কানে খোঁচাখুঁচি একদম নয়

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২০, ১১:৪৮ | প্রকাশিত : ২১ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:৫৭

কান সুড়সুড় করলেই তো হাত নিশপিশ করে ওঠে। পেন, পেন্সিল, কাঠি, ইয়ার বাড হাতের কাছে যা থাকে কানে ঢুকিয়ে, এদিক ওদিক ভালো করে ঘুরিয়ে যত ময়লা ছিল টেনেটুনে বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা চলে। মুখ বেঁকিয়ে, নাক সিঁটকাবার কিছু নেই, এমন অভ্যাস কমবেশি সবারই। অনেকের তো আবার যখন তখন কানে কিছু ঢুকিয়ে সুড়সুড়ি না খেলে ঠিক চলে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাজটা কিন্তু মোটেই ভালো নয়। অহেতুক কানকে খোঁচালে, সেও পাল্টা জবাব দিতে ছাড়বে না। ইনফেকশন, ব্যথা, খুঁচিয়ে ঘা-রক্ত-পুঁজ, এমনকি শ্রবণশক্তির দফারফা—সবকিছুই হতে পারে।

কাজেই বাজার চলতি ইয়ার বাড নয়, হাতের কাছে যা পেলাম তাই দিয়েও নয়, কান পরিষ্কার রাখার বিজ্ঞানসম্মত কিছু উপায় আছে। সেগুলো ঠিকঠাক মেনে চললেই কান থাকবে একেবারে ফুরফুরে। আসলে কান হলো নিজের মর্জির মালিক। শরীরের ভারসাম্য রক্ষার এক গুরুদায়িত্ব আছে তার ওপর। কানকে বেশি না ঘাঁটানোই বুদ্ধিমানের কাজ, সে নিজের মতোই থাকতে চায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কানের ময়লা বা খোলেরও উপকারিতা আছে। কাজেই তাকেও টেনেটুনে বাইরে নিয়ে আসার খুব একটা দরকার নেই। খুব প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের দেখানো পথেই কান পরিষ্কার রাখা উচিত।

জমুক না খোল ক্ষতি কী!

কানের ভেতরে ঘাঁপটি মেরে থাকা হলদেটে-খয়েরি রঙের যে বস্তুটাকে নিয়ে এত মাতামাতি, তার কিন্তু নিজস্ব গুণাগুণ আছে। কানের ময়লা যার পোশাকি নাম ইয়ারওয়াক্স (Earwax) বা চলতি কথায় কানের খোল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই কানের ময়লা কিন্তু আসলে কানকে সুরক্ষা দেয়। এটি আসলে কানের বাইরে থাকা সিবেসিয়াস গ্রন্থির (Sebaceous Gland) ক্ষরণ যাকে বলে সেরুমেন (Cerumen)। এর মধ্যে থাকে কেরাটিন (৬০%), স্যাচুরেটেড এবং আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (১২-২০%) এবং কোলেস্টেরল (৬-৯%)। এই ক্ষরণ হলদেটে হয়, এরই সঙ্গে বাইরে ধুলো-ময়লা ইত্যাদি মিশে একটা বিদঘুটে রং ও আকার নেয়। যাকে বাইরে আনার জন্যই মানুষজনের এত খোঁচাখুঁচি, টানাটানি।

কানের খোলের আসল কাজ হলো কানকে সুরক্ষা দেওয়া। সেরুমেন সামান্য অ্যাসিডিক, এর কাজ জীবাণু নাশ করা, কানকে হাইড্রেটেড রাখা। ইনফ্লুয়েঞ্জা, স্ট্রোপ্টোকক্কাসের মতো ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাককে নাশ করে এই সেরুমেন। কানের অন্দরমহলকে বাইরের ধুলোবালি থেকে রক্ষা করে। দরকার হলে কান নিজেই এই খোল সাফ করতে পারে। আসলে কান নিজেই নিজেকে পরিষ্কার রাখতে জানে। কিন্তু ঘনঘন কটন বাড বা ইয়ার বাড দিয়ে কান খোঁচালে সেই স্তর নষ্ট হয়ে যায়। তখনই যাবতীয় ইনফেকশন, ব্যথা ইত্যাদি শুরু হয়।

এই ইয়ারওয়াক্স বেশি জমে গেলে তখনই অস্বস্তি শুরু হয়। সেরুমেনের সঙ্গে ময়লা জমে কান সুড়সুড় করতে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন খোল বার করতে হলে প্রথমেই ইয়ার বাড ব্যবহার না করে ইয়ার-ড্রপ বা গরম সেঁক অথবা ইয়ার-ফ্লাশ করা যেতে পারে।

খুঁচিয়ে ঘা নাই বা করলেন!

ইয়ার-ড্রপ—ইএনটি স্পেশালিস্টকে দেখিয়ে কানের ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সব ইয়ার-ড্রপ ব্যবহার করারই একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। সেটা দেখে নেওয়া ভালো। পুরনো ইয়ার-ড্রপ ব্যবহার করলে উল্টে ক্ষতি হতে পারে।

গরম সেঁক—অনেক সময় অতিরিক্ত খোঁচাখুঁচিতে কানে ব্যথা হয়। সেক্ষেত্রে গরম পানির ভাপ নিলেও ব্যথা কমে। হালকা করে উঞ্চ গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে কানের যতটা অংশ পারেন মুছে নিন। তাতেও কান পরিষ্কার থাকবে।

ইয়ার-ফ্লাশ—এই পদ্ধতি একটু সাবধানে করতে হবে। উষ্ণ গরম পানি বাল্ব-সিরিঞ্জে ভরে এক ফোঁটা-দু’ফোঁটা করে কানে ভেতর ফেলতে হবে। পাঁচ মিনিট সেভাবেই থাকতে হবে। অতিরিক্ত পানি কান নিজেই বার করে দেবে। সেই সঙ্গে ময়লাও বেরিয়ে যাবে। তবে কানে কোনোরকম অস্ত্রোপচার হলে বা কানের অন্য সমস্যা থাকলে ইয়ার-ফ্লাশ না করাই ভালো।

মিনারেল বা অলিভ অয়েল— গোসলের সময় কানের আঙুলে করে কানের ভেতর তেল মালিশ করার অভ্যাস অনেকেরই আছে। ছোট বাচ্চাদেরও তেমনটাই করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতি কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত। গরম তেল নয়, মিনারেল বা অলিভ ওয়েল যদি রোজ আঙুলে করে নিয়ে কানের ভেতর মালিশ করা যায় তাহলে কানে ময়লা জমতে পারে না। কানও অনেক হাইড্রেটেড থাকে।

ইয়ার বাড ভয়ংকর

সেফটিপিন বা কাঠি দিয়ে কান তো খোঁচাবেনই না, ইয়ার বাডও ব্যবহার করতে বারণ করছেন বিশেষজ্ঞরা। আজকাল বাজার চলতি অনেকরকম ইয়ার বাড বেরিয়েছে। কিন্তু অসাবধানতায় কানের ভেতর অধিক খোঁচাখুঁচিতে বিপদ হতে পারে। এগুলো থেকে সংক্রমণও ছড়ায়।

কটন বাডের তুলো অসাবধানতায় কানে ঢুকে গিয়ে মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। কটন বাডসের খোঁচা কানের অডিটরি লোবকে উত্তেজিত করে। কানের তরুণাস্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে শ্রবণশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময়ই অস্ত্রোপচারের সাহায্য নিতে হয় এমন বিপদে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়ারফোন থেকেও কানে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। নিজের ইয়ারবাড আলাদা বাক্সে বা প্যাকেটে ভরে ব্যবহার করুন, কারও সঙ্গে শেয়ার না করাই ভালো।

কানের বাড ও তার ব্যবহার নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঘন ঘন ইয়ার বাড ব্যবহার করার নেশায় ফি বছর গোটা বিশ্বে মৃত্যু হয় সাত হাজারের বেশি মানুষের। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ এই অভ্যাসের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে অবগত। প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ জেনেশুনে কানের বাড ব্যবহার করে কানের পর্দার নানা ক্ষতি করেছেন। তাই কানকে কানের মতোই থাকতে দিন। অহেতুক তাকে চটিয়ে কোনো লাভ হবে কী! –ওয়েবসাইট

(ঢাকাটাইমস/২১জানুয়ারি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

সস্তার পেয়ারার গুণে বশে থাকে ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :