শেষ হলো ফুলকি-খেলাঘর ডিজিটাল শিশুশিক্ষা মেলা

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০২০, ২৩:১৯

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

রাজধানী ঢাকার মিরপুর মডেল থানার মধ্যপীরেরবাগ এলাকার ফুলকি খেলাঘর আসর ও ফুলকি স্কুলের যৌথ আয়োজনে সম্পন্ন হয়েছে ফুলকি-খেলাঘর ডিজিটাল শিশুশিক্ষা মেলা ২০২০। ফুলকি খেলাঘর আসরের প্রথম সম্মেলন ও ফুলকি স্কুলের গৌরবের ১৩ বছরপূর্তি উদযাপনে ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি শুক্র, শনি ও রবিবার এ মেলা অনুষ্ঠিত হয় ৯৫/৩/১ মধ্যপীরেরবাগের ফুলকি ক্যাম্পাসে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলো প্রতিপাদ্য নিয়ে- তিন দিনের মেলায় ছিল আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল কর্মমুখী শিক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের উপকরণ ও সামগ্রী প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের আনন্দ-বিনোদনের নানা উৎসবমুখর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা, শিশুতোষ ও শিক্ষামূলক বই, যাদু, পাজল ও কম্পিউটার গেমিং জোন, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলা, পিঠা উৎসব, ডিজিটাল শিক্ষা, শিশুকল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক প্যারেন্টিং সেমিনার-কনফারেন্স ও গুণীজন সম্মাননা।

শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবক এবং এলাকাবাসীকে বিনামূল্যে চক্ষু, ডেন্টাল ও স্বাস্থ্যসেবা ও গুঁড়ো দুধ বিতরণ এবং ডিজিটাল কনটেন্ট, স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং ও স্ক্র্যাচ সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রজেক্ট তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় শিশু-কিশোর ও শিক্ষক-অভিভাবক-সংগঠকদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা এবং বিনামূল্যে র‌্যাফেল ড্র ছিল মেলার বিশেষ আয়োজন।

১৯ জানুয়ারি রবিবার বিকালে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল। এদিনের অনুষ্ঠান ও ফুলকি খেলাঘর আসরের প্রথম সম্মেলনের উদ্বোধন করেন খেলাঘর ঢাকা মহানগরী কমিটির সভাপতি ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক মোহাম্মদ এমদাদুল হক, নারীনেত্রী ও সংগঠক হোমায়রা খাতুন, বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি ডা. তানজিবা রহমান এবং বাংলাদেশ ডিজিটাল এডুকেশন সোসাইটির সভাপতি জসিমউদ্দিন জয়।

সম্মেলনে অশোকেশ রায়কে সভাপতি ও মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে ফুলকি খেলাঘর আসরের ৪৫ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। নবনির্বাচিত কমিটি ঘোষণা ও শপথ পাঠ করান খেলাঘর ঢাকা মহানগরী কমিটির সভাপতি শ্যামল দত্ত। কমিটিতে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সহসভাপতি অমরেশ রায়, ডা. তানজিবা রহমান, জসিমউদ্দিন জয়, সমীর কান্তি হালদার ও অলক সরকার অপু, সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজীত বিশ্বাস তন্ময়, অর্থ সম্পাদক উম্মে রোমান জয়া প্রমুখ।  

সমাপনী অনুষ্ঠানে সম্মাননা জানানো হয় শিশুকল্যাণে আলোর পথযাত্রী জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের গুণীজন ও শিশু-কিশোর-তরুণসহ মোট ১৪ জনকে। তাদের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে গুনীজন সম্মাননা পান ৫ জন- স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল, খেলাঘর ঢাকা মহানগরী কমিটির সভাপতি ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, কথাসাহিত্যিক মোহাম্মদ এমদাদুল হক, বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি ডা. তানজিবা রহমান এবং বাংলাদেশ ডিজিটাল এডুকেশন সোসাইটির সভাপতি জসিমউদ্দিন জয়। স্থানীয় পর্যায়ে সম্মাননা পাওয়া ৭ জন গুনীজন হলেন- কণ্ঠশিল্পী এস. এম. সলিমুল্লাহ্ মুরাদ, সাংবাদিক সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ, সংগঠক হোমায়রা খাতুন, যাদুশিল্পী স্বপন দিনার, ডিজিটাল সার্ভিসে সাফল্য অর্জনকারী শাহাবুদ্দিন মুন্সী এবং তরুণ সংগঠক শাখাওয়াত হোসেন রিমন ও প্রসেনজীত বিশ্বাস  তন্ময়।

ফুলকি খেলাঘর আসরের ২০১৯ সালের জন্য মনোনীত সেরা ভাই ও সেরা বোন তাহসিন জামান গলপো ও অবন্তিকা রায়কেও অনুষ্ঠানে সম্মাননা জানানো হয়। এদিন যাদুশিল্পী স্বপন দিনারের মনোমুগ্ধকর যাদু প্রদর্শনী মাতিয়ে তোলে শিশু-কিশোরসহ সকলকে।

১৮ জানুয়ারি শনিবার দ্বিতীয় দিনে চারটি বিভাগে চিত্রাংকন, হাতের সুন্দর লেখা, ক্রাফটিং, বিজ্ঞান কুইজ, বই পড়া, যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিশু-কিশোররা। তাদের মধ্যে বিজয়ীদের পুরস্কার ও অংশগ্রহণকারীদের শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ করা হয় সমাপনী আয়োজনে।

১৯ জানুয়ারি ফুলকি স্কুলের শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। একই অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত হয় স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীরাও। এ পর্বে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডিজিটাল এডুকেশন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন হেলাল, পপুলার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, প্রাইভেট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাসান আলী, ঢাকি সিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং চিত্রশিল্পী রফিকুল ইসলাম। 

এছাড়া ১৮ জানুয়ারি বর্ণমালা স্কুলের বই উৎসবে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয় শিক্ষার্থীদের মাঝে। দ্বিতীয় দিনের প্যারেন্টিং কনফারেন্সে অতিথি ছিলেন গৌরব একাত্তরের সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সাহাবুল ইসলাম বাবু ও খেলাঘর জাতীয় পরিষদ সদস্য আসিফ ইকবাল সৌরভ। আলোচনা করেন কণ্ঠশিল্পী এস. এম. সলিমুল্লাহ্ মুরাদ ও বাংলাদেশ ডিজিটাল এডুকেশন সোসাইটির সভাপতি জসিমউদ্দিন জয়।

১৭ জানুয়ারি উদ্বোধনী দিনে সাংবাদিক জয় মাহমুদ বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি ডা. তানজিবা রহমান ও বাংলাদেশ ডিজিটাল এডুকেশন সোসাইটির সভাপতি জসিমউদ্দিন জয় অতিথি হয়ে আসেন। আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক অমরেশ রায়, আলীমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মিজান হাকিম, সমীর কান্তি হালদার ও তরুণ সংগঠক প্রসেনজীত বিশ্বাস প্রত্যয়।

এছাড়াও শিশু সংগঠক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী, জনপ্রতিনিধি-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ডিজিটাল শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মেলার তিনদিন অতিথি ও আলোচক হয়ে বিভিন্ন বিষয়ের আয়োজনে অংশ নেন।

জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রতিদিনের অনুষ্ঠানমালা। প্রথম দিনের সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নেয় ফুলকি স্কুলের শিক্ষার্থী ও ফুলকি খেলাঘর আসরের ভাই-বোনেরা। দ্বিতীয় দিন মনোজ্ঞ নাচ-গান, আবৃত্তি ও সমবেত সংগীতে মঞ্চ মাতান খেলাঘর কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক দলের ভাই-বোন ও সংগঠকরা। শেষ দিনে গান গেয়ে শোনান এস. এম. সলিমুল্লাহ্ মুরাদ, সাকিব, অর্ক ও ছোট্ট বন্ধু সাকিবা, নৃত্য পরিবেশন করে ফুলকির বোন অবন্তিকা রায়।

তিন দিনের মেলায় বিভিন্ন পর্বে সভাপতিত্ব করেন ফুলকি খেলাঘর আসরের আহ্বায়ক অশোকেশ রায়। স্বাগত বক্তব্য দেন যুগ্ম আহবায়ক ও ফুলকি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন ফুলকি স্কুলের প্রধান শিক্ষক উম্মে রোমান জয়া ও ভাইস প্রিন্সিপাল অলক সরকার অপু। পুরো অনুষ্ঠানমালা সঞ্চালনায় ছিলেন জসিমউদ্দিন জয়, প্রসেনজীত বিশ্বাস তন্ময় ও বৃষ্টি ভদ্র।

(ঢাকাটাইমস/২০জানুয়ারি/এলএ)