আলু ও বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় জয়পুরহাটের কৃষকরা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৩২ | প্রকাশিত : ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৩১

বিরূপ আবহাওয়ায় আলু ক্ষেত ও বোরো বীজতলা নিয়ে চরম শঙ্কায় দিন কাটছে জয়পুরহাটের কৃষকদের। বার বার কীটনাশক ছিটিয়েও শঙ্কা কাটছে না তাদের। ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগের ভাষ্য, আবহাওয়া ভালো হলে ফসল নিয়ে শঙ্কা কেটে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৭ হাজার ৯১৭ হেক্টর। শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় আলু চাষ হচ্ছে ৩৮ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে। আর বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বীজ বপন করা হয়েছে তিন হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু টানা শৈত্যপ্রবাহ, কুয়াশা ও মাঝে মধ্যে বৃষ্টির কারণে বীজতলা ও আলুক্ষেত নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকদের। কুয়াশার পাশাপাশি বৃষ্টিতে আলু গাছে নাভিধসা রোগের আক্রমণ হতে পারে এমন আশঙ্কায় বার বার ছত্রাকনাশক স্প্রে করছেন কৃষকরা।

তাদের দাবি, ক্ষেতে রোগ ধরলে সম্পূর্ণ আলু গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য সার্বক্ষণিক পরিচর্যা ও বার বার ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। দিনে স্প্রে করার পর কুয়াশা এবং বৃষ্টির কারণে গাছ পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। ফলে পরের দিন আবারও স্প্রে করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে কেউ কেউ তিন থেকে চারবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করেছেন জমিতে। দিনের বেলায় মাঠের চিত্র দেখলে বোঝা যায়, আলু ক্ষেত নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। মাঠের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই আলু ক্ষেতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করার দৃশ্য।

আবার ঘন কুয়াশার কারণে জেলার অধিকাংশ বীজতলা হলুদ বর্ণ হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে অনেক কৃষক বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকেও দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। এরই মধ্যে কেউ কেউ আগের জমিতেই নতুন করে বীজ বপন করে বীজতলা ভালো করার চেষ্টা করছেন।

জয়পুরহাট পৌরসভার পাঁচুরচক মহল্লার কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, দুই হাজার টাকা খরচ করে বীজ বপন করার পর ঘন কুয়াশায় তার বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি নতুন করে আবারও বীজ বপন করে শীত থেকে বীজতলা রক্ষার চেষ্টা করছেন।

সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন জানান, ‘বীজতলা নষ্ট হওয়ায় হয়তো দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু অর্থের চেয়ে সময় ক্ষতি হচ্ছে বেশি। বীজতলা নষ্ট হওয়ার কারণে সময়মতো বোরো ধান রোপণ করা যাবে না। এতে তাদের বেশি ক্ষতি হবে।

একই এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জমি প্রস্তুত করেও আবহাওয়ার কারণে হীরা সুগন্ধি ধানের বীজ বপন করতে সাহস পাচ্ছি না’।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার সরদার পাড়া গ্রামের কৃষক ওয়াদুদ সরদার বলেন, ‘লাভের আশায় বিঘাপ্রতি ১৫ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৩৫ দিন আগে পাঁচ বিঘা জমিতে অ্যাস্টেরিক জাতের আলু রোপণ করেছেন। আলু গাছও খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ থেকে বৈরি আবহাওয়ার কারণে আলুক্ষেত নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। কয়েকদিন থেকে সূর্যের দেখা নেই। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা আর মাঝে মধ্যে বৃষ্টির হানা। এ পর্যন্ত দুই হাজার টাকা খরচ করে ক্ষেতে দুইবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করেছি। জানিনা ভাগ্যে কী আছে।

একই গ্রামের কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, ‘ক্ষেতে এখনও রোগ দেখা দেয়নি। তবে যদি রোগ ধরে তাহলে ফসল বাঁচানোর সুযোগ থাকে না। এ ধরনের আবহাওয়ায় আলুক্ষেতে সাধারণত নাভিধসা রোগ হয়। তিনি বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে প্যাকরি ও অ্যাস্টেরিক জাতের আলু রোপণ করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বাবলু কুমার সুত্রধর বলেন, শীতের কারণে বীজতলা ও আলুক্ষেতের ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকরা শঙ্কিত হলেও এখন পর্যন্ত ফসল ভালো আছে। বৈরি এই আবহাওয়ার মধ্যে কৃষকদের করণীয় বিষয়ে লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি নানা পরামর্শও দেয়া হয়েছে। আশা করছি আবহাওয়ার বৈরি ভাব কেটে গেলে জেলায় এবার বোরো ও আলুর বাম্পার ফলন হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/কেএম/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :