ওজন কমানোর ডায়েটে সফলতায় কিটো ডায়েট

ফিচার প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ১২:১৪

ডায়েটের সফলতা নির্ভর করে একটা সিস্টেমের ওপর। জেনেটিক ব্যাপার ছাড়াও কেউ মাসে ৫ কেজি কমায় আবার কেউ ২ কেজি। আমাদের বাঙালিদের প্রধান খাবার ভাত যার কিনা ৯০ ভাগই কার্বোহাইড্রেট। মানে আমাদের শরীর কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাদ্যতে অভ্যস্ত। এটি শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয়।

শরীরের ওজন কমানোর ডায়েট কিটো ডায়েট সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ জনপ্রিয়তায়। খাদ্য কিটোজেনিক ডায়েটের মূল ফর্মুলা কার্বোহাইড্রেটকে বাদ দিয়ে ফ্যাট আর প্রোটিনেকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এটির জন্য বেশ কয়েকটি চিত্তাকর্ষক সুবিধার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যসহ ওজন কমানোর। অতএব, ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেকেই কিটো ডায়েটে ফিরে যান।

আমাদের শরীরের প্রধান খাদ্য/জ্বালানি হলো গ্লুকোজ। কিন্তু যদি কোনো কারণে গ্লুকোজ শেষ হয়ে যায় তবে দেহ একটি বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করে। সেই বিকল্প জ্বালানিগুলোকে বলা হয় কিটোন বডি। কিটোন বডি থেকেই এসেছে কিটোজেনিক ডায়েট। কিটোন বডির মধ্যে রয়েছে- এসিটোন, এসিটো-এসিটিক এসিড এবং বিটা-হাইড্রক্সি-বিউটারেট।

আমরা যখন কিটো ডায়েট করি তখন আমাদের প্রধান টার্গেট থাকে গ্লুকোজের বদলে কিটোন বডিগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা। এখন প্রশ্ন হলো, কিটোন বডি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে কিভাবে ওজন কমবে? এই কিটোন বডিগুলো তৈরি হয় আমাদের ফ্যাটি টিস্যু ভাঙনের ফলে। সুতরাং আপনি যখন কিটোসিসে চলে যান অন্যভাবে বললে শরীরে গ্লুকোজ সাপ্লাই বন্ধ করে দেন তখন শরীর তার বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করার জন্য ফ্যাটি টিস্যু ভাংগা শুরু করে দেয়।

এখন কথা হলো কিটো ডায়েট কিভাবে কাজ করে। অনেক পুষ্টিবিদ অনেকভাবে এটাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। সবাই একটাই কথা বলেছেন, কার্বোহাইড্রেটকে বাদ দিয়ে ফ্যাট আর প্রোটিন খাও। সর্বজনস্বীকৃত একটা ফর্মুলা আছে। সেটা হলো- ৬০% ফ্যাট + ৩০% প্রোটিন + ১০% কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট।

কিটো ডায়েট অনেক ইফেক্টিভ ফ্যাট লস ডায়েট। এখানে ফ্যাটটিকেই টার্গেট করা হচ্ছে। ফ্যাট তো হলো বডির স্টোর্ড এনার্জি যা দুর্ভিক্ষের সময় আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। তো আমরা সেই ফ্যাটকে এনার্জি হিসেবে ব্যবহার করবো, কারণ কিটোতে কার্ব একদম বাদ দিয়েছি আমরা। যখন ফ্যাট বার্ন হবে তখন আপনার ওয়েট লস/ফ্যাট লস হবে, কেন কারণ কিটোতে আপনার ফ্যাট সেল বার্ন হচ্ছে। এখানে প্রোটিন জরুরি কারণ বডি যখন কিটোসিস এ যায় তখন ফ্যাটের সাথে কিছু মাসল ও বার্ন করতে পারে, সেটা যেন না হয় বা কম হয় তাই প্রোটিন রাখা হয়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে ফ্যাট এত বেশি খাবার প্রয়োজন কি?

কিটো ডায়েটে আমরা মেইনলি প্রোটিন খাব, শুধুমাত্র প্রোটিন থেকে ডেইলি ক্যালরি রিকোয়ারমেন্ট পুরণ করা যাবে না। তাই আমাদের ফ্যাট দরকার সেই ক্যালরির চাহিদা পূরণ করার জন্য। জেনে রাখা ভালো ফ্যাট, কার্ব আর প্রোটিনের চেয়ে ২.৫ গুণ বেশি ক্যালরি থাকে। বেশি ক্যালরি বা ক্যালরির ঘাটতিতে যাওয়া যাবে না। কারণ তখন আপনার বডি ঠিকমত ফাংশন করবে না। সেটা আর হেলদি ডায়েট থাকবে না। টোটাল ক্যালরি নিডের মাত্র ২০-৩০% প্রোটিন আর ৫% কার্ব বাকিটা ফ্যাট দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে হবে। কিটো ডায়েটে আমরা ফ্যাট খাব ফ্যাট বার্ন করার জন্য।

বিভিন্ন ধরনের কিটো ডায়েট আছে।

যেমন:

১. Standard Ketogenic Diet-(SDK) : এটাতে কার্ব ৫%, প্রোটিন ২৫ % আর ফ্যাট ৭০% থাকে।

২. Cyclical Ketogenic Diet- (CKD): এই কিটো তে সপ্তাহে দুদিন হাই কার্ব খাওয়া যায়।

৩. Targeted Ketogenic Diet-(TKD): এই কিটোতে ওয়ার্ক আউটের আগে/ পরে কার্ব খেতে পাওয়া যায়।

৪. High Protein Keto Diet: এটা অনেকটা স্ট্যান্ডার্ড কিটো ডায়েটের মতোই, শুধু প্রোটিন ২৫% থেকে বেড়ে ৩৫% হয়ে যায়। এটাতে ফ্যাট ৬০%, প্রোটিন ৩৫% আর ফ্যাট ৫%. বডি বিল্ডার বা এথেলেট রা এটা করে থাকে।

কিটো ডায়েটে যেসব খাবার খেতে পারবেন না

  • চিনি বা মিষ্টিজাতীয় কোনো কিছু একদম বাদ। কোক, ফলের জুস, কেক, আইসক্রীম, চকলেট, স্মুদি, যেকোনো ধরনের মিষ্টি।
  • আটার তৈরি কোনো কিছু, ভাত, পাস্তা, নুডলস, ওটস, কর্ন ফ্লেক্স সব বাদ।
  • সব ধরনের ফল নিষেধ।
  • সব ধরনের ডাল নিষেধ, ডালে প্রোটিনের পাশাপাশি ভালো পরিমাণ কার্ব থাকে।
  • মাটির নিচে হয় এমন সব সবজি যেমন: আলু, মুলা, গাজর, কচু সব বাদ।
  • যে কোনো ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার একদম বাদ।

কিটো ডায়েটে যেসব খাবার খাওয়া যাবে

  • মাংস: গরু, মুরগি
  • সব ধরনের মাছ
  • ডিম
  • বাটার
  • বাদাম
  • হেলদি ওয়েল-- যেমন অলিভ ওয়েল, কোকনাট ওয়েল, ক্যানলা ওয়েল
  • ঘি
  • সবুজ যে কোনো সবজি, পালং, ব্রকলি, বাঁধাকপি এসব।
  • মোটামুটি সবধরনের মশলা।

কিটোজেনিক ডায়েটের সুবিধা এবং ভালো দিক

  • অনেক বেশি প্রোটিন থাকাতে সহজে ক্ষুধা লাগবে না। আপনি সহজে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন।
  • এক গবেষণাতে দেখা গেছে, কিটো ডায়েট করা মানুষ টিপিক্যাল লো-ফ্যাট ক্যালরি রেস্টিক্টেড ডায়েটের চেয়ে ২.২ গুণ বেশি ওজন কমিয়েছে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক ইফেক্টিভ একটা ডায়েট, শুধু ওজন কমানো না ব্লাড সুগার আর ইনসুলিন লেভেল নিয়ন্ত্রণে আনে।
  • কিটো ডায়েট হার্ট ডিজিজ, ব্লাড প্রেশার, ব্লাড সুগারের রিস্ক কমায়।
  • পিসিওএস রোগীদের জন্য ইফেক্টিভ ডায়েট।

কিটো ডায়েটে সমস্যা

  • হোল গ্রেইন ফুড বন্ধ থাকার কারণে ফাইবার কম হবে। আর ফাইবার কম হলে কৌষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হবে। সবুজ শাক-সবজি, বাদাম, সাথে রাতে ঘুমানোর আগে ১-২ চা চামচ ইসপগুল এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেলে অনেকটা সমস্যা কমে যায়।
  • কার্ব কম হবার কারণে বডি পানি কম হোল্ড করে। তাই শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। প্রতি ১ গ্রাম কার্ব ৩ গ্রাম পানি হোল্ড করে। তাই বডিকে হাইড্রেটেড রাখতে বেশি পানি খেতে হবে। দিনে ৩-৪ লিটার মিনিমাম। পানি আর মিনারেলের ঘাটতি কমাতে দিনে ১.৫ -২ চা চামচ লবণ সারাদিনের খাবারে খেতে হয়।
  • ফল আর গ্রেইন ফুড সব বন্ধ করার কারণে শরীর সব ধরনের ভিটামিন, মিনারেল পাবে না সেজন্য আপনাকে মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে সে ঘাটতি পূরণের জন্য। দিনে ১ টা ভিটামিন সি আর একটা মাল্টিভিটামিন ক্যাপসুল খেতে হবে।
  • কার্বোহাইড্রেট বডিকে ইন্সট্যান্ট এনার্জি প্রোভাইড করে। যেহেতু কার্ব কম থাকবে তাই আপনি কম এনার্জেটিক ফিল করবেন। কার্ডিও টাইপ ওয়ার্কআউট করতে সমস্যা হবে। সব ওয়েটলস ডায়েটে কিছুটা এনার্জি লস হয়।
  • কিটো ফ্লুঃ কিটো ডায়েটের মূল সমস্যা এটা। এক্সট্রীম লেভেলে বডিকে নিয়ে যেতে অনেক মেন্টালি স্ট্রং হতে হবে। নরমাল ডায়েট থেকে কিটো ডায়েটে গেলে শরীরে একটা মেটাবলিক সিফট হয়। এটাকেই কিটো ফ্লু বলে। কিটো ফ্লুতে আপনার বমি বমি ভাব হবে, কাশি হতে পারে, ক্লান্তি আসতে পারে, মাথা ব্যথা হতে পারে। ওয়ার্কআউট করলে এটা খুব বেশি থাকে না। আর নরমালি ৪-৫ দিন কিটো ফ্লু এর ইফেক্ট থাকে, তারপর আর সমস্যা নাই।

(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :