মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমে যেভাবে এসেছে আইসিজের রায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:৩৫

রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার অন্তবর্তীকালীন আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আইসিজে)। বিশ্বের প্রায় সকল সংবাদমাধ্যম এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে। কিন্তু মূলত মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়া এই রায় সেদেশের সংবাদমাধ্যমে কীভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের রায়ের খবর মিয়ানমারের শীর্ষ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে। তবে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অফিসের যে ভেরিফাইড ফেসবুক পাতা আছে, সেখানে এ সংক্রান্ত কোন খবর বা পোস্ট দেখা যায়নি।

বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে ওই রায় ঘোষণার পরপরই এই খবরটিকে প্রধান শিরোনাম করে মিয়ানমার টাইমস।

মিয়ানমারের শীর্ষ নেতা অং সান সু চি আইসিজের রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে যেসব কথা বলেছেন, মিয়ানমার টাইমসের ওই প্রতিবেদনে সেগুলোই গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া সেনা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বক্তব্যও উঠে এসেছে তাদের ওই প্রতিবেদনে।

সু চি রায় ঘোষণা আগে ফাইনানশিয়াল টাইমসকে বলেছেন যে, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অপ্রমাণিত ব্যাখ্যার শিকার। তার মতে, বাংলাদেশের কিছু শরণার্থী ‘ভুল বা অতিরঞ্জিত তথ্য দিতে পারে’।

আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে নিন্দার ঝড় উঠেছে, সেটা রাখাইনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমারের প্রচেষ্টার উপর ‘নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে’ বলে সু চি উল্লেখ করেন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো যথাযথ তদন্ত ছাড়াই অপ্রমাণিত তথ্যের ভিত্তিতে মিয়ানমারের নিন্দা করছে বলেও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মিয়ানমারের টাইমসের ওই খবরে মিয়ানমারের কয়েকজন সামরিক নেতার বক্তব্যও তুলে ধরা হয়।

মেজর জেনারেল থায়োং নাইং ওই রায়ের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদেরকে যেভাবে দোষারোপ করা হয়েছে, আমরা তেমন নই। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আমাদের সেটাই করতে হবে যা আমাদের করা প্রয়োজন।’

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছেন, আন্তর্জাতিক আদালতের এই সিদ্ধান্ত নির্বিশেষে সেনাবাহিনী তার সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করবে।

দ্য ইরাবতী পত্রিকার প্রথম শিরোনামে স্থান পেয়েছে আইসিজের এই রায়ের প্রসঙ্গটি। তবে এই গণমাধ্যমের দ্বিতীয় খবরটি ছিল, রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে মিয়ানমার সরকার যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, সেটিকে স্বাগত জানিয়েছে জাপান সরকার।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর জাপানই প্রথম মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কথা জানায়।

গত ডিসেম্বরে সু চির সঙ্গে সাক্ষাতকালে নেইপিদোতে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, তার দেশের সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে মিয়ানমারের রাখাইনে কোনো গণহত্যা হয়নি। সেসময় আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার চলছিল। ওই খবরটিতে পরোক্ষভাবে মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়।

‌আইসিজের এই রায়ের খবরটি মিয়ানমারের সরকারি গণমাধ্যম দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে সেভাবে দেখা যায়নি। তবে আইসিজের এই রায়ের বিষয়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে দেয়া সংবাদ বিবৃতিটি তারা প্রকাশ করেছে।

সেখানে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন রায়টি মিয়ানমার সরকার আমলে নিয়েছে।

মিয়ানমারের স্বাধীন তদন্ত কমিশন-আইসিওই তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে রাখাইনে কোন গণহত্যা হয়নি। তবে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে বলে কমিশন জানতে পেরেছে। এখন সেই ঘটনাগুলো মিয়ানমার সরকারিভাবে তদন্ত ও বিচার করছে বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

মিয়ানমারে বিচার শেষে আদালতের রায় ঘোষণায় সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সু চি। সেখানে কি সিদ্ধান্ত আসে সেটা মিয়ানমারের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে সংবাদমাধ্যমটি।

মিয়ানমার অভ্যন্তরীনভাবে যে তদন্ত পরিচালনা করছে তাতে রাখাইনে নৃশংসতার চিত্র পুরোপুরি তুলে ধরা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে সুশীল সমাজের কয়েকটি গ্রুপ। মিয়ানমার টাইমসে এই খবরটি প্রকাশ পায়।

খবরটিতে আরও জানা যায় সুশীল সমাজের এমন শতাধিক গ্রুপ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইয়াঙ্গুনের মার্কিন দূতাবাস, আইসিজের এই রায়ের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে এবং তারা আশা করছে যে এই সিদ্ধান্ত রাখাইনে ন্যায়বিচারের পথ সুগম করবে।

মিয়ানমার তাদের ওই স্বাধীন তদন্তে গণহত্যার কোন প্রমাণ পায়নি বলে, যে ঘোষণা দিয়েছে তার নিন্দা জানিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, মিয়ানমার এভাবে আইসিজের রায়কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু মানবাধিকার সংস্থা তাদের অসমর্থিত তথ্যের ভিত্তিতে মিয়ানমারের নিন্দা করেছে এবং রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিকৃত চিত্র উপস্থাপন করেছে।

এতে মিয়ানমারের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়েছে এবং রাখাইনে টেকসই উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি হয়েছে বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া দ্য স্ট্যান্ডার্ড টাইমস ডেইলি, ইলেভেন মিডিয়া গ্রুপসহ আরও কয়েকটি গণমাধ্যমে এই খবরটিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার আইসিজে মিয়ানমারের প্রতি চারটি অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করে। সেখানে বলা হয়, যেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সব ধরনের হত্যা ও হত্যা প্রচেষ্টা বন্ধ করা হয়। দেশটির সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী বা যে কেউ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেন গণহত্যা না চালায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের প্রমাণ সংরক্ষণ করতে হবে। নির্দেশগুলো যথাযথভাবে যে পালিত হচ্ছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করে আইসিজেকে প্রতিবেদন দেবে।

ঢাকা টাইমস/২৫জানুয়ারি/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতায় চরম বিশৃঙ্খলা, যাত্রীদের দুর্বিষহ অবস্থা

ইসরায়েলি হামলায় গাজা একটি ‘মানবিক নরকে’ পরিণত হয়েছে: গুতেরেস

ইরানের ওপর ফের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা

যে কারণে ৩০ এপ্রিলের আগে ইরানে হামলা চালাবে না ইসরায়েল

ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ২৮ কর্মীকে বরখাস্ত করলো গুগল

আমিরাতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত, দুবাই বিমানবন্দরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা

ভারতে প্রথম দফায় লোকসভা নির্বাচন শুরু শুক্রবার

ইরানের হাতে রাশিয়ার এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা!

নেসলের বেবিফুডে অতিরিক্ত চিনি  

ইসরায়েল আত্মরক্ষার জন্য সবকিছু করবে: নেতানিয়াহু 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :