শুকনা যমুনায় বাহন যখন মোটরসাইকেল

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:২৫

ফরমান শেখ, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর যমুনা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এটিকেই বেছে নিয়েছেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। আবার অনেকেই ধূ-ধূ বালুচর হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।

উপজেলার নিকরাইল, গাবসারা, অর্জুনা ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চরাঞ্চলে সরেজমিনে এমন চিত্রই দেখা যায়। চর ও নদীর কারণে ভাড়া বেশি হলেও শুষ্ক মৌসুমে মাইলের পর মাইল মোটরসাইকেলে যাতায়াত করছেন স্থানীয়রা। এতে সময় বাঁচে, সুবিধাও বেশি।

বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার আগে যমুনা নদীতে জাহাজ, লঞ্চ ও নৌকা নৌ-পথের যাতায়াতের পরিবহন ছিল একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু কালের বিবর্তনে যমুনা তার যৌবন হারিয়ে এখন মৃত প্রায়। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে একদিকে যেমন বাস্তহারা করছে চরের মানুষকে, অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে যমুনা মরা খালে পরিণত হচ্ছে। 

যমুনার দুর্গম চরের চরবিহারী গ্রামের ময়নাল হোসেন জানান, নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। নৌকা চলাচল বন্ধ। গোবিন্দাসী ফেরি ঘাটে হেঁটে যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে, কিন্তু মোটরসাইকেলে বাড়ি থেকে ২০ থেকে ২৫ মিনিটে যেতে পারি।

ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, গোবিন্দাসী ঘাট থেকে দূরত্ব অনুয়ায়ী নির্ধারিত ভাড়া নেয়, আবার কখনো বেশিও নেয়। চরবিহারী গ্রাম থেকে রুলিপাড়া ঘাটে যেতে মোটরসাইকেল ভাড়া ১০০ টাকা লাগে। মোটরসাইকেলে যাতায়াতের জন্য যেমন সুবিধা হয়েছে, অন্যদিকে ডাকাতের হাতে পড়ার আতঙ্কও রয়েছে। 

মোটরসাইকেল যাত্রী আব্দুল আলিম জানান, যাতায়াতের জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে বিকল্প ভাড়ায় চালিত যানবাহনের জন্য। তবে এটা সারাবছরই নয়। প্রায় ছয় মাস নদীর বুকে এসব যানবাহন চলাচল করে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল করে।

রুলীপাড়া গ্রামের মোটরসাইকেল চালক আয়নাল হক বলেন, তার তিন সন্তান রয়েছে। মোটরসাইকেল চালানো তার বর্তমান পেশা। আগে তিনি ইটভাটায় কাজ করেছেন। এখন তিনি প্রতিদিন মোটরসাইকেল চালিয়ে ৮ থেকে ৯’শ টাকা উপার্জন করেন। সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আয়ও হয়েছে ভাল।

ভূঞাপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। স্কুল, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, ব্যাংক-বীমা, কমিউনিটি সেন্টার, এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মরত লোকজন প্রতিদিন চরাঞ্চলে মোটরসাইকেল দিয়েই যাতায়াত করেন। এসব মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন শুস্ক মৌসুমে মোটরসাইকেল। তবে চরের অনেক মানুষ এখনও হেঁটেই বিশাল চর পাড়ি দেন।

(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/এলএ)