অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সিরিজে সমতা আনল ভারত

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২০, ২২:৩৩

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ফিরে আসা বোধ হয় একেই বলে। ওয়াংখেড়ের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ভারতকে মাটি ধরিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। রাজকোটের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ টিম ইন্ডিয়ার কাছে ছিল ‘ডু অর ডাই’। শুক্রবার জিততেই হবে, না হলে সিরিজ হাতছাড়া। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৬ রানে জিতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল ভারত। সিরিজ এখন ১-১। শামি-সাইনি-জাদেজাদের দাপটে অস্ট্রেলিয়া শেষ হয়ে গেল ৩০৪ রানে।

সিরিজ এ দিন জিততে হলে অ্যারন ফিঞ্চের দলকে করতে হত ৩৪১ রান। শিখর ধাওয়ন, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলির ব্যাটিং দাপটে পাহাড়সমান রান করে ভারত। রান তাড়া করতে নেমে বিপজ্জনক ওয়ার্নারকে মাত্র ১৫ রানে ফেরান মহম্মদ শামি। মনিশ পাণ্ডে এক হাতে বাঁ হাতি ওপেনারের ক্যাচ ধরেন। ফিঞ্চ করেন ৩৩।

অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ২ উইকেটে ৮২। অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন স্টিভ স্মিথ ও লাবুশানে। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে স্মিথ ব্যাট হাতে কিছু করে দেখানোর সুযোগ পাননি। ওয়ার্নার ও ফিঞ্চ ভারতীয় বোলারদের ধ্বংস করেছিলেন। এদিন স্মিথ খেললেন ৯৮ রানের দুরন্ত ইনিংস। ভাগ্য সহায় না থাকায় সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন তিনি। কুলদীপের বলে বোল্ড স্মিথ। তাঁর আগে অবশ্য আউট হন লাবুশানে (৪৬)। আগের ভারত সফরে মোহালিতে টার্নার একা ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। এ দিন পর পর দু’ বলে স্মিথ ফেরান টার্নার ও কামিন্সকে। হ্যাটট্রিক অবশ্য করতে পারেননি শামি। এ দিকে রান রেট বেড়ে চলছিল অজিদের। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ৪৯.১ ওভারে শেষ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়নের ব্যাটে বড় রানের ভিত গড়েছিল ভারত। প্রথম পাওয়ারপ্লের ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৫৫ রান তুলেছিলেন দু’জনে। কিন্তু বেশিক্ষণ থাকলেন না হিটম্যান। ছয়টি চার সহ ৪৪ বলে ৪২ করে অ্যাডাম জাম্পার বলে হলেন এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি তিনি।

রোহিত পঞ্চাশের দোরগোড়া থেকে ফিরেছিলেন। আর শিখর ফেরেন সেঞ্চুরির দরজা থেকে। কেন রিচার্ডসনের বলে ৯৬ রানে ফাইন-লেগে সহজ ক্যাচ দিলেন মিচেল স্টার্ককে। ৯০ বলের ইনিংসে মারলেন ১৩টি চার ও একটি ছয়। বিরাটের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ধওয়ন যোগ করলেন ১০৩ রান। তার আগে মুম্বইয়ের পর রাজকোটেও টানা দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন শিখর ধওয়ন। ৬০ বলে পঞ্চাশে পৌঁছেছিলেন তিনি। ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শতরান নিশ্চিতই দেখাচ্ছিল তাঁর। কিন্তু তা ফেলে দিয়ে আসেন বাঁ-হাতি ওপেনার।

আগের ম্যাচের থেকে শিক্ষা নিয়ে এদিন তিন নম্বরে নেমেছিলেন বিরাট কোহালি। তাঁকেও ছন্দে দেখাল। সারাক্ষণ সচল রাখলেন স্কোরবোর্ড। ৫০ বলে পৌঁছলেন পঞ্চাশে। কিন্তু ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন ৭৮ রানে। হলেন ফের অ্যাডাম জাম্পার শিকার। অ্যাশটন আগার লং-অফে ক্যাচ ধরে ভারসাম্য হারানোর সময় ছুড়ে দিলেন মিচেল স্টার্ককে। তাঁর ৭৬ বলের ইনিংসে ছিল ছয়টি চার।

শিখর ফেরার পরই আউট হয়েছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। এই সিরিজ ভাল গেল না তাঁর। দুই ম্যাচেই ব্যর্থ হলেন। লোকেশ রাহুলকে না নামিয়ে চারে এদিন তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা কাজে লাগাতে পারলেন না। ১৭ বলে সাত রান করে অ্যাডাম জাম্পার বলে বোল্ড হলেন। রান পেলেন না ছয়ে নামা মনিশ পাণ্ডেও (২)। কোহলি আউটের পর কেন রিচার্ডসনের বলে অ্যাশটন আগারকে ক্যাচ দিলেন তিনি।

পাঁচে নামা লোকেশ রাহুল অবশ্য আগ্রাসী ইনিংস উপহার দিলেন। ৩৮ বলে পৌঁছলেন পঞ্চাশে। শেষ ওভারে হলেন রানআউট। ৫২ বলে ৮০ রানের ইনিংসে মারলেন ছয়টি চার ও তিনটি ছয়। একদিনের ক্রিকেট হাজার রান পেরিয়ে গেলেন তিনি। দুর্দান্ত ছন্দে আছেন তিনি। একদিনের ক্রিকেট তাঁর শেষ ইনিংসের রান ছিল যথাক্রমে ১০২, ৭৭ ও ৪৭। সেই মেজাজেই ব্যাট করলেন। দেখিয়ে দিলেন, ওপেনিং না করলেও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবেও কতটা কার্যকরী হতে পারেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে যোগ করলেন মূল্যবান ৫৮ রান। যা ভারতকে পৌঁছে দিল সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি। ১৬ বলে ২০ রানে অপরাজিত থাকলেন জাডেজা। অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার জাম্পা (৩-৫০)। রিচার্ডসন নেন দুই উইকেট।

ওয়াংখেড়ের ওয়ানডে অনেক প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছিল ভারতকে। শুরুতে ঝড় তুলতে পারছিলেন না ব্যাটসম্যানরা। প্রচুর ডট বল খেলছিলেন ব্যাটসম্যানরা। যা নিয়ে কথা উঠেছিল দলের মধ্যেই। পরের দিকে রানের গতি বাড়ানো যাচ্ছিল না। নীচের দিকের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা তো ছিলই। এ দিন সব সমালোচনা দূর করে ভারত।

(ঢাকাটাইমস/১৭ জানুয়ারি/এসইউএল)