বেনাপোল-খুলনা রুটে চোরাকারবারিদের নিরাপদ বাহন কমিউটার ট্রেন

মহসিন মিলন, বেনাপোল (যশোর)
 | প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:৪৩

বেনাপোল-যশোর-খুলনা রুটে চলাচলকারী কমিউটার ট্রেনটি চোরাকারবারিদের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে- এসব চোরাকারবারিকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে ট্রেনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জিআরপি পুলিশ।

কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। তবে ট্রেনের কর্তৃপক্ষ জিআরপি পুলিশ বরাবরের মতো চোরাকারবারিদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

এই রুট দিয়ে নিরাপদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে ভারত থেকে চোরাইপথে আসা হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা, কসমেটিক, ইমিটেশন গহনা, মসলাজাত দ্রব্য, শিশুখাদ্য, সার, কীটনাশক, বাজি, বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ বিভিন্ন অস্ত্র। চোরাকারবারিদের এসব পণ্য আসার প্রধান স্থানগুলো হলো বেনাপোলের দৌলতপুর, পুটখালী, গোগা, ভুলোট, কায়বা, রুদ্রপুর, ধান্যখোলা, ঘিবা, ও কাশিপুর সীমান্ত। চোরাচালান প্রতিহত করতে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ। তবুও চলছে অবাধে এসব অবৈধ ব্যবসা।

বেনাপোল থেকে খুলনা পর্যন্ত দিনে একবার যাতায়াত করত কমিউটার ট্রেনটি। তবে যাত্রীদের দাবির ফলে বছরখানেক আগে একই ট্রেন প্রথমে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে বেনাপোল থেকে যাত্রী যশোরে নামিয়ে বেনাপোলে ফিরে আসত। একই ট্রেন বেনাপোল থেকে দুপুর ২টায় যাত্রী নিয়ে খুলনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। পরে আবার যাত্রীদের সুবিধার্থে ট্রেনটি সকাল ৯টায় বেনাপোল থেকে খুলনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। একই ট্রেন আবার বেনাপোল থেকে বিকাল ৫টায় খুলনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। তবে সেই ট্রেনটিতে যাত্রীদের কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি এখনো। পক্ষান্তরে চোরাকারবারিদের পাচারকারী বাহন হিসেবে বহুলাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ট্রেনটিতে সাধারণ যাত্রী উঠলে চোরাকারবারিদের দ্বারা বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। ট্রেনের শৌচাগার থেকে সিটের নিচে, ওপরে মালামাল থাকে। এমনকি ট্রেনের সিলিং কেটেও ভেতরে মালামাল লুকিয়ে রাখে চোরাকারবারিরা।

ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীরা জানান, চোরাকারবারিদের সঙ্গে ট্রেনের চালকের আঁতাত থাকায় চালক স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পরে যেখানে মালামাল থাকে সেখানে আস্তে চালায়। অনেক সময় চোরাচালানিরা ট্রেনের চেইন টেনে ধরে ট্রেন থামায়। আর এ সময়ের মধ্যে অবৈধ মালামাল ট্রেনের দরজা-জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে ভেতরে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনাপোল কমিউটারের এক ট্রেনচালক বলেন, ‘আমরা ট্রেন রাস্তায় থামাই না। চোরাকারবারিদের এক দল স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠে। এর পর যেখানে-যেখানে তাদের মালামাল থাকে সেখানে গিয়ে ট্রেনের হোর্সপাইপ খুলে দিয়ে হাওয়া ছেড়ে দেয়। ফলে সেখানে ট্রেন দাঁড়িয়ে গেলে চোরকারবারিরা দ্রুত মালামাল ট্রেনে উঠিয়ে নেয়। অনেক সময় চোরকারবারিরা ট্রেন দাঁড়ানোর জন্য পাথরও নিক্ষেপ করে।

ট্রেনের মধ্যে রেলপুলিশ কী দায়িত্ব পালন করে জানতে চাইলে এই ট্রেনচালক বলেন, ‘ট্রেনের রেলপুলিশ বগির মধ্যে কোন চোরাকারবারি কত বস্তা মালামাল নিয়ে উঠেছে তার টাকা তোলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।’

বেনাপোল জিআরপি পুলিশের কর্মকর্তা কামাল হোসেনের কাছে ট্রেনে চোরাকারবারিদের নিকট থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। বলেন, ‘বেনাপোল-খুলনা কমিউটার ট্রেন নিয়ে অনেক লেখালিখি হয়েছে। তবে চোরাচালানি বন্ধ হয়নি। আপনি চেষ্টা করে দেখেন চোরাচালানি বন্ধ করা যায় কিনা।’

বেনাপোল শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা তৃপ্তি রায় জানান, আমরা খুলনাগামী ট্রেন থেকে ১০ বস্তা আতশবাজি জব্দ করেছি। তবে ইনফরমেশন পেলে আমরা ট্রেন তল্লশি করে থাকি।

বেনাপোল বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল ওহাব জানান, আমরা বেনাপোল থেকে ট্রেন ছাড়ার আগ পর্যন্ত স্টেশনে ডিউটি করে থাকি। ইতোমধ্যে ট্রেন থেকে বহু চোরাচালানি পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এমনকি গত মাসে ট্রেন থেকে ২৭৫ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৯জানুয়ারি/কেএম/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :