চট্টগ্রাম বিআরটিএতে আবারও দালাল চক্র সক্রিয়, গ্রাহকদের ভোগান্তি

এম হাশেম তালুকদার, চট্টগ্রাম
 | প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:০৯

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম কার্যালয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দালাল চক্র। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ গ্রাহক। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিআরটিএ কার্যালয়ে সরেজমিনে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হওয়ার পর বিআরটিএর কাজের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেড়ে গেছে। প্রতিদিন শত শত গাড়ি ফিটনেস হালনাগাদ এবং লাইসেন্স নবায়নের জন্য আনা হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্রটি।

ভুক্তভোগী গ্রাহক জামাল উদ্দিন জানান, নিজে করলে কাজ হয় না। আর দালাল দিয়ে করলে কাজ হয়। কারণ ফাইলের মধ্যে একটি বিশেষ মার্ক থাকে। যা দেখলে বিআরটিএর কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন ফাইলটা কোন দালালের।

সেবা নিতে আসা রাঙ্গুনিয়ার অশোক দাশ জানান, বিআরটিএতে এখন পর্যন্ত চারবার এসেছি। একবারও কাক্সিক্ষত সেবা পাইনি। বিআরটিএতে এলে মানুষ প্রথমে তথ্য কেন্দ্রে যায়। কিন্তু তথ্য কেন্দ্রে গেলে সেখানে বিআরটিএর কাউকে পাওয়া যায় না। সরকারি প্রক্রিয়ায় লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলাম। লাইসেন্সের জন্য দুই দফায় পরীক্ষা দিয়ে উর্ত্তীণ হতে পারিনি। পরে বাধ্য হয়ে দালাল ধরে আবার আবেদন করে মাত্র একবার নামমাত্র পরীক্ষা দিয়ে পাস করি।

তিনি আরও জানান, এজন্য দালালদের দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। সরকার নির্ধারিত ফি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার হলেও দালালকে দুই দফায় আমার নয় হাজার টাকা দিতে হয়েছে। তারপরই চূড়ান্ত লাইসেন্স প্রাপ্তি রশিদ পেয়েছি। অনিয়ম দেখে গাড়ির নাম্বার প্লেটের জন্য নিজ উদ্যোগে আর আবেদন করিনি। দায়িত্ব শো-রুম কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দিয়েছি। দুই হাজার টাকা বেশি খরচ হলেও যথাসময়ে নাম্বার প্লেটও পেয়েছি। যা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গেলে ভোগান্তি ছাড়া সম্ভব হতো না।

সাংবাদিক পরিচয় না দিয়ে সেবা নিতে আসা গ্রাহক জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে সব সহায়তা তিনি করে দেবেন। কিন্তু তার জন্য ১০ হাজার টাকা দিতে হবে।

কাগজপত্র কী কী লাগবে জানতে চাইলে তিনি জানান, শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রের এক কপি ফটোকপি, আর দুই কপি ছবি দিলেই হবে। নাগরিকত্ব সনদ লাগবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সিটি কর্পেরেশন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হলে লাগবে না। আমি ম্যানেজ করে নেব। তবে সিটির বাইরে হলে আপনার স্থানীয় ওয়ার্ড থেকে একটি সনদ দিতে হবে। একই পদ্ধতিতে গাড়ির রেজিস্ট্রেশনও করে দেওয়া যাবে। রেজিস্ট্রেশন করাতে গুনতে হবে আঠারো থেকে বিশ হাজার টাকা। আরও জানান, এখানে সব ধরনের সেবা পাবেন তবে বৈধ নয়, অবৈধভাবে । শুধু টাকা খরচ করতে হবে।

সেবা নিতে এতো টাকা কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, টাকাটা বিভিন্ন পর্যায়ে বিআরটিএর লোকদের দিতে হবে। আমি একা তো আর সব টাকা নিতে পারব না।

এসব অভিযোগ বিষয়ে বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (লাইসেন্স শাখা) বেগম রায়হানা আক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দালাল প্রসঙ্গে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে বলে ফোন কেটে দেন।

সহকারী পরিচালক (রেজিস্ট্রেশন শাখা) তৌহিদুল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযেগে করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিআরটিএ ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান চালান। এসময় তিনি পাঁচ দালালকে কারাদ-সহ জরিমানা করেছিলেন। এতে কিছুদিন দালালের দৌরাত্ম্য কমলেও বর্তমানে আবার সক্রিয় হয়ে পড়েছে দালাল চক্র।

(ঢাকাটাইমস/২জানুয়ারি/পিএল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বন্দর নগরী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :