নবম বছরে রকমারি ডটকম

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:৫৭ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:২২

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

আজ থেকে আট বছর আগে বাংলাদেশের মানুষ তখন ইন্টারনেটের সাথে মাত্র কিছুটা পরিচিত হওয়া শুরু করেছেন। অনলাইনে কেনাকাটা বিষয়টা জনপ্রিয় তো ছিলই না বরং অনেকের জন্য ছিল অবাক করা কিংবা অবাস্তব একটা ব্যাপার। সেসময় অন্যরকম গ্রুপের কর্ণধার মাহমুদুল হাসান সোহাগ প্রতিষ্ঠা করলেন রকমারি ডটকম। সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপারটা এতটাই অদ্ভুত ছিল যে, তার সাথে মানুষের মানিয়ে নিতে বেশ সময় লেগেছে।

‘ইন্টারনেট থেকে বই কিনবো, ঠিকমত ডেলিভারি দেবে তো?’, ‘বাজে কোয়ালিটির বই গছিয়ে দেবে না তো?’, নানারকম সংশয় ছিল মানুষের মধ্যে। সংশয় এবং কৌতূহলের মিশ্রিত অনুভূতি নিয়ে কিছু মানুষ কেনা শুরু করলেন বই। তারপরের গল্পটা সুন্দর। রকমারি নিজেদের প্রচারণা যতটা করেছে, মানুষ তার চেয়ে বেশি করে দিয়েছে। বইপড়ুয়া মানুষেরা নিজেদের মধ্যে আলাপে রকমারির প্রসঙ্গ তুলবে না, এমন ঘটনা কমই ঘটেছে!

এখন রকমারির বয়স আট বছর! এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীতে অনেক বদল হয়ে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই হারিয়ে ফেলেছে জৌলুস, অনেকেই তাদের অস্তিত্ব নিয়ে সংকটে রয়েছে, কাগজের বইয়ের বদলে অনেকেই ই-বুক, পিডিএফ পড়ছেন, এর মধ্যেও রকমারি নিজেদের জানান দিয়ে যাচ্ছে প্রবলভাবে।

আট বছর আগের এই দিনে, এই ১৯ জানুয়ারি রকমারি যখন যাত্রা শুরু করেছিল তখন বাংলাদেশে কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ছিল না। আর আজ জীবনধারণের জন্যে প্রয়োজনীয় সবকিছুই অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়। সেই দিক থেকে রকমারিকে বাংলাদেশের ই-কমার্স আন্দোলনের অগ্রদূত বলাটা বাতুলতা হবে না মোটেও!

রকমারির Vision খুব সাধারণ। মানুষকে বই পড়তে উৎসাহিত করা, ৫৬ হাজার বর্গমাইলে বই পৌঁছে দেয়া। বই কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু নয়। তারপরও মানুষ রকমারি থেকে বই কিনছে এবং মানুষের কাছে বই পৌঁছে দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তাদের অন্নসংস্থান করছেন এটি আশাবাদ জাগায়।

আট বছরে রকমারি কেন ঝরে গেল না? রকমারির সাফল্যের রহস্য কী? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেক জটিল বিশ্লেষণাত্মক কথাবার্তা বলতে পারেন অনেকেই। তবে একটা কথা মনে হয় বলাই যায়, রকমারি টিকে আছে তার Vision এর জন্যে। এখানকার কর্মীরা বিশ্বাস করেন তারা পণ্য বিক্রয় করছেন না, মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন জ্ঞান, ছড়িয়ে দিচ্ছেন নানারকম অনুভূতির পসরা। 

রকমারি যে শুধু ই-কমার্স আন্দোলনের পথিকৃৎ, তা নয়। নতুন নতুন চিন্তা এবং উদ্যোগের সাথেও পরিচয় করিয়েছে রকমারি। বইয়ের মার্কেটিংকে নিয়ে গেছে নতুন পর্যায়ে। রকমারির বই বিষয়ক ই-মেইলের অনেকই সাহিত্য মানসম্পন্ন। কখনো চিঠির আঙ্গিকে, কখনো গল্পের আঙ্গিকে, কখনো সংলাপের মাধ্যমে, কখনো বিভিন্ন চরিত্রে চিত্রিত ই-মেইলগুলো খুব কম মানুষই স্প্যাম ফোল্ডারে রাখতে চাইবেন! প্রতিযোগিতা নয় সহযোগিতা- এই নীতির অসাধারণ এক প্রদর্শন তারা দেখিয়েছে তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে অন্যান্য অনলাইন বুকশপগুলোর নাম প্রচার করে। কখনো তারা লেখককে দিয়েই বই ডেলিভারির কাজ করিয়ে পাঠককে চমকে দেয়, কখনো রিভিউ উৎসবের মাধ্যমে পাঠাভ্যাসকে আরও পরিশীলিত করে। 

বই অর্ডার করা থেকে পাঠকের কাছে পৌঁছুনোর পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যেই আছে আন্তরিকতা এবং সুরুচির ছোঁয়া।

‘আপনার অর্ডারটি আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তুত করে ডেলিভারি টিমের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে রেডি করা হয়েছে আপনার পার্সেলটি। আশা করি আপনার পার্সেলটি খুব দ্রুতই পেয়ে যাবেন’

অর্ডার কনফার্ম হবার পর এমন মেইল পেয়ে ক্রেতা আশ্বস্ত হন। শুধু তাই না, ঢাকার মধ্যে নিজস্ব ডেলিভারিম্যান দিয়ে পার্সেল দেয়ার আগে এসএমএস করে ডেলিভারিম্যানের নাম এবং সময় জানিয়ে দেয়া হয়।

এসব কারণেই সেদিনের ছোট্ট স্টার্টআপটি আজকের অনলাইন বুকশপ আইকন। রকমারিতে ভালো ভালো বই পাওয়া যায়, রকমারি মানুষের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করছে, এই চমৎকার লক্ষ্য এবং দর্শন তো আছেই, সাথে সাম্প্রতিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের কারণেই রকমারি আজ ই-কমার্স জগতে এক অনন্য নাম।

১০০টি বই নিয়ে শুরু করা অনলাইন বুকশপটিতে আজ এন্ট্রি করা আছে দুই লক্ষাধিক বই! প্রতিদিন প্রায় ৪০০০ থেকে ৫০০০ পার্সেল পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে। দিনে দিনে যে এই সংখ্যাটা বেড়েই চলবে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই!

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/জেবি)