স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত সাঁকোই পারাপারে ভরসা

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:৩৭

মহসিন মিলন, বেনাপোল (যশোর)

সেতু না থাকায় ভরসা কেবল নিজেদের তৈরি বাঁশের সাঁকো। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে কয়েক হাজার মানুষ। প্রতিদিন দুর্ভাগ্যের শিকার হচ্ছে স্কুলগামী কয়েকশ’ শিক্ষার্থী।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের খানপুর বাজার সংলগ্ন চিত্রা নদীর ওপর নির্মিত এ সাঁকোটিই পারাপারের একমাত্র ভরসা দুই পারের বাসিন্দাদের। বিশালাকৃতির ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো পার হওয়ার সময় ভয়ে থাকে সবাই। পা পিছলে পড়ে ঘটে দুর্ঘটনা। সাঁতার না জানা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আশঙ্কায় থাকতে হয় অভিভাবক ও শিক্ষকদের।

একটি সেতুর অভাবে এমন দুর্দশাগ্রস্ত এখানকার বাসিন্দারা। সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দিয়েছে। আশ্বাস মিললেও মেলেনি সেতু। তাই প্রতি বছর দুই পারের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো নির্মাণ করেন। চাঁদা তুলে কেনেন বাঁশ-খুঁটি। এটি তত্ত্বাবধান করে খানপুর বাজার কমিটি।

বাজার কমিটির সভাপতি অশোক বিশ্বাস জানান, সপ্তাহে দু’দিন শুক্র ও সোমবার খানপুরে হাট বসে। পাশের শালিখা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে আসেন এ হাটে। তাদের পণ্য পারাপারে একমাত্র ভরসা বিশালাকৃতির এই সাঁকো। এছাড়া কয়েকশ’ শিক্ষার্থী নিয়মিত পার হয় এ সাঁকো। ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাদের অভিভাবকরা। অন্তত একটি বেইলি ব্রিজের দাবি অশোক বিশ্বাসের।

খানপুর চিত্রা নদী পার হলেই উত্তরে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার সীমাখালি, কাতলী, ছয়ঘরিয়া হরিশপুর, খোলাবাড়িয়া, আড়ুয়াকান্দি ও পাঁচকাউনিয়া গ্রাম। এসব গ্রামের অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন পারাপার হয় এ সাঁকো দিয়ে। এরমধ্যে বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা, খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী পারপার হয় এ ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে। এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়েছে একাধিকবার। কাছাকাছি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় শালিখা উপজেলা থেকে বাঘারপাড়া উপজেলায় পড়তে আসে তারা।

শালিখা উপজেলার বাসিন্দা ও বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন এই সাঁকো দিয়ে নিয়মিত পারাপার হয়। কয়েকবার সাঁকো থেকে পড়ে আহত হওয়ার স্মৃতিও রয়েছে তার।

সুমাইয়ার সাথে সুর মিলিয়ে একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী দিশা পাল জানায়, ‘আমাগের বাড়ির ধারে ভাল ইস্কুল নেই। তাই একেনে (এখানে) ভর্তি হয়েছি ক্লাস সিক্স (৬ষ্ঠ শ্রেণি) থেকে। বর্ষাকালে দু’বার সাঁকো থেকে পড়ে গিইলাম। বই-খাতা ভিজিল। ব্যথাও পাইলাম।’

১০ম শ্রেণির ছাত্র বিজয় পাল, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বিনয় ও অজয় পাল। তারা জানায়, সাঁকো পার হয়ে স্কুলে আসতে তাদের ভয় লাগে। বিশেষ করে বর্ষাকালে এই সাঁকো পার হতে কষ্ট হয়। কাদাপানিতে একাকার হয় নদীর পার। তখন পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।

খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম খান বলেন, বিশাল এ সাঁকো পার হয়ে আসতে শিক্ষার্থীদের খুব কষ্ট হয়। সাঁকো থেকে পড়ে অনেকেই আহত হয়েছে। ছেলেমেয়েদের কষ্ট লাঘবে আমরা অনেকদিন ধওে সেতু দাবি করে আসছি।

নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের আবুল সরদার বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মৌখিকভাবে দাবি জানিয়েছি, একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করার। শিগগির লিখিতভাবে উপস্থাপন করব।

(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/এলএ)