সিটি নির্বাচনে কী হতে পারে?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু
| আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৪৫ | প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:১৯
মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী প্রচারণা চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য দুর্ঘটনার খবর মিডিয়ায় আসেনি। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পাল্টাপাল্টি ছোটখাটো আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সতর্ক করেছে। নির্বাচন কমিশন মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচন প্রচারে অংশগ্রহণ আইনসঙ্গত নয় বলে ঘোষণা দিয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাধা দেওয়া অযৌক্তিক বলে দাবি করছে। তা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে বলেছে যে, সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচার ও কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।

এদিকে বিএনপির নেতারা বলছেন, ভয়ভীতি ও নির্বাচনী প্রচারে তাদের প্রার্থী ও সমর্থকদের বাধা দিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এমনকি বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলারদের নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচনে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যেl ইতিমধ্যে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএন‌পি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি অবিভক্ত ঢাকার শেষ মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন। তাবিথ আউয়াল বলেছিলেন, নির্বাচনে কারচুপির পরিকল্পনা চলছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রচারে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। কাউন্সিলরদের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। ইসি এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিজয় সুনিশ্চিত বলে আশাবাদী তিনি।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, নির্বাচিত হতে পারলে ঢাকাকে তিনি উন্নত নগরীতে পরিণত করবেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, তিনি পুনরায় নির্বাচিত হলে রাজধানীকে স্মার্ট সিটি করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, যদি নির্বাচিত হই তাহলে আমি একটি পরিষ্কার এবং আধুনিক সবুজ শহর গড়ে তুলবো।

নির্বাচন সঠিকভাবে পরিচালিত হলে ফলাফল কী হতে পারে? বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত জরিপ পরিসংখ্যান করার মতো কোনো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের ওপর জনগণকে সবসময় নির্ভর করতে হয়। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর নিরপেক্ষ জনপ্রিয়তা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে।

এদিকে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ আছে বলে অনেকে অভিযোগ করে থাকেন। তবে টেলিভিশনের টক শোগুলোতে রাজনীতিবিদদের কথা বলার ধরণ দেখে কথাটার সত্যতার প্রমাণ মেলে নাl

নির্বাচনের আগে ও পরে সরকারি দলের প্রার্থীদের জয় জয়গান আর অন্যদিকে বিরোধী দলের প্রতিবাদ মানুষ সবসময় শুনে আসছে। এবারও কি তার প্রতিফলন ঘটবে? নাকি ঢাকাবাসী দেখবে এবার অন্য এক নির্বাচন। নির্বাচনের প্রতি জনগণের উৎসাহ ও অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে ঢাকাবাসীর ভোটাধিকার, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন ও সুশাসন নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে হলে আসন্ন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিরপেক্ষ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

ক্ষমতাসীন দলের জন্য ঢাকার মেয়র নির্বাচন একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অনেকে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের ব্যাপারে কেউ কেউ বলছেন, তিনি সাবেক মেয়র মরহুম আনিসুল হকের অসমাপ্ত কাজগুলো সঠিকভাবে করতে ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, যে সরকারি দখলকৃত রাস্তা মেয়র আনিসুল হক নিজেদের অধীনে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন এখন পুনরায় দখলে চলে গেছে। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বয়সে তরুণ ও উচ্চ শিক্ষিত। তবে রাজনীতিতে তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেইl তাছাড়া তার পরিবারের নামে দুর্নীতির অভিযোগ আছে বলে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর‌পোরশ‌নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস একজন গ্রহণযোগ্য অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাজনীতিবিদ। শেখ ফজলুল হক মনির সন্তান হিসেবে তার একটা পরিচয় রয়েছে। ব্যারিস্টার তাপসের বড় ভাই বর্তমানে যুবলীগের চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয় তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর‌পোরশ‌নের বিএন‌পি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন রাজনীতিবিদ নন। এই লাইনে তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেইl তিনি শুধু বাবা মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ব্যক্তিগত ইমেজের ওপর নির্ভরশীল এবং একমাত্র এই ইমেজকে কাজে লাগিয়ে তিনি জয়লাভ করার চেষ্টা করছেনl

জনগণ চায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচনl ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সরকারের জন্য এক বিরাট পরীক্ষা। ক্ষমতাসীন দলের জন্য নির্বাচন সম্বন্ধে অতীতে যে নেতিবাচক সমালোচনা রয়েছে তাকে মুছে ফেলার এই এক সুবর্ণ বলে পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন। সরকারও একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে।

নির্বাচন হলো জনমত যাচাইয়ের একটি গণতান্ত্রিক পন্থা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিবেশের মাধ্যমে দল ও প্রার্থীর জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করার এই একটা সুযোগ। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সিটি করপোরেশনে একটি অবাধ নিরপেক্ষ স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান বলে বলেছেন। সুতরাং আসছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণl

আপাতদৃষ্টিতে যতটুকু ধারণা করা যায় এবারের ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রার্থীর জয়লাভ করার সম্ভাবনাই বেশি। তবে কোনো কারণে নির্বাচনী ফলাফল অন্যদিকে মোড় নিলে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থীর পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। এখন প্রশ্ন হলো কে সেই বিএনপি প্রার্থী যার জয়লাভ করার সম্ভাবনা? অন্যদিকে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা কার, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, না আতিকুল ইসলামের?

আসছে নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও যদি বিএনপি প্রার্থীরা হেরে যায় তাহলে হয়তো তারা গতানুগতিকভাবে যা বলে ঠিক সেভাবেই বলবে, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। আমরা এই নির্বাচন মানি নাl সাথে সাথে নির্বাচনী ফলাফলকে পুঁজি করে আন্দোলনের ইস্যু তুলবেl এমন অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নূর হয়তো চুপ করে বসে থাকবে নাl তার মুখেও হয়তো শোনা যাবে একই সুরl মনে হবে বিরোধিতার ক্যাসেট যেন আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছেl বিএনপিকে এ ধরনের রাজনীতি থেকে সরে আসতে হবেl জিতলে ঠিক আর হারলে বেঠিক এমন কথা জনগণ আর শুনতে চায় নাl

নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্বে অবহেলা করলে সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যঘাত ঘটেl এজন্য নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ করা যেতে পারে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবেl নির্বাচন কমিশন যদি জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে না পারে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই জনমনে নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্ন আসবেl ফলে নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা হারাবেl আর এর জন্য দায়ী থাকবে নির্বাচন কমিশনl আমরা আশা করবো নির্বাচন কমিশন আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করবে।

লেখক: জুরি স্টকহল্ম আপিল কোর্ট ও ইমিগ্রেশন কোর্ট

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :