ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় প্রক্রিয়াজাত খাবারে

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ১২:১৬

স্বাস্থ্য প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মানুষের জীবন ধারণের খাবার এখন ফাস্টফুড, কেক, চিকেন নাগেট, চিপস, বিস্কুট, পাউরুটি-বানের দখলে। এই খাবারগুলো ‘অতি প্রক্রিয়াজাত’ খাবারের তালিকায় পড়ে। ফ্রান্সের গবেষকেরা বলছেন, এসব খাবারের সঙ্গে ক্যানসারের কোনো না কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে। ১ লাখ ৫ হাজার মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তারা। অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই মধ্যবয়সী নারী। গবেষকেরা জরিপে অংশগ্রহণকারীদের পাঁচ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করেছেন।

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, খাদ্যতালিকায় অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপস্থিতি যত বেশি, ক্যানসারের ঝুঁকিও তত বেশি।

এ তালিকায় সবার আগে রয়েছে ব্যাপক হারে প্রস্তুত ও বাজারজাত করা পাউরুটি, বান, চিপস। রয়েছে চকলেট বার ও মিষ্টান্ন। মিষ্টি অথবা মশলাদার স্ন্যাক্স, সোডা ও মিষ্টি পানীয়, মিটবল, হাঁস-মুরগি ও মাছের নাগেট, ইনস্ট্যান্ট নুডলস ও স্যুপ, হিমায়িত অথবা দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষিত প্রস্তুতকৃত খাবার এবং চিনি, তেল ও চর্বি দিয়ে তৈরি খাবারও রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই জানিয়েছে, প্রক্রিয়াজাত মাংস কিছুটা হলেও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া ধূমপানের পর স্থূলতাকে ক্যানসারের সবচেয়ে বড় প্রতিরোধযোগ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ ক্ষেত্রে পরিমিত খাদ্যাভ্যাস ক্যানসারের ঝুঁকি থেকে বাঁচার সবচেয়ে সহজ উপায়।

সম্প্রতি সুইডিস ন্যাশনাল ফুড অথোরিটির একটি গবেষণায় সামনে এসেছে এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এক্রাইলামাইড বা এক্রিলামাইড (Acryl amide) প্রাকৃতিকভাবে সংগঠিত এমন এক প্রকার রাসায়নিক যৌগ যা উচ্চক্ষম শর্করা বহনকারী শস্য বা সবজিতে থাকে এবং উচ্চতাপ মাত্রায় উত্তপ্ত হলে সেই যৌগ গঠনে সক্ষম হয়। মানুষের আয়ু কমানোর জন্য এই রাসায়নিক যৌগটির যেমন বিশেষ ভুমিকা রয়েছে তেমনি এটি ক্যানসারের কোষকে দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে বলে মত এই সুইস গবেষকদের।

বৃটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, খাদ্যতালিকায় অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিমাণ যদি ১০ শতাংশ বাড়ে, তাহলে ক্যানসার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার হার ১২ শতাংশ বাড়ে। গড়ে ১৮ শতাংশ মানুষ অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর নির্ভরশীল। আর বছরে গড়ে ১০ হাজার মানুষের ৭৯ জনের দেহে ক্যানসার ধরা পড়ে।

শুধু সিগারেট নয়। ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে প্রক্রিয়াজাত (প্রসেসড) মাংসকে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সস ও বেকন নয় যেকোনো ধরনের খাবার যা সংরক্ষণের জন্য বিশেষ রাসায়নিক (প্রিজার্ভেটিভ) ব্যবহার করে প্রক্রিয়াজাত করা হয় তাতে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এজন্য সকলকে প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে সাবধান থাকতে হবে। সঙ্গে বাচ্চাদেরও এসব প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকেও সাবধান রাখা দরকার।

যেসব প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে বিরত রাখবেন বাচ্চাদের

প্যাকেজজাত এই খাবারগুলো শুধু চিনিতে পরিপূর্ণ থাকে না, একইসঙ্গে এগুলো অপুষ্টিকরও বটে। এগুলো শরীরের তেমন কোন উপকারেই আসে না। কাজেই বাচ্চাদের সুস্থতায় এসব রঙ্গিন অপুষ্টিকর খাবার থেকে বিরত রাখুন।

ফলের খাবার

ফলের তৈরি প্যাকেটজাত বিভিন্ন খাবার বাচ্চাদের না দেওয়াই ভালো। কারণ এসব খাবারে স্বাদ আনতে কৃত্রিম নানা উপকরণ ব্যবহার করা হয়। এগুলো বাচ্চাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

প্যাকেটজাত পানীয়

সোডা ছাড়া যে কোন পানীয় পান করা ভালো। কিন্তু এতে সমান পরিমাণে রং এবং মিষ্টি মেশানো থাকায় তা বাচ্চাদের সুস্থতায় প্রভাব ফেলতে পারে। কাজেই এসব থেকেও আপনার বাচ্চাকে দূরে রাখুন।

রঙের স্টিক

বাচ্চারা সাধারণত বিভিন্ন রংয়ের খাবারের স্টিক খেতে পছন্দ করে। আর বিভিন্ন রংয়ের হওয়ায় এতে ক্ষতিকারক বিভিন্ন রঞ্জক ব্যবহার করা হয় যা বাচ্চাদের ক্ষতি করতে পারে। বাচ্চারা বিভিন্ন কালারের স্টিক আইসক্রিস খাওয়ার পর তাদের জিহ্বাটা পরীক্ষা করে দেখুন এর রংটা কতক্ষণ স্থায়ী হয়। তাহলেই এর ক্ষতিটা বোঝা যাবে।

ক্রেকার্স-চিপস

এসব খাবারে পনির এবং পিৎজার মতো কৃত্রিম ফ্লেভার মেশানো থাকে। এছাড়া এতে উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম এবং খুব কম পরিমাণে তন্তু আছে যা বাচ্চাদের শরীরের অনেক ক্ষতি করে। তাই বাচ্চাদের এসব খাবার থেকেও বিরত রাখুন।

(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/আরজেড)