পান না কোনো প্রতিকার

হামলা থামছেই না ভিপি নুরের ওপর

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:৫৫ | প্রকাশিত : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:৩৪
ফাইল ছবি

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন দিয়ে আলোচনায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুল হক নুর। ওই আন্দোলনের পর পরিচিতি পাওয়া নুর ছাত্রলীগের প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে ডাকসুর ভিপি পদে নির্বাচিত হন। ডাকসু ভিপি হওয়ার পর থেকে তার ওপর হামলা যেন থামছেই না। হামলা হয়েছে ভিপি হওয়ার আগেও। নিজ ক্যাম্পাসসহ একাধিক জায়গায় বারংবার হামলার শিকার হওয়া এই ছাত্রনেতাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দেশজুড়ে।

নুরের ওপর হামলাগুলো সংঘটনের পর অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তবে বরাবরই সেসব অভিযোগ খারিজ করে দেয় ছাত্র সংগঠনটি। তবে সবশেষ দুটি হামলায় অভিযোগ গেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গতকাল ডাকসুতে নিজকক্ষে এই সংগঠনটির ব্যানারে নুরসহ তার সঙ্গিদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এই হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে নুরসহ ছয়জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

হামলার বিষয়ে নুরের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রশাসনের প্রশ্রয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, মশিউর রহমানসহ অন্তত ৪০ জনের উপর হামলা হয়েছে। কারও পা ভেঙে গেছে, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, বমি করছে, বুকের হাড় ভেঙে গেছে। অনেকে আইসিইউতে রয়েছে। অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।’

হামলার সময় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ব্যানারে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তৎপর দেখা গেলেও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কিংবা ছাত্রলীগ কেউই দলগতভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তার দাবি করেছেন, ভিপি নূর বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসু ভবনে অবস্থান নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা’ তাদের প্রতিহত করেছে। হামলায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন।

আর ঘটনার পর ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নুর নিজের দুর্নীতি ঢাকতে বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসুকে ব্যবহার করে অরাজকতা করছেন। সে সকাল থেকে বহিরাগতদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ডাকসুতে আশ্রয় দিয়ে রেখেছিল।’

ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নুরসহ আহতদের ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে পাঠিয়েছি। সেখানে সহকারী প্রক্টররা আছেন। আগে চিকিৎসা হোক, পরে সবার বক্তব্য শুনে তারপর ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে ভিপি নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ইশা ছাত্র আন্দোলন। প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্র ফেডারেশন।

হাসপাতালে নুরকে দেখতে যান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সদ্য প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়া জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বাহাউদ্দিন নাছিম। এছাড়া ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলও নুরকে দেখতে যান।

ঢাবির মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকলেও কোটা আন্দোলন থেকে ছাত্রলীগের বিরাগভাজন হয়ে ওঠেন নূর। প্রশ্ন ওঠেছে কেন নূরের ওপর বারবার এই হামলা? ভিপি নূরের দাবি, ‘কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি দেশের ছাত্রসমাজের মধ্যে যে আস্থা তৈরি করেছেন, তা নিয়েই ছাত্রলীগ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চকে তিনি ‘দালালি’ সংগঠন দাবি করছেন। তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আসলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নয়।

এদিকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেল সমাজসেবা সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হওয়া আখতার হোসেন হামলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের পরাজয়ের ক্ষোভ থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করছে। পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করে আমাদের অনেককে আহত করা হয়েছে।’

যদিও এসব হামলার সঙ্গে নিজেদের নেতাকর্মী জড়িত এমনটা মানতে চায় না ছাত্রলীগ। সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের দাবি, মানুষের সহমর্মিতা আদায় করতে নূরর আহত হওয়ার বিষয়টিও তারা মানতে রাজি নয়। তারা বলছেন, ছাত্রলীগের কেউ হামলায় জড়িত না। সবশেষ হামলার জন্য নূরের ওপরই দায় চাপিয়েছেন ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ প্যানেলের সাহিত্য সম্পাদক প্রার্থী মো. আকরাম হোসাইন ঢাকা টাইমসকে বলেন, এ পর্যন্ত ভিপি নূরুল হক নূর নয়বার হামলার শিকার হয়েছেন। নির্বাচনের আগে দুইবার হামলার শিকার হয়েছেন। ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর সাতবার হামলার শিকার হয়েছেন।’

২৮ বছর পর ডাকসুর নির্বাচিত একজন ভিপির ওপর এমন হামলা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নূরের নিরাপত্তায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখানে প্রশাসন আছে বলে মনে হয় না। কারণ আহতরা বললো প্রক্টরের সহযোগিতা চাইলে তিনি উল্টো ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার জন্য পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এটা দুঃখজনক। এমন প্রশাসন আমাদের সময় ছিলো না।’

এদিকে ভিপির ওপর হামলা গ্রহণযোগ্য নয় দাবি করে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের সবাইকে নিজ দায়িত্ব পালনে শৈতিল্য প্রদর্শন না করে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহবান জানাচ্ছি।’

এই ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র আছে কি না- তাও খতিয়ে দেখার কথা বলছেন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘এখানে গভীর কোন ষড়ষন্ত্র আছে কিনা তা দেখতে হবে। বহিরাগত এনে কারো উপর হামলা, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। ’

যেখান থেকে হামলা শুরু

সরকারি চাকুরীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন হামলার শিকার হন কোটা আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূরসহ বেশ কয়েকজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর ওই হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতবছরের ৩০ জুন এই হামলা হয়।

এরপর হামলার শিকার হন ডাকসু নির্বাচনের দিন অর্থাৎ গত ১১ মার্চ। নির্বাচনে ভোট কারচুপির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ঢাবির রোকেয়া হলে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন নূর। হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে। সেখানে বসেই ভিপি পদে জয়ের সংবাদ পান তিনি।

এখানেই শেষ নয়, ভিপি হয়ে ক্যাম্পাসে এসেই হামলার মুখে পড়েন নূর। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরদিন ১২ মার্চ ঢাবিতে ঢোকার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার ওপর হামলা করে। এছাড়াও গত ২ এপ্রিল এক ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এসএম হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন ভিপি নূর।

এরপরের হামলা ও বাধার মুখে পড়েন ইফতার মাহফিল করাকে কেন্দ্র করে। গত ২৫ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ইফতারে গিয়ে ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়েন নূর। বাধায় ইফতার না করেই ফিরে যেতে হয় তাকে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাধা পেলেও পরদিন ২৬ মে ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে গিয়ে নূর হামলা মুখে পড়েন বগুড়ায়। বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে নূরের পক্ষ থেকে।

এরপর নিজ এলাকা পটুয়াখালীর গলাচিপায় হামলার শিকার হন ভিপি নূর। গত ১৪ আগস্ট ঈদুল আজহা উদযাপন করতে গিয়ে তিনি হামলায় আহত হন।

সবশেষ পাঁচদিনের ব্যবধানে ঢাবি কাম্পাসে দুইবার হামলার শিকার হলেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর ও তার অনুসারীরা। গত ১৭ ডিসম্বের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই হামলায় নূরের দুই আঙুল ভেঙে যায়। আর গতকালকের হামলার শিকার হন ডাকসুতে নিজের কক্ষে।

ঢাকাটাইমস/২৩ডিসেম্বর/বিইউ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :