আলোচিত কাজের স্বীকৃতি মেলেনি অতিরিক্ত এসপি আরিফের

প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২০, ২০:৪৬

সিরাজুম সালেকীন

সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য এবারের পুলিশ সপ্তাহে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন পুলিশের ১১৮ জন কর্মকর্তা। এই তালিকায় নেই পুলিশ কর্মকর্তা আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ হোসেনের নাম, যিনি অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারের এক নারী চালকের ছিনতাই হওয়া মোটরবাইক উদ্ধারের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচিত হন। তিনি পদক না পাওয়ায় বিস্মিত পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্য।

গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের জন্য বিপিএম ও পিপিএম পদকপ্রাপ্তদের গত রবিবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদক পরিয়ে দেন।

এ ছাড়া পুলিশের ৫৯৫ জন সদস্য এ বছর ‘আইজিপিস এক্সেমপ্ল্যারি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ' পান। ছয়টি বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুলিশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। কর্মক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন, বাহিনীর মর্যাদা বেড়েছে এমন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার দেয়া হয়।

কিন্তু কোনো ক্যাটাগরিতেই নাম নেই পাঠাও অ্যাপের নারী চালকের ছিনতাই হওয়া মোটরবাইক উদ্ধার করা তৎকালীন তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ হোসেনের। বর্তমানে তিনি রংপুর সার্কেলের অ্যাডিশনাল এসপি হিসেবে কর্মরত।

ছিনতাই হওয়া মোটরবাইকটি ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে উদ্ধার করে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন আরিফ হোসেন। পুলিশের সফলতা নিয়ে তখন বিদেশি গণমাধ্যম বিবিসি, ডয়েচে ভেল ছাড়াও দেশের প্রতিটি গণমাধ্যম ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করে।

গত বছরের ১৫ জানুয়ারি ছিনতাই হয় রাইডশেয়ারের নারী বাইকচালক শাহনাজ আক্তারের মোটরবাইক। শাহনাজের বাইকে চড়ে তার সঙ্গে পরিচিত হন জুবাইদুল ইসলাম জনি। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে বাইক ভাড়া খাটলে প্রতিদিন ৫০০ টাকা দেওয়া হবে বলে জানান জনি। এই আশ্বাস পেয়ে ঘটনার দিন জনিকে কল দেন শাহনাজ। রাজধানীর খামারবাড়িতে দেখা করেন তারা। পরে বিমানবন্দর এলাকায় একজনের সঙ্গে পরিচিত হতে যান তারা। সেখান থেকে তিনজন মিলে আবার আসেন ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে। সেখানে স্কুটি চালানো শেখার কথা বলে বাইক চালিয়ে চলে যান জনি।

বাইক নিয়ে জনি পালিয়েছেন বুঝতে পেরে শাহনাজ ছুটে যান শেরেবাংলা নগর থানায়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমে চলে আসে এই সংবাদ। পুলিশও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়।

মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে জনি ফতুল্লার সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থান করছেন। পরে তেজগাঁও জোনের সহকারী উপ-কমিশনার আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ হোসেন ফতুল্লায় গিয়ে রাতভর অভিযান চালিয়ে জনিকে গ্রেপ্তার করেন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী একটি গ্যারেজ থেকে বাইকটি উদ্ধার করা হয়।

১৬ জানুয়ারি শাহনাজের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাইকটি তুলে দেন তেজগাঁও বিভাগের তৎকালীন উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার।

এ ব্যাপারে জানতে বর্তমানে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি যত দূর জানি আরিফ তখন পুরস্কারের জন্য আবেদন করেছিল। মনে করেছিলাম সে পাবে। কিন্তু কেন পেল না জানি না।’

পুলিশের সাবেক আইজিপি নুর মোহাম্মদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যারা ভালো কাজ করে এবং দক্ষ তারা পুরস্কার পেয়ে থাকে। পুরস্কারের ক্ষেত্রে পাঁচটি রিকয়ারমেন্ট দেখা হয়। শাহনাজের বাইক উদ্ধারের চেয়ে হয়তো অন্যদের ভালো কাজ হয়েছে, তাই তিনি (আরিফ) পাননি। বিচারক কমিটিতে যারা ছিলেন বিষয়টি তারা ভালো বলতে পারবেন।’

পুলিশ কর্মকর্তার এমন অবদানের স্বীকৃতি না পাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশেও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে ডিএমপির কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ভালো কাজের পুরস্কার পেলে সবার মধ্যে আরও ভালো করার উৎসাহ বাড়ে। পুলিশের প্রতি মানুষের একটা বিরূপ ধারণা সব সময় থাকে। সেখানে ভালো অবদানের স্বীকৃতি নিজের বাহিনীতে না পেলে হতাশ হওয়াই স্বাভাবিক।

তবে পুরস্কার পাননি বলে আক্ষেপ নেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফ হোসেনের। তিনি বলেন, ‘যারা পুরস্কার পেয়েছেন তারা হয়তো আমার চেয়ে বেশি ভালো কাজ করেছেন। আমি পুরস্কারের জন্য কাজ করি না; আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে করতে চেষ্টা করি। ভালো কাজ করে মানুষের সেবা করতে চাই।’

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্তব্য জানতে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মীর সোহেল রানাকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

(ঢাকাটাইমস/০৯ জানুয়ারি/এসএস/ মোআ)