করোনা ভাইরাস: বন্দরে বন্দরে সতর্কতা

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
বেনাপোল বন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে গতকাল ভারত থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়

চীনের হুবেইয়ের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নিউমোনিয়া সদৃশ করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে চার মহাদেশের অন্তত ১২টি দেশে। ভারতেও আক্রান্ত ১১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেশি দেশটিতে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্তের খবরের মধ্যেই আখাউড়া ও বেনাপোল স্থলবন্দরে সতর্কতা জারি করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও যশোরের স্বাস্থ্য বিভাগ।

গত শুক্রবার থেকে বেনাপোল বন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ভারত থেকে আসা বিদেশি নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এরইমধ্যে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে হেলথ ডেস্ক বসিয়ে সোমবার কাজ শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে ফ্লু টাইপের এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুর হয়। পরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি বেইজিংসহ অন্যান্য প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। করোনা ভাইরাসে শুধু চীনেই এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিত করেছে। এদের মধ্যে ৪১ জনই মারা গেছেন।

আর গত কদিনেই জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ম্যাকাও এবং যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্তত ১২টি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সতর্কতা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস নিয়ে নড়েচড়ে বসছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্বাস্থ্য বিভাগ। বিশেষ করে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে হেলথ ডেস্ক বসিয়ে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।

আখউড়া স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় হাজার যাত্রী ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করেন। আর আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়েও ভারত থেকে পণ্যবাহী জাহাজ আসা-যাওয়া করে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) পাওয়া এ সংক্রান্ত নির্দেশনার পর সোমবার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে হেলথ ডেস্ক বসানো হবে। এছাড়া আশুগঞ্জ নৌবন্দরেও এই সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।

মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের হেলথ ডেস্কের কর্মীরা চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াতকারী বাংলাদেশি ও ভারতীয় কোনো নাগরিক সম্প্রতি চীন ভ্রমণ করেছেন কি-না সেটিও শনাক্ত করবেন। যদি এমন কোনো যাত্রীর সন্ধান পাওয়া যায় তাহলে তার প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।’

সতর্কতা বেনাপোলেও

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যতম স্থলবন্দর বেনাপোলে ‘করোনা ভাইরাস’ সংক্রামণ ঠেকাতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে বেনাপোল প্রতিনিধি। গত শুক্রবার থেকে বন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ভারত থেকে আসা বিদেশি নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা যাত্রীদের এই ভাইরাসটি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।

এরই মধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থলবন্দরে আইরিশ ১ জন, অস্ট্রেলিয়ার ৪ জন, কানাডার ২ ও আমেরিকার একজনসহ মোট ৮ বিদেশির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ডা. হাসানুজ্জামান ।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল মজিদ জানান, করোনা ভাইরাস যেন বাংলাদেশে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্কতা জারি করেছে। বিদেশি যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এ ভাইরাসের লক্ষণ সম্পর্কেও সচেতন করা হচ্ছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদ আলম জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে কোনোভাবে দেশে প্রবেশ করতে না পারে  সেজন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সম্প্রতি চীন থেকে ফেরা ১১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ শনাক্ত করা হয়েছে। হাসপাতালের সম্পূর্ণ আলাদা ওয়ার্ডে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে সাতজন কেরালার, দু'জন মুম্বাইয়ের এবং একজন বেঙ্গালুরু ও একজন হায়দরাবাদের বাসিন্দা।

ভারতের কেরালার করোনা ভাইরাসবিষয়ক যোগাযোগ ইনচার্জ অমর ফেটল জানিয়েছেন, চীন থেকে আসা সাতজনের দেহে করোনা ভাইরাসের সামান্য লক্ষণ দেখা গেছে। তাদের আলাদা ওয়ার্ডে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন বিমানবন্দরে চীন এবং হংকং থেকে ফেরা ২০ হাজারের বেশি যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

এদিকে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ ঠেকাতে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সাইন্স (এইমস) ইতোমধ্যেই একটি আলাদা ওয়ার্ড এবং আক্রান্তদের চিকিৎসায় সেখানে আলাদা শয্যা প্রস্তুত করে রেখেছে।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট উল্লেখযোগ্য। বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া এই ভাইরাস অনেকটাই সেভার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা সার্সের মতো। ২০০২ এবং ২০০৩ সালে সার্সের কারণে বিভিন্ন দেশে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/এমআর