ঐক্যফ্রন্টের ‘ভোট ডাকাতির’ প্রতিবাদে সাড়া মেলেনি

প্রকাশ | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে এটাকে ‘ভোট ডাকাতির নির্বাচন’ বলে আখ্যা দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে অনেকটা ঘটা করে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিএনপিসহ রাজনৈতিক এই মোর্চা। কিন্তু রবিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে তেমন সাড়া মিলেনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব ছাড়া দলটির উল্লেখযোগ্য তেমন কাউকে কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এমনকি ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনও ছিলেন না কর্মসূচিতে। অতিথিরা যথাসময়ে না আসায় নির্ধারিত সময়ের বেশ পরে অনুষ্ঠান শুরু করতে হয়েছে আয়োজকদের।

তবে সামান্যসংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতেই সমাবেশে বক্তারা রাজপথে থেকে সরকার পতনের হুঙ্কার দিয়েছেন।

সমাবেশ শেষে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বের হন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। প্রেস ক্লাবের মোড়ে গেলেই পুলিশ তাদের বাধা দেয়। সেখানে নেতাকর্মীরা এই সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন।

পরে প্রেস ক্লাবের ভেতরে এসে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আ স ম রব বলেন, ‘আমরা কেমন দেশে বসবাস করছি, সেটা আপনারা সবাই দেখছেন। একটা বিক্ষোভ মিছিল করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ বাধা দিয়েছে। আজকে এ দেশে কেউ স্বাধীন নয়। সবাইকে সরকার বন্দি করে রাখতে চায়। কিন্তু আমরা এটা হতে দেব না। আমরা আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখব। আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর মৎস্য ভবনের সামনে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ করব।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলে আবার তারা স্বাধীনতার কথা বলে। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবার রাজত্ব করতো, আজ ২২০০ পরিবার কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। ধনী-দরিদ্র্যের মধ্যে বড় ব্যবধান তৈরি হয়েছে। সরকারের লোকেরা জনগণের টাকা বিদেশে পাচার করে। এজন্য কি আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম, আমার জনগণের টাকা লুট করবে এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি। আমরা এই লুটেরাদের পতন চাই, পতন করেই ঘরে ফিরবো।’

সমাবেশে আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘চোরেরা চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে, আবার তারা বলে বড় বড় কথা। চোরের মার বড় কথা বলা চলে না। জনগণ আর ভোট চুরিওলাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’

‘আমাদের শহর থেকে গ্রামে সর্বত্র আন্দোলন করতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। চোরদের দেখলেই বলতে হবে তুই চোর। আমরা মাঠে যখন এসেছি চোর সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়বো না।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ডাকসুর ভিপি নুরের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, সেই ছবি ভিডিওগুলো কোথায়। এখন আবার নরের নামে মামলা হয় কেন? এসব ফোরটোয়েন্টি ফাইজলামি বাদ দেন, দেশের মানুষ সব বোঝে। ছাত্র আন্দোলনকে সবাই ভয় করে এই সরকারও করছে, তাই বারবার হামলা করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকজন গেলেই তারা বহিরাগত হবেন? সবার আসার অধিকার আছে, এখানে ছাত্রের বাবা-মা যান, পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা যান।’ তিনি নুরের ওপর দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

মান্না বলেন, ‘আমরা মাঠে যখন নেমেই পড়েছি, মাঠও ছাড়ছি না। গায়ের জোরে ভোট হয়েছে এই সরকারকে মানি না। আমরা কর্মসূচি দেবো ফোরটোয়েন্টি সরকারের বিরুদ্ধে। আমরা বড় কর্মসূচি নিয়ে আসছি, এই সরকারকে চলে যেতেই হবে।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘রাস্তায় থাকলেই সরকারের পরিবর্তন হবে। খালেদা জিয়া অনেক আগেই মুক্তি পেতেন। তার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।’ ঢাকার দুই সিটিতে সরকারের ভোট ডাকাতির আরেকটি রূপ দেখা যাবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি আবু সায়ীদ বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে সর্বত্র দলীয়করণ করা হয়েছে। সব জায়গাতে তারা আধিপত্য বিস্তার করছে, লুটপাট করছে। যারা জনগণের ভোটকে চুরি করেছে।’

(ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/বিইউ/জেবি)