‘ইভিএমে ডিজিটাল জালিয়াতি’

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৮:৫৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

জাতীয় সংসদের চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে ঘোষণা দিলেও বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান দাবি করেছেন, ‘মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে পেরেছেন। বাকি ভোট ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে দেখানো হয়েছে।’

‘সরকার নির্বাচন কমিশনকে ভোটাধিকার হরণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে’ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই প্রার্থী। তিনি পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছেন।

শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আবু সুফিয়ান। উপ-নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, বিভিন্ন অনিয়ম এবং ইভিএমে ভোট কারচুপির তথ্য তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে আবু সুফিয়ান বলেন, ‘উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, প্রশাসন ও দলীয় সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে তথাকথিত ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে জনগণের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এই নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করা যায়। এটি মধ্যরাতের নির্বাচনের মতো আরেকটি কৌশল। ইভিএম এখন মহাপ্রতারণার নতুন পদ্ধতি। এতে ডিজিটাল ডাকাতির পর অভিযোগ করারও সুযোগ নেই। একজন ভোটার কোথায় ভোট দিলেন তা নিজে জানারও সুযোগ নেই।’

এক প্রশ্নের জবাবে সুফিয়ান বলেন, ‘মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু দেখানো হয়েছে ২২ শতাংশ। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সহায়তায় ইভিএম মেশিনের পাসওয়ার্ড নিয়ে প্রতি বুথে ৭০ থেকে ৮০টি জাল ভোট দিয়েছে। এভাবে ২২ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে।’

একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘২২ শতাংশ ভোটের মধ্যে আসলে ভোট পড়েছে ৫ শতাংশ। ১০ শতাংশ ভোট দিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসার নিজে। বাকি ভোটকেন্দ্র দখল করে পাসওয়ার্ড নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দিয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্র দখল করে ইভিএমের পাসওয়ার্ড নেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগও তুলে ধরেন আবু সুফিয়ান। তিনি জানান, নগরীর হামজারবাগ রহমানিয়া স্কুল কেন্দ্রে দুপুর ১২টার সময় ২ নম্বর কক্ষে কয়েকজন বহিরাগত সন্ত্রাসী প্রবেশ করে। তারা নির্বাচন কমিশনের আইটি বিশেষজ্ঞ ও প্রিজাইডিং অফিসার ছোটন চৌধুরীকে নিয়েই সেখানে যান। তার মোবাইল থেকে নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে ডিভাইস নম্বর দিয়ে কোড অথবা পাসওয়ার্ড চাইলে +৮৫৮৪৭৭৬৭+ নম্বরটি দেওয়া হয়। তারা এসময় বলতে থাকেন, ১০ শতাংশ ম্যাচিং

কোড দিয়ে তাড়াতাড়ি ভোট নিয়ে নেন। তখন অন্যজনের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। অবৈধভাবে শুরু করা ভোটার নম্বর- ৪২২, ৫০২, ৪৯৯ ও ৫৮০।’

 

তিনি জানান, ‘মৃত ব্যক্তি এবং প্রবাসীদের নামেও ভোট দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগের রাতে বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও সরকার দলীয় নেতারা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে কেন্দ্র দখল করেন। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেও কেন্দ্র দখল করা হয়েছে। ভোট শুরুর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশের উপস্থিতিতে নৌকার লোকজন ইভিএমের গোপন বুথে অবস্থান নেয়। ভোটাররা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পরই ব্যালট ইউনিটে নৌকার সমর্থকরা ভোট দিয়ে দেয়।’

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ‘এ উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনকে ভোটাধিকার হরণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর জানান, ভোটগ্রহণের সময়ই অনিয়মের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হাসানুজ্জামানের কাছে অভিযোগ করা হলেও তিনি নীরব থাকেন এবং অস্বীকার করেন। এভাবে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ঘোষণা করেছে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আবু সুফিয়ান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওই নির্বাচন এবং উপ-নির্বাচনে তার প্রাপ্ত ভোটের তারতম্য তুলে ধরে একে অবিশ্বাস্য এবং জালিয়াতির উদাহরণ বলে মন্তব্য  করেন।

ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সুফিয়ান বলেন, ‘জনগণের করের টাকা খরচ করে সরকার ও নির্বাচন কমিশন তামাশা করেছে। তামাশার নির্বাচন জনগণ মেনে নেয়নি।’

পরপর তিনবারের সাংসদ জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনে গত ১৩ জানুয়ারি উপ-নির্বাচন হয়। এতে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ৮৭ হাজার ৩৪৬ ভোট পেয়ে জয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আবু সুফিয়ান পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৩৫ ভোট।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, সদস্য

সচিব মোস্তাক আহমদ খান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহসভাপতি মাহবুবুল আলম, নাজিম উদ্দিন আহমদ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এসএম সাইফুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক কাজী বেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/কেএম/এলএ)