নিরুত্তাপ ভোটে বাদলের আসনে বিজয়ী আ.লীগের মোছলেম

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ২০:৪০ | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ২১:১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
মোছলেম উদ্দিন (ফাইল ছবি)

জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন অনেকটা নিরুত্তাপভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। এই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ানকে ৬৯ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন।

নৌকা প্রতীক নিয়ে মোছলেম উদ্দিন পেয়েছেন ৮৭ হাজার ২৪৬ ভোট। আর আর ধানের শীষ নিয়ে আবু সুফিয়ান পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৩৫ ভোট।

সোমবার রাতে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান। এ সময় তিনি জানান,  ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।

দিনভর নির্বাচনে অধিকাংশ এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর অনুসারীদের সরব উপস্থিতি থাকলেও মাঠে দাঁড়াতেই পারেননি বিএনপির প্রার্থীর অনুসারীরা।

উপনির্বাচনে ১৭০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন চার লাখ ৭৪ হাজার ৪৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪১ হাজার ১৯৮ জন। মহিলা ভোটার দুই লাখ ৩৩ হাজার ২৮৭ জন। ৫৮টি কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল ১৮টি। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যের সমন্বয়ে ১৪টি মোবাইল ফোর্স, ছয়টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাবের ছয়টি টহল দল এবং পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ছিল নির্বাচনে।  এর বাইরেও ১৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও দুজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনের মাঠে ছিলেন।

ভোটগ্রহণের সময় চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে মোছলেমের অনুসারীদের একচেটিয়া বিচরণ। সংসদীয় এলাকার নেতাকর্মী তো ছিলই, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও আসা নেতাকর্মীদের মোছলেমের পক্ষে সরব দেখা গেছে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের সামনে। বিএনপির নেতাকর্মীদের অভাবে ভোটের চিত্রও দেখা গেছে অনেকটা একতরফা।

এদিকে চান্দগাঁও এনএমসি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও ধানের শীষের সমর্থক এবং পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই কেন্দ্রে সরব দেখা যায়, উভয় প্রার্থীর অনুসারীদের। যাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। নগরীর বহদ্দারহাটে এখলাসুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও সকাল থেকে ধানের শীষের সমর্থকদের উপস্থিতি দেখা গেছে। ভোট শুরুর আগে এর অদূরে কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

কর্ণফুলী নদীর পাড়ের এই আসনটির একাংশ গ্রাম, আরেক অংশ শহর। নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর মাধ্যমে নগর ও গ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী চট্টগ্রাম-৮ আসন বোয়ালখালী উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।

এদিকে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ানের অভিযোগ বেশিরভাগ কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভয়ভীতি দেখিয়ে ও হুমকি দিয়ে ধানের শীষের সমর্থকদের কেন্দ্রে আসতে দেওয়া হয়নি। দুপুরের দিকে সুফিয়ান পুনঃনির্বাচনের দাবি করেন। নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দেন তিনি।

ভোটগ্রহণের শুরুর দিকে আবু সুফিয়ান যেমন কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়েছেন, সঙ্গে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ছিল। কিন্তু দুপুরে প্রথম দফায় সাংবাদিকদের কাছে এসে আবু সুফিয়ান পুনঃনির্বাচনের দাবি তোলার পর পরাজয় নিশ্চিতের আশঙ্কায় ভোটকেন্দ্র ছেড়ে যান তার নেতাকর্মীরা।

আবু সুফিয়ানের দাবি, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনের অধিকাংশ কেন্দ্রে বহিরাগত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে কেন্দ্র দখলে নিয়েছে, বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। গোপন বুথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা জোরপূর্বক ভোট দিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছি ভোট স্থগিত করে, পুনরায় নির্বাচন দিতে।’

তবে বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেছেন, ‘উনারা সকালে কয়েকটি কেন্দ্রের বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন সেগুলোর জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে। যখন যেখানে তারা বলেছেন সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজিবি পাঠিয়েছি। অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্ট বের করে দেয়ার বিষয়টি উনারা যেভাবে বলছেন সেভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।’

আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে জেতার জন্য আসেনি। তারা এসেছিল আন্দোলনের ইস্যু খুঁজতে। একের পর এক অভিযোগ তুলেছে, যেগুলো অসত্য। নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/বিইউ/জেবি)