চট্টগ্রাম রেলওয়ের ‘কোটিপতি’ খালাসি শফিকুল

এম হাশেম তালুকদার, চট্টগ্রাম
| আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২০, ১০:২২ | প্রকাশিত : ১০ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:৩০

রেলের খালাসি হিসেবে চাকরি নিয়ে ১৫ বছরে কোটিপতি বনে গেছেন শফিকুল ইসলাম। দুর্নীতি, অনিয়ম, জবরদখল ও নিয়োগ বাণিজ্যই তার নেশা ও পেশা। আর এসব অপকর্ম করেই এখন তার মাসের আয় লাখ লাখ টাকা। অষ্টম শ্রেণির জাল সার্টিফিকেট দিয়েই তিনি রেলের চাকরিতে ঢোকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শফিকুল ইসলাম ২০০৪ সালে রেলওয়ের পাহাড়তলী কারখানায় ওয়ার্কসপ খালাসি হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিতে ঢোকার সময় তিনি অসুদোপায় অবলম্বন করেন। জমা দেন ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল রোড় উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার নকল সার্টিফিকেট।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল খাইয়ুম বাবুলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম ২০০৩ সালে নান্দাইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। আর যে ৮ম শ্রেণির পাসের সনদের কথা বলা হচ্ছে সেটি স্কুল থেকে দেয়া হয়নি।

এই শিক্ষকের ভাষ্য, সিল জালিয়াতি করে কেউ সার্টিফিকেট নকল করে থাকলে সেটি আইনগতভাবে অন্যায় করেছেন। এই বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

সরজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের আমবাগানের ভাঙার পুলে শফিকুল খালাসি হিসেবে একটি বাসা বরাদ্দ পান। তবে তিনি বাসার আশপাশের রেলওয়ের প্রায় ১০ একর জায়গা জবরদখল করে নেন। এতেই ক্ষান্ত নেননি তিনি। দখলকৃত জায়গা টিন দিয়ে ঘেরাও করে প্রায় ৪০-৪২টি ঘর তৈরি করেন। এসব ঘর ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ টাকার ওপরে ভাড়া আদায় করে আসছেন। এসব ঘরে অবৈধভাবে গ্যাস লাইন ও বিদ্যুৎ লাইন ও পানির লাইন ও সংযোগ নেয়া হয়েছে।

রেলওয়ে চট্টগ্রাম সূত্রে জানা যায়, এক সময় টিকিট কালোবাজারি করতে গিয়ে ১৪৩টি টিকিটসহ গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে পাঁচ মাস জেলহাজতে ছিলেন। পরে জামিনে বেরিয়ে এসে ফের অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। জামিনে মুক্তির পর চাকরি ফিরে পেতে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় চাকরিতেও পুনর্বহাল হতে পারেননি শফিকুল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাহাড়তলী রেল কারখানার ডব্লিউএমসির দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলামের বাড়ি বৃহত্তর ময়মনসিংহে হওয়াতে শফিকুল তার আনুকূল্য পেয়ে আসছে। এমনকি শফিকুলের সঙ্গে যোগসাজশে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে টেন্ডারসহ নানা রকম দালালি করে ডব্লিউ এম সিও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

শফিকুলের অপকর্মের কারণে চট্টগ্রাম রেলওয়ের সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যেও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্তপূর্বক শফিকুলসহ চক্রকে শাস্তির আওতায় এনে পাহাড়তলী রেল কারখানাকে কলংকমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

রেলের ভূমি দখল করে ভাড়াবাণিজ্যের বিষয়ে জানতে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূসম্পদ কর্মকর্তা (ডিও, পাহাড়তলী) মাহাবুবুল আলম জানান, খালাসি তার অধীনে নয়। আর ভূমি দখল করে ভাড়া বাণিজ্যের বিষয়েও তিনি অবগত নন।

চট্টগ্রাম রেলওয়ের সিবিএ নেতা মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘শফিকুল ইসলাম একসময় আমাদের সঙ্গে ছিল। বর্তমানে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য, রেলের জায়গা দখলসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।’

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্ব (সিআরবি) জিএম নাজিম উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করেও তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

আর শফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। রাইসুল নামের তার সহযোগীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/১১জানুয়ারি/ব্যুরো/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বন্দর নগরী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা