পেঁয়াজের ঘাটতি নেই, তবুও নিয়ন্ত্রণহীন বাজার

খাইরুল ইসলাম বাসিদ, পাবনা
| আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২০, ২১:০৪ | প্রকাশিত : ০৬ জানুয়ারি ২০২০, ২১:০৩

পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও খারাপ আবহাওয়া, আমদানি সংকটসহ নানা অজুহাতে পাবনায় নিয়ন্ত্রণহীন পেঁয়াজের বাজার। বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসায় দাম কমলেও অসাধু চক্রের কারসাজিতে ক্রমাগত ওঠা-নামায় শুক্র ও শনিবার পেঁয়াজের দাম ডাবল সেঞ্চুরির ঘর ছাড়িয়েছে।

রবিবার ও সোমবার বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে মান ভেদে প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকায়। বাজারের এমন অস্বাভাবিক দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। বিভ্রান্ত হচ্ছেন কৃষক ও বিক্রেতারাও। বাজার নিয়ন্ত্রণে নির্ধারিত দাম বেঁধে দেয়াসহ নজরদারি বাড়ানোর দাবি তাদের।

সদর উপজেলার চরতারাপুর এলাকার কৃষক আবু সালেহ জানান, ‘শৈত্যপ্রবাহ ও বৃষ্টির কারণে শুক্র ও শনিবার আমাদের গ্রামের চাষিরা পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে তুলতে পারেনি। কম উত্তোলন করায় বাজারে সরবরাহ কম হয়েছে। এই সুযোগে অসাধু চক্র গুজব ছড়িয়ে বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মোবাইল ফোনে মুহূর্তেই সে খবর ছড়িয়ে পড়ায় সারাদেশেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মহিদুল হক বলেন, সরকারি নজরদারি না থাকায় বাজারে যে যার মতো দাম নির্ধারণ করছে। গত মঙ্গলবার আমি চার হাজার টাকা মণ দরে দুই বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করেই প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ পেয়েছি। আমার জীবনে কখনো পেঁয়াজের এমন দাম দেখিনি।

সোমবার পাবনার বড় বাজারে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন ক্রেতা, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে। তারা জানান, ভারতের রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে সম্প্রতি পাগলা ঘোড়ার মতো লাগামহীন হওয়া বাজারের ঊর্ধ্বগতি রুখবে মুড়িকাটা পেঁয়াজ, কৃষিবিভাগ এমন আশ^াস দিলেও এখনো নিয়ন্ত্রণহীন পেঁয়াজের বাজার। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হয়েছে উৎপাদন। বাজারেও সরবরাহে ঘাটতি নেই। তাহলে কেন এই পরিস্থিতি, এর সদুত্তর দিতে পারেননি কোনো ব্যবসায়ীই। নাম প্রকাশ করে কোনো বক্তব্যও দিতে রাজি নন তারা।

সুজানগর পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ফেরদৌস আলম ফিরোজ বলেন, সামান্য বৃষ্টির অজুহাতে পেঁয়াজের দাম মণ প্রতি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা করে বেড়ে যাওয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। বৃষ্টিতে পেঁয়াজের এমন কোনো ক্ষতিও হয়নি যে, দাম এমন বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ী চক্র সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। এসব কাজে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজহার আলী সরকার জানান, চলতি বছর পাবনায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের নয় হাজার ৮০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত হয়েছে নয় হাজার ২৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে চার হাজার হেক্টর জমির পেঁয়াজ উত্তোলনের পর এখনো মাঠে রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির পেঁয়াজ। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই হালি পেঁয়াজও বাজারে উঠতে শুরু করবে। সেই পর্যন্ত সংকট হবার কোনো কারণ নেই। গুজব ছড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করা হচ্ছে, এ ব্যপারে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরি।

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, সরবরাহ কম থাকার সুযোগে অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছেন। এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। রবিবার দুপুর থেকেই দাম অনেক কমে এসেছে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন আরো কঠোর হবে।

(ঢাকাটাইমস/৬জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :