অভিজাত মিষ্টির মানহীন কারখানা!

প্রকাশ | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:১২ | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:০১

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

রাজধানী ঢাকার অভিজাত মিষ্টান্ন ভান্ডার প্রিমিয়াম সুইটস। এই অfভিজাত্য যেমন প্যাকেটের বাহারে, তেমনি দামের দিক দিয়েও। মানের প্রতি বিশ্বাস করে গ্রাহক উচ্চমূল্য দিয়ে নিশ্চিন্তে এদের কাছ থেকে মিষ্টি কেনেন। কিন্তু নামকরা এই প্রতিষ্ঠানের কারখানার নোংরা পরিবেশ দেখে হতভম্ব নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। গাজীপুরের পুবাইলে অবস্থিত কারখানার নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে প্রিমিয়াম সুইটসকে কোনো গ্রেড দেয়নি কর্তৃপক্ষ (তবে এগুলো সি গ্রেড হিসেবে গণ্য হয়)।

অভিজাত নামধারী বনফুল অ্যান্ড কোং, মধুবন, শাহী মিঠাইসহ আরও কিছু বহুল পরিচিত মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠানের কারখানার চিত্রও একই রকম।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মান অনুযায়ী ‘এ’ গ্রেড পাওয়ার জন্য দরকার ৮০ পয়েন্ট। পুবাইলের প্রিমিয়াম সুইটস পেয়েছে ২৪ পয়েন্ট। সাভারের বনফুল অ্যান্ড কোং ৪০, মধ্য বাড্ডার মধুবন ৫২, মোহাম্মদপুরের শাহী মিঠাই ৪৪, ডেমরার রস ফুড অ্যান্ড বেকারি (মিষ্টান্ন) ৬৭ এবং বাঙ্কার্স ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট পেয়েছে ২৭ পয়েন্ট।

সম্প্রতি সরেজমিনে এসব কারখানা পরিদর্শন শেষে ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হয় তাদের মান উন্নয়নের জন্য আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে প্রয়োজনে কারখানা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি।

কিছুদিন আগে ঢাকা শহরের অনেক এলাকার রেস্টুরেন্টের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে গ্রেডিং স্টিকার লাগানো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে দ্বিতীয় পর্যায়ে গত রবিবার স্টিকার দেয়া হয়েছে মিষ্টি ও বেকারি কারখানাকে। মিষ্টি ও বেকারি পণ্যে রং মাখানোসহ নানা ধরনের অভিযোগে অনেক সময় জেল-জরিমানাও হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানের লোকদের।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, এর আগে সংস্থাটির পক্ষ থেকে মিষ্টি ও বেকারির মালিকদের সচেতন করতে কাজ করে। তাদের বেশ কিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়। এরপর তারা মিষ্টি উৎপাদনের কারখানায় সরেজমিনে যান। দেশের নামিদামি এসব প্রতিষ্ঠানের কারখানার চিত্র এমন দেখবেন তা ভাবেননি তারা। মশা-মাছি, নোংরা পাত্রে মিষ্টি তৈরির সরঞ্জাম পেয়েছেন তারা। এমনকি গ্যারেজের কাছে কারখানা তৈরি করেছে একটি প্রতিষ্ঠান।

পরিদর্শনে যাওয়া একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চিন্তা করা যায় গ্যারেজ থেকে গাড়ি, মোটরসাইকেল স্টার্ট দিচ্ছে, সেই ধোঁয়া কারাখানার ভেতরে চলে আসছে। নিজেদের চোখে দেখেছি। এটা সম্ভব! এসব কোনো প্রতিষ্ঠানের কারখানাই স্বাস্থ্যসম্মত পাওয়া যায়নি।’

প্রতিষ্ঠানটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রিমিয়াম সুইটস সবচেয়ে নামকরা এবং দামি মিষ্টি হিসেবে দেশে খ্যাত। বিশেষ করে ঢাকা শহরে। এদের কারখানার পরিবেশ এত খারাপ পাওয়া গেছে যে কোনো গ্রেডেশন স্টিকার দেয়া হয়নি।’

দেশে মিষ্টির ব্যবসা একসময় ঘোষদের দখলে থাকলেও এখন অবস্থা বদলেছে। বড় বিনিয়োগ নিয়ে মিষ্টির চেনশপ চালু হয়েছে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে। তারা ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন। তবে ক্রেতাদের মধ্যে দাম নিয়ে আছে আপত্তি।

ব্র্যান্ডের মিষ্টির দোকানে বেশি দাম দিয়ে মিষ্টি কেনার পর এদের নোংরা পরিবেশ নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরাও।

তবে উল্টো চিত্রও আছে মাঝারি খ্যাত মিষ্টি ও বেকারির কারখানাগুলোতে। সার্বিক পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত দেখে কাউকে কাউকে ‘এ’ গ্রেড, কাউকে ‘বি’ গ্রেডের স্টিকার দেয়া হয়েছে।

৮০ ভাগের ওপরে মানসম্পন্ন কারখানাকে ‘এ’ গ্রেড দেয়া হয়েছে। এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৮০ নম্বর পেয়েছে মেরুল বাড্ডার সেঞ্চুরী সুইটস, খিলগাঁওয়ের ব্লু মুন রেস্টুরেন্ট, মিস্টার বার্গার, কফি লাইম, ভূতের আড্ডা।

৮১ নম্বর পেয়েছে কাফরুলের ভাগ্যকূল মিষ্টান্ন ভান্ডার, মোহাম্মদপুরের টেক আউট, খিলগাঁওয়ের ক্যাভেন রেস্টুরেন্ট। খিলগাঁওয়ের ক্যাফে চেরি ড্রপস পেয়েছে ৮২ নম্বর। ৮৩ নম্বর পেয়েছে পল্লবীর বনলতা সুইট অ্যান্ড বেকারি। বনানীর টেক আউট পেয়েছে ৮৮.৪৬, খিলগাঁওয়ের আপন কফি হাউস ৮৫, গোল্টেন গেট ৮৪ নম্বর, জিরাবোর কোপার্স পেয়েছে ৮৮.০৪ নম্বর। এদের দেয়া হয়েছে নীল রংয়ের স্টিকার।

এ ছাড়া ‘বি’ গ্রেড পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ৭০ নম্বর পেয়েছে খিলগাঁওয়ের অলিভার্স, পপি’স কফি। ৭১ নম্বর পেয়েছে খিলগাঁওয়ের ট্রাডিশন বিডি, ক্যাফে অ্যাপিলিয়ানো, কেভিয়ার রেস্টুরেস্ট, স্পাইস রুট রেস্টুরেন্ট টেক আউট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরের বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার পেয়েছে ৭২ নম্বর। তারি স্টোরি রুফ টপ দেয়া হয়েছে ৭৩.৫। এদের দেয়া হয়েছে হলুদ রংয়ের স্টিকার।

আর ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য লাল রং ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এদের কোনো গ্রেড দেয়নি কর্তৃপক্ষ। দেখা গেছে, যেখানে অন্যরা ৮০ থেকে ৭০ নম্বর পেয়েছেন সেখানে পুবাইলের প্রিমিয়াম সুইটসকে দেয়া হয়েছে ২৪ নম্বর। সাভারের বনফুল অ্যান্ড কোং ৪০, মধ্য বাড্ডার মধুবন ৫২, মোহাম্মদপুরের শাহী মিঠাই ৪৪, ডেমরার রস ফুড অ্যান্ড বেকারি (মিষ্টান্ন) ৬৭ এবং বাঙ্কার্স ক্যাফে অ্রান্ড রেস্টুরেন্ট ২৭ নম্বর পেয়েছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন এ বিষয়ে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে কাউকে দায়ী করছি না। আমাদের পুরো সিস্টেম এর জন্য দায়ী। যুগ যুগ ধরে এসব প্রতিষ্ঠান এভাবে চলে আসছে। কেউ তাদের জবাবদিহির মধ্যে আনেনি। এ ছাড়া তাদের অতি মুনাফার লোভ তো আছেই। এভাবে আর চলতে দেয়া যাবে না। আমরা পরিবর্তন আনবই।’

(ঢাকাটাইমস/২৪ডিসেম্বর/মোআ)