তাপসে নতুন সমীকরণ ঢাকা দক্ষিণে

প্রকাশ | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:০৪

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস

আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি চলছে বুধবার থেকে। ঢাকা উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম অনেকটা এগিয়ে থাকলেও দোদুল্যমান দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের ভাগ্য। এই দোলাচলের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ফরম নিলেন তিনি।

তার আগের দিনে পুরান ঢাকার প্রতিবেশী ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস সংগ্রহ করেছেন মনোনয়ন ফরম। আর তাতে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে নির্বাচনী আলোচনায় তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ। রাজধানীর এই সিটির নৌকার হাল কি এবার নতুন হাতে যাচ্ছে?

বুধবার তাপসের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদ কামাল। নেতাকর্মীদের ভাষ্য, দলের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন তাপস। তার দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

দলের সংসদীয় বোর্ডের সভা বসবে কাল ২৮ ডিসেম্বর। সেদিনই জানা যাবে কে হচ্ছেন দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী। দলের শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দলের অনেক নেতাকর্মী তাপসকে মেয়র পদে দেখতে চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পোস্টারসহ নানা মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন। ফলে তাপসকে নিয়ে আলোচনা ছড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।

জানা গেছে, শেখ পরিবারের সন্তানের পরিচয় ছাপিয়েও তাপসের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে তার নির্বাচনী এলাকায়। তরুণ এই রাজনীতিকের জনপ্রিয়তার উত্তাপ গিয়ে লাগছে পাশের এলাকা পুরান ঢাকাসহ দক্ষিণ সিটির অন্যান্য এলাকায়।

কদিন আগে আওয়ামী লীগের উচ্চমহলে আলাপে জানা গিয়েছিল, বিশেষ করে পুরান ঢাকায় গ্রহণযোগ্যতা পাবেন এমন যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে হয়তো সাঈদ খোকনকেই আবার বেছে নেবে দল। এখন তাপস মাঠে নামায় খোকনের মনোনয়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল বলে আশঙ্কা করছেন তার অনুসারীরা।

তাপসের মনোনয়ন সংগ্রহকে বুধবার ইতিবাচক হিসেবে দেখেছিলেন মেয়র সাঈদ খোকন। ওই দিন গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, শক্তিশালী প্রার্থী নির্বাচনে এলে সেটি নির্বাচনের জন্যই ভালো। বিষয়টি তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাঈদ খোকন জানান, তিনি কঠিন সময় পার করছেন। এ সময় অঝর কাঁদেন পুরান ঢাকার সন্তান সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে বর্তমান মেয়র খোকন।

শেখ ফজলে নূর তাপস আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মণির ছোট ছেলে। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ মণির হাতে গড়া সংগঠনের নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন তার বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারসহ আরও যাদের হত্যা করেছিল ঘাতকরা, তাদের মধ্যে শেখ ফজলে নূর তাপসের বাবা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার মা আরজু মণিও ছিলেন। তখন তাপসের বয়স ছিল ৪ বছর আর বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশের বয়স ছিল ছয় বছর।

গতকাল পর্যন্ত দুই দিনে আরও কয়েকজন মনোনয়ন ফরম নিলেও তাপসের ধারে-ভারে ভয় সাঈদ খোকনের অনুসারীদের। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচিত হওয়া তাপস ২০১৪ ও ২০১৮ মিলিয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হন পুরান ঢাকার কিছু অংশসহ ঢাকা-১০ আসনে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাপসের নেতৃত্বে চলছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।

মেয়র পদে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে খোকন-তাপস ছাড়াও ঢাকা-৭ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য হাজি সেলিম মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। তাকে নিয়ে তেমন আলোচনা নেই দলে। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, শারীরিকভাবে অসুস্থতার জন্য হাজি সেলিমের মনোনয়নের সম্ভাবনা কম।

এখন সবাই তাকিয়ে গণভবনের দিকে। রাজধানীর দুই সিটির চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভার পর। কাল শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) গণভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় ওই সভায় চূড়ান্ত হবে সিটির নৌকা কার হাতে তুলে দেওয়া হবে।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর দুই সিটি নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ দিন। ২ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি। ভোটগ্রহণ করা হবে ৩০ জানুয়ারি।

(ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/মোআ)