সাংবাদিক মাহমুদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:৫৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

চ্যানেল নাইনের অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ‘নাইন ইনভেস্টিগেশন’ এর প্রতিবেদক মাহমুদ হোসাইনের ওপর হামলার মামলার আসামিদের সাত দিনের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে ঢাকায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।

এক সপ্তাহের মধ্যে চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে ডিএমপি কমিশনার, আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর পদযাত্রা, স্মারকলিপি, গণস্বাক্ষর কর্মসূচির মতো বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিক নেতারা।

মানববন্ধনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, ‘দেশে যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা তা স্তিমিত করতে দুর্নীতিবাজ, ভুয়া গণমাধ্যমের একটি চক্র বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর চ্যানেল নাইনের অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান 'নাইন ইনভেস্টিগেশন' এর প্রতিবেদক মাহমুদ হোসাইনের ওপর রাতের অন্ধকারে হামলা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, হামলার ঘটনায় রাতেই মামলা হলেও চিহ্নিত অপরাধীদের কাউকে গত সপ্তাহেও খিলগাঁও থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। উপরন্তু মামলায় সিএমপি কমিশনারের আত্মীয় আসামি থাকায় তিনি পক্ষাবলম্বন করে তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন।’

আকতার বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, সাংবাদিক মাহমুদ হোসাইনের ওপর হামলায় জড়িত আসামিদের এক সপ্তাহের মধ্যে যদি গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সকল সাধারণ সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে কঠোর ও দুর্বার আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’

ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের লজ্জা হয়, একজন পেশাদার ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকের ওপর হামলা ও মামলার পরও আসামিরা গ্রেপ্তার হয়নি; উল্টো হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া হবে না। এই হামলার পর মামলা তুলে নিতে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ফোন করেন কোন সাহসে। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। হামলায় জড়িতরা যতোই প্রভাবশালী হোক না কেন গ্রেপ্তার করুন, অন্যথায় বিকল্প ও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সহ-সভাপতি আজমল হক হেলাল বলেন, একজন সংসদ সদস্য ও একজন পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রভাব দেখিয়ে হামলা হয়েছে। আবার মামলা তুলে নিতে যে কর্মকর্তা কল করেছেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে আইজিপির প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

অতীতে অনেক হামলার ঘটনা ঘটেছ। সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার আমরা পাইনি। আর এটা হতে দেয়া হবে না। খিলগাঁও থানা পুলিশ যদি আসামি ধরতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা খিলগাঁও থানা, ডিএমপি কমিশনার কার্যালয় ও আইজিপি কার্যালয় বরাবর পদযাত্রা কর্মসূচিতে যাবো।
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ নিজাম বলেন, এর আগে আমরা হেলমেট বাহিনী কর্তৃক সাংবাদিকদের ওপর হামলা হতে দেখেছি। কিন্তু বিচার তো দূরে শনাক্তকৃত কোনো আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। এই যে বিচারহীনতা, সাংবাদিক নির্যাতনের পর আসামিদের পার পাওয়া তা পুলিশ প্রশাসন কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। বরং এবার সাংবাদিক মাহমুদ হোসাইনের উপর হামলায় খোদ সিএমপি কমিশনার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে আসামি আত্মীয় বলে তার পক্ষাবলম্বন করেছেন। মামলা প্রভাবিত করায় নিন্দা জানান তিনি।
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য বাতেন বিপ্লব বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সমাজের অন্যায়গুলো তুলে ধরায় অনেকবারই নির্যাতন চালানো হয়েছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের। কিন্তু বিচার মেলে নি। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী পরিষদ সদস্য গোলাম মুজতবা ধ্রুব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকাও প্রধানমন্ত্রী বারবার জোর দিয়েছেন। কিন্তু সাংবাদিক নির্যাতন সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। সাংবাদিক মাহমুদকে যারা নির্যাতন করেছে তারা অপরাধী। তাদের পরিচয়ও শনাক্ত। আমরা আশা করছি নেতৃবৃন্দের ঘোষণা অনুযায়ী পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করবে।

গত ১১ জানুয়ারি রাত পৌনে ১০ টায় রামপুরার ই ব্লকের ৬ নম্বর রোডে চ্যানেল নাইনের অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান 'নাইন ইনভেস্টিগেশন' এর প্রতিবেদক মাহমুদ হোসাইনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতে চ্যানেল নাইনে অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান 'নাইন ইনভেস্টিগেশন' এর প্রথম পর্বটি প্রচারিত হয়। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রচার করায় দুর্বৃত্তরা হামলা করে বলে মনে করেন নির্যাতিত সাংবাদিক মাহমুদ। এ ব্যাপারে তিনি রামপুরা থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা করেন।

ঢাকাটাইমস/১৭ জানুয়ারি/এসএস/ইএস