নেতা কিংবা অভিনেতা

অরুণ কুমার বিশ্বাস
 | প্রকাশিত : ০১ জানুয়ারি ২০২০, ২১:৪২

নেতা কিংবা অভিনেতা। ভেবে দেখলাম, এদের দুজনকেই আমার বেশ পছন্দ। শুধু পছন্দই বা বলি কেন, ব্যাপক ভালো লাগে আমার এই দুই শ্রেণির পাবলিককে। বস্তুত, এদের ছাড়া আমার চলেই না। একটু ভেবে দেখুন, অভিনেতা না হলে এখন চলে! সেই কবে ইংরেজ নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়র বলে গেছেন, জীবন নাকি স্রেফ একটা নাট্যমঞ্চ, সেখানে চাই বা না-চাই, প্রত্যেককে কিছু না কিছু একটা ভূমিকায় অভিনয় করতেই হয়। অভিনয় ছাড়া জীবন চলে না। সোজা সাপটা কথা যারা বলে, তাই মূলত ফাঁসে। বউয়ের জালে বা বসের চালে। যারা এই জিনিস জানে না, তারা ধরা খায়, হুমদো হাতির মতোন যেখানে-সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তারপর আর উঠে দাঁড়াবার মতো তাগত পায় না। প্রপাত চিৎপটাং! গেম ফিনিশ!

আবার ধরুন, নেতাদের কথা বলি। নেতারা বেজায় ক্ষমতাধর। তাদের বয়ান ও বয়নে নানা কিসিমের প্রতিশ্রুতি লুকিয়ে থাকে। তারা লোক পটাতে পটু। নেতাদের কথা অগ্রাহ্য করে এমন মানুষ বিশ্বে এখনও পয়দা হয়নি। তারা কেবল সব্যসাচী নয়, সবজান্তা শমসেরও বটে। আবার নেতা মানেই অভিনেতা। অভিনয় না জানলে তার পক্ষে নেতা হওয়া মুশকিল বৈকি। লাজলজ্জা থাকলেও নেতা হওয়া কঠিন। চিবিয়ে চিবিয়ে জ্ঞানের কথা বলবেন, কিন্তু আদতে একটাও মানবেন না, এও নেতাদিগের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বটে। নেতার আবার রকমফের হয়। পাতিনেতা, জাতিনেতা (মানে জাতীয়), হাফনেতা, ফুলনেতা, গুলনেতা (মানে গুলবাজ) হাতানেতা, চামচে নেতা, স্বল্পনেতা, গল্পনেতা, গুরুনেতা, বুড়োনেতা, গরুনেতা- সে মেলা কিসিমের নেতা আজকাল আমাদের চারপাশে পরিদৃশ্যমান হয়। এদের না যায় গেলা, না ফেলা।

সে যাক গে, যা বলছিলাম- নেতা হতে গেলে অভিনয় জানতে হয়। তবে অভিনেতার ক্ষেত্রে নেতা হওয়াটা জরুরি নয়। মঞ্চে উঠে কিঞ্চিত নাচন-কুঁদন বা হা হা, হি হি, মিউ মিউ কান্না করতে পারলে একরকম চলে যায়। ইদানিং বাংলা নাটক মানেই গোপাল ভাঁড়ের নাতিদের বিস্তর ভাঁড়ামো। ইন্ডিয়ান নাটকে কূটনামি ভরপুর, আর আমাদের ‘দেশি নাটক’ দেখে কুতকুতে হাসির ফোয়ারা ছুটবেই।

আবারও বলি, নেতা এবং অভিনেতা, এদেরকে আমার ব্যাপক লাগে। উহারা রঙেঢঙে অসাধারণ, রুচিবৈচিত্র্যে ভরপুর, বাকপটু এবং লোকের মেজাজ ফেরাতে পারঙ্গম। এরা এমনভাবে কথা বলে যেন সকল মুশকিলের আছান তাদের জানা। যেখানে নদীই নেই, সেখানেও হয়তো তারা সাঁকো নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসবেন। এরা স্বপ্ন দেখাতে ওস্তাদ, যেকোনো বিষয়ে তাদের মেলা অপশন্স থাকে। যদু না হলে মধু কাজটা করবে, নয়তো মফিজ কিংবা মোতালেব। কাজ হয়নি তো কী হয়েছে, বিল ঠিকই তুলতে পারেন। একেবারে অনায়াসে। এদের কব্জির জোর নয় শুধু, চাপার জোরও অনতিক্রম্য। মাঝে মাঝে মনে হয় লেখক বা আমলা না হয়ে বরং নেতা কিংবা অভিনেতা হলেই ভাল করতুম। বলতে নেই, আম পাবলিক এদেরকে বেশ ভালোও বাসে। কেউ তাদের খুঁত খুব একটা খোঁজে না। তেঁতুল হেসে বলে, নেতামানুষ, জনগণের শেষ ভরসাস্থল। নে, এবারকার মতোন ছেড়ে দে বাছা! আসছে বার দেখা যাবে।

বেকায়দা বুঝলে নেতারাও পাবলিকের মনমর্জি বুঝে চলে। এরা বড়ই উদার এবং মহান টাইপ ব্যক্তি। যখন-তখন কথা ফিরিয়ে নিয়ে পাবলিকের পা ধরতেও কোনো কসুর করে না। গদগদ স্বরে বলে, আমরা হলুম গিয়ে জনগণের সেবক, তাই আপনাদের হাত, পা কিংবা লেজুড় ধরতে আপত্তি থাকবে কেন! সুতরাং তারা মহান ও জনসেবায় অদ্বিতীয়। বারবার হেরেও তাদের মনোবল কমে না। মনে মনে বলে, একমাঘে শীত যায় না, এবার ভোট দাও নি তো কী হয়েছে, আসছে বছর আবার....! তাই নতুন বছর সবার জন্য শুভ হোক, নেতা এবং অভিনেতা দুজনেই ভালো থাক, এই প্রত্যাশা করি। তারা ভালো থাকলে আমরা মানে আমজনতাও ভালো থাকবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :