ব্যর্থতার গ্লানি নয় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব: তাপস

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২০, ২০:০৭ | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২০, ২২:৪৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে ফিরে যেতে নয়, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস।

আজ বুধবার বিকালে পুরান ঢাকার কারা কনভেনশন হলে ‘সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের ব্যবসায়ী সম্মেলন ২০২০’ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মেয়রপ্রার্থী।

নিজে একজন ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীদের সমস্যা তিনি অনুধবন করতে পারেন জানিয়ে তাপস বলেন, ‘একজন ব্যবসায়ী কী চিন্তা-চেতনা ধারণ করেন এবং তার দৈনন্দিন কী চিন্তা-চেতনা থাকে, কী সমস্যা থাকে সেটা আমি অনুধাবন করি।’

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রাথী বলেন,  ‘আপনাদের এটুকু আমি বলি, আমি একজন বাস্তবভিত্তিক মানুষ। ছোটকাল থেকেই নিরলস পরিশ্রম, একাগ্রতা আর সততা দিয়ে এই পর‌্যন্ত এসেছি। আপনাদের কোনো জাদুকরী স্বপ্ন দেখাব না, দেখাইও নাই। আমার দেওয়া পাঁচটি ধাপের মধ্যে কোনো স্বপ্ন নেই। পঞ্চমের বাস্তবতা আছে। আমি এটুকু বলতে পারি, ডিএসসিসি হবে একটা বাস্তব ব্যবসায়ীদের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।’

ট্রেড লাইসেন্স পেতে দুর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে তাপস বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স এমন কোনো বিষয় না যে এর জন্য নয় মাস, ছয় মাস ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অপেক্ষা করতে হবে। ট্রেড লাইসেন্সের যেকোনো সিদ্ধান্ত পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে।’

ব্যবসায়ীদের জন্য ডিএসসিসিতে হেল্প ডেক্স করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র প্রার্থী ফজলে নূর তাপস। বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে ডিএসসিসিতে ব্যবসায়িক হেল্প ডেক্স করব। সেখান থেকে দৈনিক  ভিত্তিতে সেবা নিশ্চিত করা হবে। সব সেবা অনলাইন ব্যবস্থার মধ্যে আনা হবে। এমনকি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে পারব।’

ব্যবসায়ীসহ ঢাবাবাসীর সব সমস্যা সমাধানের জন্যই সংসদ সদস্য পদ ছাড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা। এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার যারা শুভাকাঙ্ক্ষী, আমাকে যারা বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তারা আমাকে বলেছিলেন একজন রাজনীতিকের জন্য সংসদ সদস্য পদ হলো রাজনীতির মূল স্রোতের একটি বড় অংশ। মেয়র হিসেবে দায়িত্বটা মূল স্রোতের বাইরে বলে ধরে নেওয়া হয়।’ ডিএসসিসি

“এ ছাড়া এত সমস্যা জর্জরিত, এত সংকট সেটাকে পরিবর্তন করা আদৌ সম্ভব? নাকি বদনাম বা ব্যর্থতা নিয়ে ফিরে যেতে হবে? বদনাম বা ব্যর্থতা নিয়ে ফিরে যেতে হলে রাজনৈতিকভাবে বুমেরাং হবে। তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। পরে তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে। আমি যখন সিদ্ধান্ত নিই, তখন বুঝে-শুনেই নিই, পারব বলেই নিই।’

সংসদ পদ ছাড়ার আগ নিজের মনের অবস্থা তুলে ধরে তাপস বলেন, ‘সংসদ সদস্য পথ থেকে যখন পদত্যাগ করলাম, জীবনের একটা বড় প্রাপ্তি যখন ছেড়ে দিলাম, তার আগের রাতে চিন্তার সময় সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাটাই ছিল এটা যে, হারাব না অর্জন করব, ব্যর্থতা না সফলতা, স্বপ্ন বাস্তবায়ন না ব্যর্থতায় পর‌্যবসিত একটি জীবন।’

‘যখন পদত্যাগপত্র দিয়েছি তখন এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই পদত্যাগ করেছি। ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করিনি। সুতরাং এই তালিকা (ব্যবসায়ীদের দেওয়া ২৮ সমস্যার তালিকা) তেমন কোনো বিষয় না।’ ব্যবসায়ীদের দেওয়া ২৮ সমস্যা সমাধানে তিনি বিচলিত নন বলে জানান তাপস।

উন্নত ঢাকা বিনির্নাণের জন্য আগামী ১ ফেব্রুয়ারি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন বলে মনে করেন মেয়র প্রার্থী তাপস। বলেন,‘উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে যদি কাজ শুরু করতে হয়, তাহলে আমি মনে করি আগামী পহেলা ফেব্রয়ারি আমাদের সেই নবসূচনা, নবযাত্রা করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন।’

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি তাকে মেয়র পদে ভোট দিয়ে ঢাকাবাসীর সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তাপস।

উইপোকামুক্ত হবে নগর ভবন

মেয়র নির্বাচিত হলে তাপস ডিএসসিসিকে দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেছেন, আমি একটি স্বপ্লোন্নত দেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করলাম, ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেটকে ৫ লক্ষ কোটি টাকার বাজেটে উন্নীত করলাম, ৫৬০ ডলার মাথাপিছু আয় থেকে ১৯০০ ডলারে উন্নীত করলাম, কিন্তু এতগুলো প্রকল্প করছি, পদ্মা সেতু, কিন্তু আমি দুঃখের সঙ্গে দেখছি আমার প্রকল্পের টাকা উইপোকায় খেয়ে নেয়।’

“আমি নির্বাচিত হলে ডিএসসিসিতে কোনো উইপোকার জায়গা হবে না। সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা হিসেবে একে গড়ে তুলব।’

ঢাকায় সুপেয় পনির পয়েন্ট করে দেওয়া হবে জানিয়ে তাপস বলেন, ‘দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম ৯০ দিনের মধ্যে সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করব। সেটা মশক নিধক হোক, সড়কের বাতি হোক। এই ৯০ দিনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেব।’

অবকাঠামো উন্নয়নে টেকসই মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী। বলেন,  ‘আমাদের প্রত্যেকটি অবকাঠামো, উন্নয়ন, রাস্তা নর্দমা, যেটাই আমরা করি না কেন, সেটার মান নিরূপণ করে অন্তত পক্ষে ১০ বছরের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা হবে।’

দক্ষিণ সিটিতে কর কমবে

ডিএসসিসিতে নাগরিকদের হোল্ডিং টেক্স বাড়বে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাপস। তিনি বলেন, ‘বরং কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয় করার জন্য কমতে পারে, বাড়বে না।’ আগামী দুই বছরের মধ্যে ডিএসসিসি  নিজের পায়ে দাঁড়াবে বলে জানান তিনি।

ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পার্কিং লট করার কতঅও বলেন তাপস, ‘পার্কিং লট কথাটা ছোট সময় থেকেই শুনে আসছি।  প্রতিটি এলাকার জন্য মতিঝিল, নবাবপুর, ইসলামপুরের মতো জায়গা ধরে এলাকাভিত্তিক বহুতল পার্কিং লটের ব্যবস্থা করব।’

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে ব্যবসায়ী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, এ কে আজাদ, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ, সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/মোআ