মোবাইল বুঝবে এমন প্রশ্নে সারওয়ার আলম জানান, 'এগুলো আসলে বোঝা খুবই কষ্টসাধ্য। তবে বিটিআরসি একটা নম্বর রয়েছে যে নম্বরে এসএমএস পাঠালে একটা আইএমই নম্বর পাঠানো হয়। এতেই বোঝা যায় মোবাইলটি আসল নাকি নকল। আমরা মনে করি এই বিষয়টি আরো বেশি প্রচারিত হওয়া দরকার। অনেক কাস্টমার বা মোবাইল ব্যবহারকারী বিষয়টি জানে না।'

'যেসব মোবাইল জব্দ করা হয়েছে সব আমরা ধ্বংস করে দিবো। যেসব দোকানি পালাতক রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে একটা মামলা হবে।'

ঢাকাটাইমস/১৯ডিসেম্বর/এসএস/ইএস