পুঁজিবাজারে ভয়াবহ পতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১৭:২৬
ফাইল ছবি

শেয়ার বিক্রির চাপে আরেকটি বড় ধরনের পতনের কবলে পড়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। মঙ্গলবার ডিএসইর মূল্যসূচকে ভয়াবহ পতন লক্ষ করা গেছে। মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলোর দরপতনে যে ধস নেমেছে তাতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৮৭ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ কমে বিগত ৫৬ মাস পেছনে নিয়ে গেছে।

ব্যাপক এ দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ডিএসইর পুরাতন ভবনের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করছেন। পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মামলা-হামলাকে উপেক্ষা করে নিজেদের অস্বিত্ব রক্ষায় রাস্তায় নেমেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আর্তনাদে উত্তাল হয়ে উঠে দেশের শেয়ারবাজার। যেকোনো মূল্যে পুঁজিবাজারকে ভালো করার জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি একেএম মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সবকিছুর দাম বাড়ে কিন্তু শেয়ারবাজারের দাম বাড়ে না বরং দিনের পর দিন রসাতলে যাচ্ছে। এর আগে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে আত্মহত্যা করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিটাও তেমন দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সরকার সব দিকে উন্নয়নের জোয়ার দেখালেও শেয়ারবাজারকে ভালো করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

এছাড়া বিনিয়োগকারীরা যৌক্তিক কারণ ছাড়াই আতঙ্কে শেয়ার বিক্রিতে ঝুঁকে পড়েছেন। ফলে মঙ্গলবার উভয় বাজারে লেনদেনও কমেছে।

২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচক চালু হওয়ার দিন ছিল ৪০৫৬ পয়েন্ট। আজ প্রায় আট বছর পর ডিএসইএক্স সূচক দাঁড়িয়েছে ৪০৩৬ পয়েন্ট। অর্থাৎ সূচক তার শুরুর দিনের চেয়ে নিম্নে অবস্থান করছে

আজ ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৮৭ পয়েন্ট। এরমধ্যে গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকো ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের অবদান ৩২ পয়েন্ট বা ৩৭ শতাংশ। এ সময় একক কোম্পানি হিসাবে সূচকে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোনের দরপতন। এ কোম্পানির দরপতনে সূচক কমেছে ১৫.৬৫ পয়েন্ট। আর ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকোর কারণে ৮.৬৫ পয়েন্ট ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের কারণে ৭.৬৪ পয়েন্ট কমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির বেশকিছু সূচকে কিছুটা নেতিবাচক প্রবণতার কারণে পুঁজিবাজারেও এর প্রভাব পড়তে পারে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ওপর যোগ হয়েছে গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিটিআরসির দ্বন্দ্বের বিষয়টি। এক অংকের সুদহার বাস্তবায়ন হলে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার বিষয়ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। সর্বোপরি বাজারে সুশাসনের অভাবের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তো রয়েছেই। এসব কারণেই বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে তারা ভালো-মন্দ কোনো কোম্পানির শেয়ারই বাদ দিচ্ছেন না।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আজ ডিএসইএক্স সূচক ৮৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে চার হাজার ৩৬ পয়েন্টে, যা গত চার বছর সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৫ সালের ৫ মে এই সূচকের অবস্থান ছিল চার হাজার ১৪ পয়েন্ট।

অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ২২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯০৭ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৬১ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ ২৬২ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা গত কার্যদিবস থেকে ২৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কম। গতকাল লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

আজ ডিএসইতে ৩৫৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩২টির, কমেছে ২৯৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির।

অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৬৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১২ হাজার ৩০০ পয়েন্টে। সিএসইতে টাকার অংকে ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/আরএ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

পুঁজিবাজার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা