মোবারকের হাতে ‘আলাদিনের চেরাগ’

প্রকাশ | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:১৭

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা টাইমস

তিনি গত কয়েক বছরে বনে গেছেন টাকার কুমির। পাড়াগাঁয়ে থেকে চড়েন অর্ধকোটির টাকার গাড়িতে। সাধারণ চাতালকলের মালিক থেকে রাতারাতি প্রায় শতকোটি টাকার মালিক ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা মো. মোবারক। এলাকার কেউ কেউ মজা করে বলেন, মোবারকের হাতে আলাদিনের চেরাগ।

সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়ন যুবলীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পৃথক কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে।

জানা গেছে, দুদকে জমা দেওয়া নথিপত্রে মোবারকের বর্তমান অর্জিত সম্পদের সঙ্গে পাঁচ বছর আগের সম্পদের অসামঞ্জস্য তুলে ধরা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিতে এই প্রতিনিধি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন সাতবর্গ বাজারে মোবারকের চাতালকল। তার ব্যবসার অবস্থা নাজুক। চাতালের ব্যবসা মন্দা বলে সাতবর্গ বাজারে বেশির ভাগ চাতালকল বন্ধ হওয়ার জোগাড়। যে কয়েকটা চাতালকল আছে সেগুলো চলছে ঢিমেতালে।

সাতবর্গ বাজারের চাতালকল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের প্রায় সবার ব্যবসা মন্দা। মোবারকের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মোবারকের বিরুদ্ধে দুদকে জমা পড়া নথিপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, তার বিরুদ্ধে দুদকে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত চলা অবস্থায় গণমাধ্যমে এর বেশি কিছু বলায় নিষেধাজ্ঞা আছে বলে জানান তিনি। তবে অভিযোগের পরবর্তী করণীয় তদন্ত সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে পরে।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজ গ্রামে লিফট ওয়ালা ছয়তলা বাড়ি রয়েছে মোবারকের। অর্ধকোটি টাকার গাড়িসহ তার রাজকীয় চলাফেরা এলাকার মানুষের মধ্যে কৌতূহরের সৃষ্টি করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বুধন্তী ইউনিয়নের এক যুবলীগ নেতা ঢাকা টাইমসকে জানান, মোবারক ইয়াবা ব্যবসা, সরকারি দপ্তরে টেন্ডার দালালি, বালুমহালসহ নানা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি একজন প্রভাবশালী এমপির তলপিবাহক বলেও জানান যুবলীগের ওই নেতা।

এর আগে গত ২৬ নভেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন এহসানুল চৌধুরী নয়ন নামে এক ব্যাক্তি। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, মোবারক বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে। তিনি বুধন্তী ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সাতবর্গ বাজারের অন্যান্য চালকল ব্যবসায়ীর মতো তিনিও একজন সাধারণ চালকল ব্যবসায়ী। চালকলের বাইরে তার উল্লেখ করার মতো কোনো ব্যবসা নেই।’

মোবারক সরাসরি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয় ওই অভিযোগটিতে। তাতে বলা হয়, তিনি তার বিলাসবহুল গাড়ির মাধ্যমে সীমান্তবর্তী এলাকা আখাউড়া থেকে ইয়াবা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য ঢাকায় সরবরাহ করে থাকেন। অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় ৩০-৪০ কোটি টাকা সম্পদ একাধিক ব্যাংক হিসাবে তার বাবা ফিরোজ মিয়া ও বোনজামাই কুদ্দুস মিয়ার নামে এফডিআর করা আছে। গাড়িতে অগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করারও অভিযোগ করা হয়।

একটি সূত্র জানায়, মোবারকের অবৈধ অর্থ উপার্জনের দাবি করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আরও অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে বুধন্তী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিতু মিয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘চাতাল মিল তো অনেকেরই আছে, কিন্তু চাতাল মিল দিয়ে কি এত টাকা আয় করা সম্ভব! ছয়-সাততলা বাড়ি, গাড়ি এত কিছু করা সম্ভব না।’ অবৈধ ব্যবসা করে অনেকেই এখন রাতারাতি ধনী হয়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ফোনে যোগোযোগ করলে মোবারক হোসেন দাবি করেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি বলেন, ‘আমার শত্রুপক্ষ আমাকে গায়েল করতে এসব করছে। আমি কোনো দুর্নীতি করে টাকা কামাই করিনি।’ অল্প সময়ে এত টাকা উপার্জন, বাড়ি-গাড়ি ও আয়ের উৎস জানতে চাইলে তা এড়িয়ে যান এই ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা।

(ঢাকাটাইমস/২৩ডিসেম্বর/মোআ)