ঘন কুয়াশায় ঝুঁকিতে চলে নৌ-যান, নেই আধুনিক যন্ত্র

প্রকাশ | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:২৩

শরীফুল ইসলাম, চাঁদপুর

ঘন কুয়াশায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে চাঁদপুরের নৌপথ। বেশিরভাগ যাত্রীবাহী নৌযানে নেই কুয়াশার ভেতরে চলাচল উপযোগী আধুনিক যন্ত্রপাতি। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে চাঁদপুরের যাত্রীবাহী নৌযান। এ অবস্থায় চালকরা দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন। এছাড়া ঘন কুয়াশার কারণে চাঁদপুর মেঘনা নদীতে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না লঞ্চগুলো।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কুয়াশার ভেতর দিয়েই চাঁদপুর থেকে বিভিন্ন লঞ্চ ছেড়ে যায়। কুয়াশায় অধিকাংশ সময় লঞ্চ চলাচলে কিছু নিময়নীতি থাকলেও মেনে চলেছে না কেউ। ঝুঁকি নিয়েই চাঁদপুর ঘাট ছাড়ছে লঞ্চগুলো। শুধু তাই নয়, এতে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কাও দেখা দিচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ বলছে, চলতি পথে কুয়াশা হলে নৌযান থামিয়ে বাজাতে হবে হুইসেল। ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

চাঁদপুরে ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই শীতের পাশাপাশি আকাশে থাকছে কুয়াশা। কখনও কখনও ঘন কুয়াশার কারণে দূরের কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। দিনে সূর্যের আলো পর্যন্ত কুয়াশা ভেদ করতে পারছে না। আর এরই মধ্যে ঝুঁকি নিয়েই চলছে যাত্রীবাহী নৌযান।

প্রতিবছর ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় ও চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী শতাধিক লঞ্চ। এতে করে চাঁদপুরের বিভিন্ন চরে আটকা পড়েছে নৌযানগুলো। এছাড়া ঘটছে সংঘর্ষ।

অন্যদিকে কুয়াশার কারণে দক্ষিণাঞ্চলীয় লঞ্চগুলো ৫-৬ ঘণ্টা ও ঢাকা-চাঁদপুরের মধ্যে চলাচলকারী লঞ্চগুলো ২-৩ ঘণ্টা  দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। নদীর মাঝে আটকে প্রচ- শীতে শিশু, নারী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন বয়সের শত-শত যাত্রীর সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

৬ ডিসেম্বর শরীয়তপুরের সুরেশ্বর থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ এমভি মানিক-৪ ও ঢাকা থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা লঞ্চ বোগদাদীয়া-১৩ মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকায় পৌঁছলে দুই লঞ্চের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই হুমায়ুন কবির বন্দুকসি নামে এক যুবক নিহত হন। আহত হন আরও কমপক্ষে ১২ জন। মধ্যরাতে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে পৌঁছলে বোগদাদীয়া-১৩ লঞ্চের সঙ্গে এমভি মানিক-৪ লঞ্চের ডেকের মাঝামাঝি বিশাল অংশজুড়ে ধাক্কা লেগে এমভি মানিক-৪ লঞ্চটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

চাঁদপুর লঞ্চঘাটে বোগদাদিয়া-৭ লঞ্চের মাস্টার কলিমুল্লাহ বলেন, প্রতিবছর এই মৌসুমে ঘন কুয়াশার কারণে লঞ্চ চলাচলে সমস্যা হয়। লঞ্চ ছাড়ার পর ঘন কুয়াশা পড়লে ধীর গতিতে চালাতে হবে। যদি বেশি কুয়াশা পড়ে তাহলে নঙ্গর করে রাখতে হবে। বিশেষ করে রাত্রে চলাচলকারী নৌযানগুলোতে রাডার প্রয়োজন হয়। কিন্তু চাঁদপুরের চলাচল উপযোগী লঞ্চগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। আমরা ঘন কুয়াশায় নদীতে পানি কম আছে কিনা তার জন্য ইকু সাউন্ডার মেশিন দেখি। লঞ্চ চলাচলের জন্য উন্নত মানের যন্ত্রপাতি খুবই প্রয়োজন।

তিনি বলেন, প্রতি লঞ্চে কমপক্ষে দুজন মাস্টার প্রয়োজন, কিন্তু অনেক লঞ্চে মাত্র একজন কাজ করেন। অনেক সময় সুকানি দিয়ে লঞ্চ চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক লঞ্চে মাস্টার একটু বিশ্রামের কথা চিন্তা করে সুকানির কাছে লঞ্চ ছেড়ে দেয়। যার কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলে লঞ্চ। আর ঘন কুয়াশার মধ্যে অবশ্যই অভিজ্ঞ মাস্টারের লঞ্চ চালাতে হবে। আর যেসব নিষেধাজ্ঞা আছে- তা পালন করতে হবে।

লঞ্চের সুপারভাইজার আজগর হোসেন জানান, নদীতে কুয়াশা বেশি হলে লঞ্চ চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি ঘটে। এতে সঠিক সময়ে লঞ্চ চলাচল করতে পারে না। যাত্রী সাধারণ চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। ঘন কুয়াশায় চাঁদপুর থেকে সব ধরনের নিয়ম মেনেই ঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যায়।

চাঁদপুর নৌ থানার ওসি আবু তাহের খান বলেন, কুয়াশায় লঞ্চ চলাচলে আমারা সতর্কবার্তা দিয়ে থাকি। ঘন কুয়াশা হলে নদীতে লঞ্চ থামানো কিংবা নিকটস্থল চরে নঙ্গর করে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া ফিটনেস লঞ্চ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি লঞ্চে রাখার বিষয়ে আমরা তদারকি করছি। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঝুঁকি নিয়ে নৌযান চালালে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, চাঁদপুরে কুয়াশার কারণে এখানো পর্যন্ত যাত্রীবাহী কোন লঞ্চ সমস্যা পড়েনি। ঘন কুয়াশা হলে লঞ্চগুলো ৩-৪ ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছার কথা থাকলেও পরে আর নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছতে পারে না। ঘন কুয়াশায় লঞ্চ চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটে। বিআইডব্লিউটিএ পক্ষ থেকে সকল লঞ্চ মালিকদের নিয়ম কানুন মেনে লঞ্চ চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া লঞ্চগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রাখা খবুই জরুরি।

(ঢাকাটাইমস/২৬ডিসেম্বর/এলএ)