কিডনির ব্যথা নাকি মেরুদণ্ডের ব্যথা?

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:৫০ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:৫৩

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

আজকাল কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছ। কোমরের ব্যথা হলেই ভয় হয় এটা কিডনির জন্য হচ্ছে না তো?  অনেক রোগী আছেন যারা ভাবেন কিডনির কারনণই তার কোমরে ব্যথা হচ্ছে। আসলে কিছু উপসর্গ জানা থাকলে নিজেই বুঝতে পারবেন, ব্যথাটা কিডনি সমস্যাজনিত নাকি মেরুদণ্ডের সমস্যার কারণে হচ্ছে!

কিডনিতে কী ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে?

কিডনিতে ইনফেকশন, কিডনিতে পাথর, কিডনিতে টিউমার, গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস, ইত্যাদি। এ ছাড়াও আরো অনেক সমস্যা হতে পারে।

কোমরে কী ধরনের সমস্যা হলে ব্যথা হয়?

সায়াটিকা হলে, মেরুদণ্ডের  হাড় ভাঙা থাকলে, মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় থাকলে, মেরুদণ্ডের ডিস্ক এ সমস্যা থাকলে, কোমরের মাংসপেশিতে স্পাসম থাকলে, মেরুদণ্ডে ক্যানসার থাকলে, ইত্যাদি কারণে হতে পারে। এখানে প্রধান কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো।

কিডনিতে সমস্যা হলে যে লক্ষণ দেখা দিবে

কিডনির ব্যথায় সাধারণত মেরুদণ্ড থেকে একটু দূরে ডান বা বামপাশে হয় । যা পিছনের পাজরের নিচের অংশে অনুভূত হয় এবং এই ব্যথা নাড়াচাড়া করে কোমরের দুই পাশেও যেতে পারে এবং পিছনের নরম জায়গায় গ্লুটিয়ায়ে অনুভূত হতে পারে।

রোগী নিজেকে অসুস্থ এবং দুর্বল বলে মনে করবে, মাঝে মাঝে বমি বমি ভাব হবে।

শরীরে জ্বর জ্বর ভাব অনুভব হবে এবং তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে।

প্রসাব গোলাটে হবে এবং গন্ধ বের হবে।

কোমরের ব্যথার লক্ষণ কী কী?

কোমরের ব্যথা সাধারণত মাংশপেশি, লিগামেন্ট, ইন্টারভার্টিবেরাল ডিস্ক ও মেরুদন্ডের হাড়ের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে।

কোমরের ব্যথা হলে এটা পিছনের কোমরে, বাটুকে, হিপ জয়েন্টে, হাঁটুতে, গোড়ালি, পায়ের পাতা ও পায়ের আঙুল পর্যন্ত ব্যথা চলে যেতে পারে।

শরীরের অবস্থান পরিবর্তন করলে (যেমন: উঠাবসা, সামনের দিকে ঝুঁকা, পিছনের দিকে ঝুঁকা বা শুয়ে থাকলে) ব্যথা কম বা বেশি হবে।

কোমরের ব্যথায় সাধারণত জ্বর আসে না কিন্তু কিছু সমস্যা থাকলে হতে পারে যেমন: স্পাইনাল টিবি, স্পাইনাল টিউমার ইত্যাদি।

অনেক সময় কোমর ব্যথা ওষুধ সেবনে ভালো হয় কিন্তু বন্ধ করলে ব্যথা আবার আগের অবস্থায় চলে আসে ।

কীভাবে বুঝবেন এটা কোমরের ব্যথা না কিডনির জন্য ব্যথা ?

কিডনির ব্যথা কোমরে, পাজরে, হিপ জয়েন্টে, উপরের পেটে বা উরুর ভিতরের দিকে হবে। কখনই পায়ের দিকে যাবে না। কিন্তু মেরুদণ্ডের ব্যথা কোমরে, পাছায়, হাঁটু বা তার নিচে পায়ের আঙুল পর্যন্ত চলে যেতে পারে।

কিডনি ব্যথায় বমি বমি ভাব, বমি হওয়া বা জ্বর হবে। কিন্তু কোমর ব্যথায় এগুলো হবে না (স্পাইনাল টিবি, টিউমার বা ক্যানসার ছাড়া)।

কিডনির ব্যথা ভালো না হওয়া পর্যন্ত থাকবে এবং কিডনির ব্যথা হবে চিন চিন ব্যথা বা জমে থাকা ব্যথার মতো। কিন্তু কোমরের ব্যথা সময়ে সময়ে পরিবর্তন হবে। মাঝে মাঝে একেবারেই কমে যাবে, আবার কখনো অনেক বেশি হবে, কখনই একটানা থাকবে না।

কিডনির ব্যথা শরীরের পজিশন পরিবর্তনে কোনোভাবেই কম বেশি হবে না, একই রকম থাকবে। কিন্তু কোমরের ব্যথা শরীরের পজিশন পরিবর্তন করলে (যেমন সামনের দিকে বা পিছনের দিকে ঝুঁকলে, বসে থাকলে বা শুয়ে থাকলে) ব্যথা কমবে বা বাড়বে।

অতিরিক্ত পরিমাণে তরল দ্রব্য খেলে কিডনির ব্যথা আরো বাড়বে। কিন্তু মেরুদন্ডের সমস্যা থাকলে তরল দ্রব্য খেলে কোনো ধরনের পরিবর্তন হবে না।

কোন সমস্যা কোথায় যেতে হবে?

কিডনি সমস্যার জন্য যাবেন নেফ্রোলজিস্ট বা ইউরোলজিস্ট চিকিৎসকের কাছে। তিনি আরো কিছু টেস্ট করে নিশ্চিত হবেন আপনার কিডনিতে কী ধরনের সমস্যা আছে।

কোমরের ব্যথার জন্য যাবেন ফিজিওথেরাপিস্ট চিকিৎসক বা অর্থোপেডিক্স বা নিউরোলজিস্ট চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক আরো কিছু টেস্ট করে দেখবেন আপনার কোমরে কী ধরনের সমস্যা হয়েছে।

লেখক: ডা. ইব্রাহীম খলিল পিটি

ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/এসএস