অপপ্রচারকারীর বিরুদ্ধে বিচারকের মামলা: আসামি শনাক্ত
বন্ধু, পরিজন, সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে মিথ্যা, কুরুচিপূর্ণ অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক বিচারক। ভোলা জেলার চরফ্যাশন চৌকি আদালতের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইন গত বছর ২৪ নভেম্বর ওই মামলা করেন।
বাদী ভোলার চরফ্যাশন থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই মামলা করলেও মামলাটি তদন্তে পুলিশ অপপ্রচারকারীর পরিচয় জানতে পেরেছে। যাকে গ্রেপ্তার করতে কয়েকদিন ধরে ঢাকায় অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।
তদন্তকারীদের সূত্র অনুযায়ী অপ্রচারকারীর নাম মো. নেছার উদ্দিন মিয়া। তিনি বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ থানার কাদিরাবাদ গ্রামের মৃত আলী আশ্রাফ মিয়ার ছেলে। বর্তমানে রাজধানীর রমনা থানাধীন ৯৩, বড় মগবাজার, ১/৫০৩ ইস্টার্ন রোজে থাকেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ওই মামলায় বাদী শওকত মামলায় উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সে ঢাকার পরিবেশ আদালতে (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই বছর ৭ সেপ্টেম্বর সে প্রথম জানতে পারেন, অজ্ঞাত ব্যক্তি চারটি ই-মেইল নম্বর থেকে তার ও বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে কূরুচিপূর্ণ, মিথ্যা, অশ্লীল বক্তব্য তার বিচার বিভাগের সহকর্মী বিচারক ও পরিচিতজনদের নিকট প্রেরণ করেছেন। যেখানে বাদীকে সে ইয়াবা সেবক ও বিক্রেতা, হেরোইন পাঁচারকারী, ধর্ষণ মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামি, চোর, দুর্নীতিবাজ, ভণ্ড ও প্রতারক বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া সেখানে বিচার বিভাগের ৮০ ভাগ বিচারককেও সে টাউট, বাটপার ও চোর বলেছেন। পরবর্তীতে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি ০১৯৯৮৪৫৬২৩৩ নম্বর থেকে গত ৭ নভেম্বর বাদীর মোবাইল নম্বরে ফোন করেও ওইভাবে অপপ্রচার চালিয়ে বাদীর জীবন অতিষ্ট করে তুলবে বলে হুমকি প্রদান করেন।
মামলার পর ই-মেইল নম্বর ও মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তদন্তে নাম পুলিশ। সেখানে পুলিশ দেখতে পায়, বাদীকে অপপ্রচারকারী যে মোবাইল নম্বর থেকে ফোন দিয়েছিল সেটা সিরাজগঞ্জের কোন এক মহিলার নামে রেজিস্ট্রেশন করা। যিনি ওই মোবাইল নম্বর সম্পর্কে অবগতই নন। এরপর পুলিশ ফোন আসা নম্বরের মোবাইল কললিস্ট ধরে এগিয়ে অপপ্রচারকারীর পরিচয় জানতে পারে।
তদন্তে নাম ও পরিচয় বেড়িয়ে আসার পর দেখা যায়, নেছার উদ্দিন মিয়া ঢাকার নন্দীপাড়া মৌজার একটি জমি নিয়ে ঢাকার আদালতে দেওয়ানি মোকদ্দমা ৪/২০১৮ দায়ের করেন। ওই মামলা ঢাকার পরিবেশ আদালতে (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) বিচারক হিসাবে বাদী কর্মরত থাকাকালে বিচার শেষে গত বছর ১১ এপ্রিল রায় প্রদান করেন। রায়ে নেছার উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলাটি খারিজ হয়। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বাদীর বিরুদ্ধে ওই অপপ্রচার শুরু করেন।
সূত্র জানায়, অপপ্রচারকারী নেছার উদ্দিন মিয়া ডেপুটি সেক্রেটারি ছিলেন। কোনো কারণে তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। বর্তমানে তিনি হোসাফ গ্রুপে কর্মরত আছেন।
এ সম্পর্কে ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চরফ্যাশন থানার উপ-পরিদর্শক নাছির উদ্দিন জানান, নেছার উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের জন্য তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। বাসা এবং অফিসে অভিযান চালিয়েও এখনো তাকে ধরা যায়নি। অভিযান অব্যাহত আছে।
এ সম্পর্কে বিচারক শওকত হোসাইন বলেন, আমি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেঝি। আশা করি রাষ্ট্র অপপ্রচারকারীকে বিচারের মুখোমুখি করবে।
ঢাকাটাইমস/০৬জানুয়ারি/ইএস