বরফের মধ্যে তিন সপ্তাহ টিকে থাকার গল্প

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১১:২৩ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১১:৫৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

আলাস্কায় বরফে ঢাকা জঙ্গলের মধ্যে এক অগ্নিকান্ডের পর সামান্য খাবার সম্বল করে তিন সপ্তাহ কাটানোর পর উদ্ধার পেয়েছেন টাইসন স্টিল নামের এক ব্যক্তি।

তিনি থাকতেন আলাস্কার স্কোয়েৎনা শহর থেকেও ২০ মাইল দূরে প্রত্যন্ত এক জঙ্গলের মধ্যে। চারদিকে শুধু বনভূমি আর বরফ। কিন্তু এক রাতে আকস্মিক অগ্নিকান্ডে তার কেবিন ঘরটি পুড়ে যায়।

আগুনে পুড়ে যায় তার প্রায় সব খাবার, বন্দুকের গুলি এবং জ্বালানি তেল। টাইসন নিজে প্রাণে রক্ষা পেলেও পুড়ে মারা যায় তার একমাত্র সঙ্গী পোষা কুকুরটি।

ত্রিপলের তৈরি কেবিনটি তিনি কিনেছিলেন ভিয়েতনামফেরত এক সাবেক সৈন্যের কাছ থেকে। ঠিক কবে সেই আগুন লেগেছিল তা এখন আর মনে করতে পারছেন না স্টিল।

তিনি বলেন, ‘সম্ভবত ডিসেম্বরের ১৭ বা ১৮ তারিখ হবে, আমার কাঠের গুঁড়ির চুলোতে আমি একটা কার্ডবোর্ড ঢুকিয়েছিলাম তাড়াহুড়ো করে, তাতে আগুনের ফুলকি সৃষ্টি হয় এবং সেগুলো গিয়ে পড়ছিলো কেবিনের ছাদে। ভোররাতে আমার গায়ে গলন্ত প্লাস্টিকের টুকরো এসে পড়তে লাগলো, আর আমি জেগে উঠলাম। শুধু অন্তর্বাস, জাম্পার আর বুট পরা অবস্থায় আমি ছুটে বেরিয়ে এলাম।’

বাইরে বেরিয়ে স্টিল দেখলেন পুরো কেবিনটাতেই আগুন লেগে গেছে। কেবিনের ভেতরটা ধোঁয়ায় ভরে গেছে। তিনি আবার ছুটে ভেতরে ঢুকলেন, তার কম্বল, রাইফেল আর পোষা কুকুরটিকে বের করে আনার জন্য।

কম্বল-রাইফেল পাওয়া গেল, কিন্তু কুকুরটাকে দেখা গেল না। তিনি প্রথমে ভাবলেন হয়ত কুকুরটা নিজেই বেরিয়ে যেতে পেরেছে। তবে কয়েক মুহুর্ত পরই তিনি বুঝলেন, কুকুরটা আসলে জ্বলন্ত কেবিনটার ভেতরেই আটকা পড়েছে, ভেতর থেকে তার ঘেউ ঘেউ ডাকও শোনা যাচ্ছে।

তিনি জানান, ‘আমি যেন উন্মত্ত হয়ে গেলাম, সেই শোকের অনুভূতি আমি বর্ণনা করতে পারব না। আমি এমনভাবে চিৎকার করতে লাগলাম যেন আমার ফুসফুসটা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসছে। কিন্তু কুকুরটাকে বের করে আনার আর কোন উপায় ছিল না।’

টাইসন স্টিল জানান, কেবিনের ভেতরে রাখা ছিল হিমায়িত খাবারের ক্যান, আর পাশেই ছিল তার রাইফেলের শত শত রাউন্ড গুলি, আর তরল জ্বালানি প্রোপেন। আগুনে সেগুলো প্রচন্ড শব্দ করে বিস্ফোরিত হতে লাগলো। অবস্থাটা দাঁড়াল একটা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো।

তিনি একটা কোদাল দিয়ে চারপাশের বরফ তুলে এনে কেবিনের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু কিছুতেই কেবিনটা রক্ষা করা গেল না।

এর পর তিনি যে খাবারের ক্যানগুলো আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছে সেগুলো কুড়াতে শুরু করলেন। দেখা গেল অনেক ক্যানই আগুনের তাপে খুলে গেছে, ভেতরের খাবার পোড়া প্লাস্টিকের মতো হয়ে গেছে। এ অবস্থায় স্টিল বরফের মধ্যে একটা গুহা বানিয়ে তার মধ্যে দুই রাত কাটালেন।

তার পর পোড়া ত্রিপলের টুকরো জোড়া দিয়ে কাঠের চুলার চারপাশ ঘিরে একটা তাঁবুর মতো বানালেন। সেখানে তাপমাত্রা তখন হিমাংকের অনেক নিচে, প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে গাছের শুকনো ছাল এনে চুলাটা জ্বালালেন। তার সাথে থাকা একটা মোমবাতিও কাজে লেগে গেল।

এর পর তিনি পরিকল্পনা করলেন কিভাবে উদ্ধারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। বরফের ওপর কাঠি দিয়ে বড় করে এস ও এস লিখলেন টাইসন স্টিল, ছড়িয়ে দিলেন পোড়া কেবিনের ছাই- যাতে সাদা বরফের ওপর লেখাটা স্পষ্ট দেখা যায়।

আর একটা পথের চিহ্ন আঁকলেন- যাতে কোন উদ্ধারকারী বিমান বা হেলিকপ্টার এলে নিকটবর্তী একটি পানি জমে-যাওয়া লেকের ওপর সেটা নামতে পারে। এমন ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি জানান, ‘আমি ঠিক এসবের কোন প্রশিক্ষণ পাইনি, তবে নানা জায়গা বেড়াতে গিয়েছি, আর ইউটিউবে অনেক ভিডিও দেখেছি’।

অন্যদিকে কিছুদিন পার হয়ে যাবার পরও তার কোন খবর না পেয়ে তার আত্মীয়স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। তারা আলাস্কার কর্তৃপক্ষকে জানালেন ব্যাপারটা, অনুরোধ করলেন জঙ্গলে অনুসন্ধান চালাতে। তখনই শুরু হলো হেলিকপ্টার নিয়ে পুলিশের উদ্ধার তৎপরতা।

টাইসন স্টিলকে খুঁজে পাওয়া গেল প্রায় তিন সপ্তাহ পর। তিনি এখন ইউটাহ অঙ্গরাজ্যে তার পরিবারের সাথে আছেন।

ঢাকা টাইমস/১৪জানুয়ারি/একে