ডেঙ্গুকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ১৯ দফায় ৯৫ প্রতিশ্রুতি তাবিথের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ১৮:৫৪ | প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ১১:১৫
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছেন তাবিথ আউয়াল

ডেঙ্গুকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

ঘোষিত ইশতেহারে ঢাকা উত্তর সিটিকে বাসযোগ্য আধুনিক শহরে পরিবর্তন করা লক্ষ্যে যানজট, দূষণ ও পরিচ্ছন্নতাকে গুরুত্ব দিয়ে ১৯টি ক্ষেত্রে মোট ৯৫টি প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এজন্য নির্বাচনে তাকে বিজয়ী করতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সোমবার সকালে রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েলস ব্যাংকুয়েট হলে তাবিথ আউয়াল তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।

ঘোষিত ১৯ দফার মধ্যে রয়েছে- দূষণমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ঢাকা, মশক নিয়ন্ত্রণ, যানজট ব্যবস্থাপনা, গণপরিবহন, সড়ক নিরাপত্তা, অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, নারী শিশু ও প্রতিবন্ধী বান্ধব ঢাকা, নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ পানি, নিরাপদ খাদ্য, পাবলিক টয়লেট, ক্ষুদ্র ব্যবসা, ইন্টেলিজেন্ট সিটি অপরাধ দমন ও বিনোদন, আবাসন ও নগর প্রশাসন।

ইশতেহার ঘোষণাকালে তাবিথ বলেন, ‘এ দফাগুলো বাস্তবায়নে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’

তাবিথ অভিযোগ করে বলেন, ভোটাররা যেন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারেন সেজন্য তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তাবিথ জানান, মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে তিনি ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে বছরব্যাপী কার্যক্রম নেবেন। ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী এইডিস মশা ও লার্ভা নিধনে কার্যকর কীটনাশক প্রয়োগ, ‘মশা প্রতিরোধী’ বৃক্ষ রোপন, নিয়মিত মশার প্রবলতা পরীক্ষা ও জলাশয় পরিষ্কার করতে উদ্যোগ নেবেন তিনি।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু অনেকটাই ম্যানেজেবল এখন। সেটা কিন্তু সিটি করপোরেশন স্ব উদ্যোগে করে নাই। তাদের অবহেলাতেই ডেঙ্গু রোগ বিস্তার পেয়েছে। মেয়র নির্বাচিত হলে রাসায়নিক কারখানাগুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করার প্রতিশ্রুতি দেন তাবিথ।

ইশতেহারে দূষণমুক্ত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, ঢাকার উত্তরে তিনি যথাযথ সবুজায়ন করবেন। ‘ভার্টিকেল গার্ডেন’ প্রকল্প চালুর পাশাপাশি নগরবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে তার। পরিবেশবান্ধব দালানগুলোকে সনদ দেওয়া হবে।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে নগরীর আবর্জনা অপসারণ, রিসাইক্লিং সেন্টার স্থাপন ও পশু জবাইয়ের জন্য ‘আধুনিক স্লটার হাউজ’ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ‘টেকসই উন্নয়নের’ কথা রয়েছে তাবিথের ইশতেহারে। এ লক্ষ্যে গণপরিবহনমুখী যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে পুলিশ ও বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ঢাকার রুটগুলোকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি ইলেকট্রিক ও হাইড্রোজেন চালিত বাস, রাত্রীকালীন নিরাপদ বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ এবং নগর ঘিরে রাজউকের রিংরোড তৈরিতে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।

রাজধানীতে সড়কে বাসচাপায় মৃত্যুর ঘটনায় সড়কে নেমে শিক্ষার্থীদের যুগান্তকারী প্রতিবাদের পর নগরবিদরা বলছেন, সড়কে অব্যস্থপানার বেহাল দশা শিশুরা ‘চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগরে ‘কমন ইউটিলিটি বাইপাস ও টানেল’ নির্মাণ, ‘স্কাইওয়ার্ক’ প্রবর্তন, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ও পার্কিং ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তাবিথ।

স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ‘রিমোট ও ভার্চুয়াল চিকিৎসা সেবা, ‘মোবাইল মেডিকেল ইউনিট’ স্থাপন, নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ‘বিশেষ নারী সেল’ গঠন এবং নারীদের মাতৃত্বকালীন ও পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ধানের শীষের মেয়রপ্রার্থীর ইশতেহারে।

নগরে নিরাপদ ও সুপেয় পানির বন্দোবস্ত, প্রতিটি বাজারে ভেজাল খাবার পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ব্যবসায়ীদের দ্রুত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, অপরাধ দমনে ইমারজেন্সি পোর্টাল স্থাপন ও ক্রাইম ম্যাপিং চালু করার কথাও বলেছেন তাবিথ।

নগরবাসীর বিনোদনের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা, শিশুপার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন এবং আবাসন খাতে নাগরিক সমস্যা সমাধানে অনলাইন সার্ভিস চালু করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশতেহারে।

তথ্যপ্রযুক্তিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তাবিথ ঢাকা সিটিকে ‘ইন্টেলিজেন্ট সিটি’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। ডেটা অ্যানালাইসিস ও ফেইস রিকগনিশন চালু করে অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে চান তিনি।

তাবিথ বলেন, “আমি আপনাদের কাছে আমার স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথাগুলো বলবার আগে আবেদন জানাচ্ছি, দয়া করে আমাকে সহযোগিতা করুন, সমর্থন করুন, আমার পাশে দাঁড়ান। আমি আপনাদের সহানুভূতি চাই।“আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও সেবার বিষয়ে আমি কখনো আপস করব না। আমি কথা দিচ্ছি, নগরবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা আমি কখনো করব না। আমি কথা দিচ্ছি, পশ্চাদপদতা নয়, সবসময় আমার ভাবনা ও পরিকল্পনা থাকবে সম্মুখপ্রসারী ও আধুনিক।”

ইশতেহার ঘোষণার উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, মোহাম্মদ শাহজাহান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী জাফরুল্লাহ চৌধুরী , জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টি ( কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামান হায়দার, এলডিপির মহাসচিব শাহদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ।

ঢাকা উত্তরের ৫৪টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলামসহ মেয়র পদে ছয় প্রার্থীর মধ্যে থেকে ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে একজনকে বেছে নেবেন ভোটাররা।

(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/বিইউ/এমআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :