টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথ

ভাড়া ও যাত্রী পরিবহনে কোনো নিয়মই মানছে না জাহাজগুলো

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
| আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:২৫ | প্রকাশিত : ২২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:২০

বছরের এই সময়টা থেকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পর্যটকদের বেড়ানোর অন্যতম গন্তব্য প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। দেশের সর্বদক্ষিণের এই দ্বীপে যেতে একমাত্র ভরসা পর্যটকবাহী জাহাজ। টেকনাফের দমদমিয়া জেটি থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন কোম্পানির ছয়টি জাহাজ পর্যটকদের নিয়ে সেন্টমার্টিন যায়। আবার বিকালে টেকনাফের উদ্দেশে সেন্টমার্টিন ছেড়ে আসে।

তবে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে জাহাজগুলো। যাত্রী পরিবহনের কোনো নিয়মনীতিরই তোয়াক্কা করছে না। পর্যটকদের অভিযোগ, ঝুঁকি নিয়ে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন, অব্যবস্থাপনা ও টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ।

পর্যটন মৌসুমে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ঢল নামে সেন্টমার্টিনের দিকে। তাদের বহন করতে টেকনাফের দমদমিয়া জেটি ঘাট থেকে যাতায়াত করে ৬টি জাহাজ। এসব জাহাজের মোট ধারণক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিদিন সেন্টমার্টিনে যাওয়ার কথা ১ থেকে ২ হাজার পর্যটকের। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে পর্যটক যাচ্ছে ৫ হাজারের বেশি। এদিকে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে সমুদ্রপথে যেমন রয়েছে ঝুঁকি, তেমনি পর্যটকদের পড়তে হচ্ছে নানা দুর্ভোগে।

পর্যটকদের অভিযোগ, জাহাজে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি লোক নেয়া হয়। এছাড়া টিকিটের বাইরেও প্রচুর লোক জাহাজে ওঠেন। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে লঞ্চের ছাদে পর্যন্ত দাঁড়ানো যায় না। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র যাতায়াতে জাহাজগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান তারা।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে নারাজ জাহাজ কর্তৃপক্ষ। এরকম ত্রুটির কারণে ১৯ ডিসেম্বর দমদমিয়া ঘাট থেকে দ্য আটলান্টিক ক্রুজ নামের একটি জাহাজ সেন্টমার্টিন যেতে পারেনি। যার কারণে অতিরিক্ত যাত্রীসহ প্রায় এক হাজার পর্যটক স্বপ্নের সেন্টমার্টিন যেতে পারেনি। ফেরত আসতে হয়েছে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায়। অনেক পর্যটক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে প্রবালদ্বীপে যেতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং এসব লক্কড়-ঝক্কড় জাহাজের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান।

তবে অভিযোগ পেলে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ববস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার।

জানা যায়, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজে মাথাপিছু ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। তবে তা মানে না জাহাজ কর্তৃপক্ষ। তারা পর্যটকদের কাছে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ভাড়া বাড়ানোর ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগও রয়েছে। অসদুপায় অবলম্বন করে আটলান্টিক জাহাজের মালিক এক মাসের মধ্যে তিনবার জাহাজের টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি করেছেন।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফের নাফ নদীর দমদমিয়া জেটিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি জাহাজে ধারণক্ষমতার বেশি পর্যটক তোলা হয়েছে। এমনকি ছাদের খোলা জায়গাতেও সেন্টমার্টিনগামী পর্যটক ভরা।

ঢাকার বনানী থেকে আসা আলমাস নামের এক পর্যটক বলেন, ‘তিন বছর আগে ৫৫০ টাকা ভাড়ায় এলসিটি কুতুবদিয়া (আটলান্টিক ক্রুজ) সেন্টমার্টিনে গিয়েছি। এবার সেই টিকিট কিনতে হয়েছে ৯০০ টাকায়। এরপরও বসার জন্য জাহাজে কোনো আসন পাইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেটি থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর কিছুদূর গিয়ে জাহাজ বিকল হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে কক্সবাজারে। আমার মতো হাজারো পর্যটককে ফিরে আসতে হয়েছে।’

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মুখপাত্র এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে প্রবাল দ্বীপ। নিয়ন্ত্রণহীন সেন্টমার্টিনে চলাচলরত জাহাজগুলো, নির্দিষ্ট আসনের চাইতে অতিরিক্ত বিক্রি করছে জাহাজের টিকিট। এ কারণে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। প্রশাসনের এখনই উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবুল মনসুর বলেন, পর্যটকদের জানমাল ও নিরাপত্তা সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব। তবে কিছু জাহাজ অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।’

তিনি জানান, প্রতিটি জাহাজের ধারণক্ষমতা অনুসারে লাইফ জ্যাকেট রাখার জন্য জাহাজ কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সতর্ক করা হয়েছে। এ নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকাটাইমস/২২ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :