ইভিএমে ভোট ডাকাতি চট্টগ্রামে প্রমাণিত: খসরু

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৩৩ | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি দাবি করেছেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের চেয়ে এই নির্বাচনে বেশি কারচুপি হয়েছে। এজন্য এই নির্বাচন বাতিল করে নতুন করে ব্যালটে ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাকক্ষে কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধি। পরে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিএনপি নেতা খসরু বলেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনে কী ঘটেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশ হয়েছে। সেটি নিয়ে আজ কথা বলেছি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের চেয়েও অনেক বেশি খারাপ হয়েছে এই নির্বাচন। নির্বাচন ব্যবস্থা অধিকতর খারাপের দিকে যাচ্ছে। উন্নতি তো দূরের কথা অবনতির দিকে যাচ্ছে, ফলে আস্থাহীনতা বাড়ছে।’

চট্টগ্রামে সব কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘১৭০ পোলিং স্টেশনের মধ্যে সবকটিই দখল করে নিয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা ছিল কেন্দ্রে বাইরের কেউ থাকতে পারবেন না, গাড়ি-মোটরসাইকেল চলবে না। কিন্তু সেখানে চট্টগ্রাম বিভাগের যত মেয়র, কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থান দৃশ্যমান ছিল। সবাই সরসরি কেন্দ্র দখল করেছে, মিছিল করেছে। যেখানে ভোট দেয় তা দখল করে নিয়েছে। মৃত মানুষের ভোট, প্রবাসীদের ভোট, জেলে থাকাদের ভোটও দিয়েছে।  ইভিএমে ভোট ডাকাতি হয় চট্টগ্রামের ভোটে তা প্রমাণিত হয়েছে।’

আমীর খসরু বলেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনের ভোটে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেয়নি। যারা যেতে পেরেছে তারা আঙুলের ছাপ দিয়েছে, ভোটের ব্যালট ইউনিটে ভোটের কাজ তারা সেরে ফেলেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও যেখানে ইভিএমে ভোট হয়েছে সেখানেও এমন হয়েছে, চট্টগ্রামে তার চেয়েও খারাপ হয়েছে।’

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘কমিশনকে অনুরোধ করেছি চট্টগ্রামের নির্বাচনটি বাতিল করে দিন। ব্যালটের মাধ্যমে পুনর্নির্বাচন দিন। কারণ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার সেখানে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ ছিল না। সেখানে কেন্দ্র দখল করেছে, ইভিএমের পাসওয়ার্ড নিয়েছে, ব্যালট ইউনিটে তারা ভোট দিয়েছে। আমরা বলেছি ভোট বাতিল করে ব্যালটে ভোটের ব্যবস্থা করুন।’

খসরু বলেন, ‘ইভিএমের ভোটে জালিয়াতি হলেও চ্যালেঞ্জের কোনো সুযোগ নেই। ভারতের চেয়ে ১১ গুণ টাকায় ইভিএম মেশিন কেনা হয়েছে। কিন্তু সেখানে অডিট ট্রেইল ও পেপার ট্রেইল নেই। ভারতের মেশিনে তা আছে। পাঁচ ছয়টি দেশে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে কমিশন বা সরকার নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ নয়। কিন্তু বাংলাদেশের কমিশন এবং সরকার প্রশ্নবিদ্ধ।’

কমিশন কী বলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা বলছে সব ঠিক আছে। আগে ৩০ ডিসেম্বরেও বলেছিল সব ঠিক আছে, এখনো তাই বলছে।’

ঢাকা সিটি নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের উত্তরের প্রার্থী তাবিথের ওপর হামলা হয়েছে। এ্যানিসহ ১৫ জন হামলায় আহত হয়েছেন। ঢাকার নির্বাচনে তারা রাস্তার ওপর অফিস করেছে, পোস্টার লাগিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রার্থীকে বাধা দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকার খবরদারি চালাচ্ছে বলে মনে করি।’

খসরু বলেন, ‘কমিশনের ওপর সমস্ত আস্থা হারিয়ে ভোট ব্যবস্থা চলছে।  কমিশনের ওপর ন্যূনতম আস্থা থাকলে বিএনপি ভোটে অংশ নিচ্ছে এটি কমিশনের প্রতি আস্থা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু জনগণের কোনো আস্থা নেই।’

বৈঠকে ইসির পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিইসি কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, মো. রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান।

বিএনপির প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চট্টগ্রাম দক্ষিণের বিএনপির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী আবু সুফিয়ান।

(ঢাকাটাইমস/২১জানুয়ারি/জেআর/জেবি)