শত বছর ধরে আলো ছড়াচ্ছে বালুভরা আর.বি স্কুল

সাজেদুর রহমান সাজু, নওগাঁ
| আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:৪৫ | প্রকাশিত : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:১৯

১৯০৬ সালের দিকে নওগাঁ অঞ্চলে প্রাতিষ্ঠানিক কোন বিদ্যাপীঠ ছিল না। কুসংস্কারে ভরা ছিল পুরো সমাজ ব্যবস্থা। শিক্ষিত লোকজনও ছিল হাতেগোনা। ঠিক সে সময় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় ছোট যমুনা নদীর তীরে বালুভরা গ্রামে প্রতিষ্ঠা হয় ‘বালুভরা আরবি বিদ্যালয়’। শশীভূষণ চক্রবর্ত্তী নামে একজন শিক্ষানুরাগী একক চেষ্টায় গড়ে তুলেন এ বিদ্যালয়টি।

‘বালুভরা আর.বি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ’ নামে নওগাঁ জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শশীভূষণ নিজে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে বিনা পয়সায় শুরু করেন পাঠ দান। শুরুর দিকে কেবল পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হতো বিদ্যালয়টিতে। মাটির দেয়ালে গড়ে উঠা সেই বিদ্যালয়টি আজ একটি সত্যিকারের আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

এক পর্যায়ে ১৯১৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে বিদ্যালয়টি। এরপর ১৯৬৮ সালে ‘বালুভরা আরবি উচ্চ বিদ্যালয়ের’ শিক্ষার্থীরা প্রথমবারেরমত এসএসসি বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেয়। আর ২০১৮ সাল থেকে চালু হয়েছে ইন্টারমিডিয়েট কোর্স।

১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করা স্বর্গীয় শশীভূষণ চক্রবর্ত্তী বিএ-সহ বেশ কয়েকটি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। জাতি-ধর্মের ঊর্ধ্বে থেকে সকলকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করায় ছিল তার উদ্দেশ্য।

তিল তিল করে গড়ে উঠা সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এখন আর মাটির দেয়ালে কাঁচা ঘর নেই। শশীভূষণ চক্রবর্ত্তী পরলোক গমনের পর তার নাতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মাণ হয় ইট-পাথরের চারটি বহুতল ভবন। এখন শুধু নওগাঁ নয়; আশপাশের জেলা থেকেও আসে শিক্ষার্থীরা।

বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার আছে। যেখানে একাডেমিক বই ছাড়াও কবিতা, উপন্যাস, জীবনীসহ বিভিন্ন ধরনের ছয় হাজার বই এবং কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের অন্তত ৪০০ ছবি টানানো আছে। যেখানে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও বাইরের পাঠকরাও আসেন তাদের জ্ঞান পিপাসা মেটাতে। শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল জ্ঞানদানে একটি সমৃদ্ধ কম্পিউটার ল্যাব করা হয়েছে এখানে।

বিদ্যালয়টির ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী কৌশিক চক্রবর্ত্তী ও ৭ম শ্রেণির যুঁথী আখতার জানায়, প্রতিদিনের নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকা- নিয়মিতই হয় এই বিদ্যালয়ে। পিছিয়েপড়াদের টেনে তুলতে আলাদা যতœ নেন শিক্ষকরা। তাই অন্য স্কুলে না গিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকেই শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয় তারা।

প্রধান শিক্ষক মোত্তালেব হোসেন বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী ও সুনামধন্য এমন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রধানের দায়িত্বে থাকাটাও গৌরবের।’

তিনি জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। বছরজুড়ে এখানে বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বার্ষিক বনভোজ হয়ে থাকে। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে বিদ্যালয়টি গৌরবের ১০৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

বিদ্যালয়টির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক, উন্নয়ন সহযোগী ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘সুশৃঙ্খল জাতি ও পরিমার্জিত সমাজ গঠনে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিদ্যালয়টি জ্ঞানের আলোক রশ্মি ছড়িয়েছে যথার্থভাবে। অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তির জন্মও হয়েছে এই বিদ্যালয় থেকে। তাই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি।’

(ঢাকাটাইমস/২৩ডিসেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :