হলফনামা নিয়েই সারা ইসি

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৩৮ | প্রকাশিত : ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:১৬

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের জমা দেয়া হলফনামার তথ্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) খতিয়ে দেখেছে কি-না প্রশ্ন উঠেছে। মনোনয়ন দাখিলের আগে প্রার্থীরা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, আয়, সম্পদ, মামলা-সংক্রান্ত তথ্যাদি হলফনামায় উল্লেখ করে ঘোষণা দেন। তবে ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই-বাচাই করা হয়নি। সত্যতা যাচাইয়ে হলফনামা জনসমক্ষে প্রকাশেরও দাবি উঠেছে।

নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে হলফনামার মাধ্যমে কমিশনের কাছে সম্পদের বিবরণসহ আট ধরনের তথ্য দিতে হয়। আর এসব তথ্য হলফনামা করে দাখিল বাধ্যতামূলক। মনোনয়ন দাখিল করার আগে একজন প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে শপথ করে এই হলফনামা জমা দিতে হয়।

একজন প্রার্থীকে হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, আয়, সম্পদ, মামলা-সংক্রান্ত তথ্যাদিসহ আট রকমের তথ্য উল্লেখ করতে হয়। ঢাকা সিটি নির্বাচনের হলফনামায় দেয়া প্রার্থীদের তথ্য এখন নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে প্রার্থীদের দেয়া তথ্য সঠিক কি-না সে বিষয় ইসির খতিয়ে দেখা নিয়ে। কেননা বরাবরই অভিযোগ আসে হলফনামায় অনেক প্রার্থীই নানা কৌশলে সম্পদের হিসাব সঠিকভাবে প্রদান করেন না।

প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই-বাছাই করে সত্যতা দেখা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটা যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়। হলফনামা হলো ঘোষণাপত্র।’

‘এখন আপনার ঘোষণা যদি আপনি ভুল দেন কেউ যদি এটা চ্যালেঞ্জ করে আর মিথ্যা প্রমাণিত হয় তখন আপনার শাস্তি পেতে হবে। যেমন ধরেন আপনি বললেন আপনি পিএইচডিধারী কিন্তু একজন এসে অভিযোগ করল আপনি তা নন, এমনকি এসএসসি পাস করেননি। তখন তো এটা খতিতে দেখা দরকার।’

হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়ে এক প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রার্থীরা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তাদের তথ্য জমা দেয়। আর প্রার্থীদের আয়কর বিষয়ে তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দেয়া তাদের তথ্যই এখানে জমা দেয়। ফলে এ তথ্য সঠিক থাকে বলেই আমরা ধরে নিই। তাছাড়া আমরা ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘হলফনামায় কোনো প্রার্থী অসত্য তথ্য দিলে আর কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিয়ে সে বিষয়ে তদন্ত করে পরে ব্যবস্থা নিই।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রাজনীতিকে কলুষমুক্ত রাখতে প্রার্থীদের হলফনামা ইসির খতিয়ে দেখা উচিত। এটা নির্বাচন কমিশনকে নিজ থেকেই করা উচিত। কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দেবে এরপর তা ইসি খতিয়ে দেখবে এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা-২০১০ অনুসারে হলফনামার মাধ্যমে কোনো প্রার্থী তথ্য না দিলে, অসত্য তথ্য দিলে বা তথ্য গোপন করলে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে অথবা কারও আপত্তি আমলে নিয়ে তদন্ত করতে পারবেন এবং মনোনয়ন বাতিল করতে পারবেন। এ ছাড়া মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইনে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

এ বিষয়ে আলোকপাত করে বদিউল আলম বলেন, ‘কেউ অভিযোগ করলে তারপর ইসি হলফনামার তথ্য যাচাই করবে সেটা একেবারেই গোঁজামিল। নিজ থেকেই প্রার্থীদের হলফনামা ইসির যাচাই করা প্রয়োজন। ভুল তথ্যের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলও করতে পারেন ইসি। কিন্তু সেই উদাহরণ তো নেই বললেই চলে।’

সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলে বলা আছে, প্রার্থীদের কাছ থেকে হলফনামার মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যাদি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে, যাতে ভোটাররা প্রার্থীদের যাবতীয় তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে পারেন। এসব তথ্য লিফলেট আকারে ভোটারদের মধ্যে, জনাকীর্ণ বা অন্য কোনো দর্শনীয় স্থানে প্রচারের পরামর্শ দেয়া আছে।

আরও বলা হয়েছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সঙ্গে সঙ্গে হলফনামা, সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী, আয়কর রিটার্ন ও কর পরিশোধের প্রমাণপত্রের অনুলিপি স্ক্যান করে পিডিএফ ফাইলরূপে নির্বাচন কমিশনে ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। আর নির্বাচন কমিশন তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।

(ঢাকাটাইমস/১৬জানুয়ারি/জেআর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ঢাকা সিটি নির্বাচন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা