চুল গজানোর উপায়
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের'পর হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা’- কবি জীবনানন্দ দাশের মত চুলের বন্দনা করেছেন অনেকেই। চুল নারী-পুরুষ উভয়ের সৌন্দর্যের একটি বড় দিক। বর্তমানে চুলের নানান স্টাইল, ফ্যাশন দেখা যায়। করা হচ্ছে হরেক কালার। চুলের জন্য কতশত বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। কিন্তু যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে তাদের মনের অবস্থা কেমন সেটা সহজেই অনুমেয়।
চুল রক্ষায় কী করা যেতে পারে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য উচ্চ মাত্রার প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান অপরিহার্য। এমন খাবার (ডায়েট) বেছে নিন যার মধ্যে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই, আয়রন (আয়রন), জিঙ্ক, কপার, ম্যাগনেসিয়াম এবং সেরালিনিয়াম অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খুবই জরুরি।
আমাদের উচিত দুধ, পনির, দই, চিকান ডিম, শস্য, স্যামন মাছ, সবুজ ব্রকোলি, ক্যাপসিকাম, বাঁধাকপি, ব্রাউন ব্রেড ও ওটস খাওয়া, যা চুল ও শিকড় মজবুত করে । এছাড়াও কমলার রস, গাজর, বিটরুট এবং পলক রস পান করুন ।
রেডডি অয়েল
ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে থাকা ভিটামিন ই এবং ওমেগা নাইন ফ্যাটি অ্যাসিড চুলকে স্বাভাবিকভাবেই বাড়তে সাহায্য করে। নারিকেল তেল, জেটন তেল বা বাদামের তেল মিশিয়ে তারপর চুলের গোড়া ম্যাসাজ করে ৩০-৪০ মিনিট রেখে দিন। এর পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মাথা মালিশ
নিয়মিত মাথা মালিশ করলে রক্তের সঞ্চালনা বাড়ে। এজন্য নিয়মিত মাথা মালিশ করুন।
সপ্তাহে একবার গরম তেল বা কন্ডিশনার দিয়ে চুল ম্যাসাজ করুন এবং চুল ধুয়ে ফেলুন। চুলে গরম তেল বা কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন।
আঙুল দিয়ে চুলের গোড়া গোল করে ৪-৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন।
চুল উন্টা করে আঁচড়ানো
এটি আপনার চুল দ্রুত বৃদ্ধি করার একটি উপায়। চুল উলটা দিকে আঁচড়াতে হবে যাতে আপনার চুল উল্টে যায় এবং মাথার পিছনে উল্টে যায়। প্রতিদিন ২-৪ মিনিট এই কাজটি করতে হবে।
মানসিক চাপ কমানো
স্ট্রেস চুলের ক্ষতি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। স্ট্রেস শুধুমাত্র চুলের জীবনচক্র বাধা দেয় এবং চুল ক্ষয় বাড়ে। চুলকে যদি দ্রুত বাড়তে দিতে চান তাহলে জীবনে স্ট্রেস দূর করতে হবে। ব্যায়াম ও যোগের সাহায্যে জীবনে মানসিক চাপ কমে যেতে পারে।
চুলে ডিমের ব্যবহার
ডিম দ্রুত চুল বৃদ্ধির জন্য খুব উপকারী উপকরণ। কারণ এটিতে উচ্চ প্রোটিন রয়েছে এবং এছাড়াও আয়রন, সালফার, ফসফরাস, দস্তা এবং সেলেনিয়াম রয়েছে। ডিমের প্রলেপ মাসে অন্তত একবার প্রয়োগ করতে হবে।
এটি করতে একটি ডিমের চর্বি নিন, ১ কাপ দুধ, ১ চা চামচ অলিভ অয়েল ও অর্ধেক লেবু মেশান। তারপর মিশ্রণটি ভালো করে বীট করে ২০-৩০ মিনিট চুলে রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
লম্বা, ঘন ও চকচকে চুল পেতে প্রাকৃতিক উপায়
ভেষজ প্রয়োগ
মেহেদি পাতার রস চুল দ্রুত বাড়ার জন্য খুব কাজে দেয়। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে। মেহেদি পাতা ছেঁচে রস লাগাতে পারলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তবে বাজারে প্যাকেটজাত কিনতে পাওয়া যায়। এগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
গ্রিন টি
গ্রিন টিতে রয়েছে পলিফেনল যা চুল গজাতে সাহায্য করে, তাই নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার
রোজকার সুষম খাদ্যের পাশাপাশি এক একটি ডোজ হিসেবে ফলিক অ্যাসিড, বায়োটিন ও মাছের তেল খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুলের ক্ষতি রোধ করে। এটি চুলে খুশকির প্রকোপ কমায় এবং চুলের ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখে।
অ্যালোভেরা জেলের মধ্যে অল্প করে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে প্রায় ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলু । সপ্তাহে অন্তত একবার বা দুবার এই কাজটি করুন ।
সমপরিমাণ নারকেলের দুধ ও গমের জীবাণু তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে চুলে প্রয়োগ করা হয়। প্রতিদিন অ্যালো ভেরা জুস পান করলে চুলের বৃদ্ধি উন্নত হবে।
চিকিৎসা সমাধান
অনেক কিছু করার পরেও যদি ভালো ফল না হয়, তাহলে আপনার শরীরের অন্যান্য সমস্যা যেমন থাইরয়েড, হরমোন, দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা সংক্রমণের জন্য পরীক্ষা করা উচিত এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
ঢাকাটাইমস/২০ জানুয়ারি/এস এস