শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্য বন্ধে বগুড়ায় সোচ্চার অভিভাবকরা

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:৫৭

আদালতের রায়কে তোয়াক্কা না করে শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত সেশন ফি আদায় করছে বগুড়ার বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মঙ্গলবার একজন অভিভাবক সংবাদ সম্মেলন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

অতিরিক্ত ফি নেয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে আছে টিএমএসএস স্কুল ও কলেজ, এসওএস হারম্যান মেইনর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বগুড়া, ইয়াকুবিয়া উচ্চ বিদ্যালয় বগুড়া ও আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

মঙ্গলবার আবদুল মান্নান আকন্দ নামের একজন অভিভাবক এই সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি স্কুলগুলোর অতিরিক্ত সেশন ফি আদায়ের প্রতিবাদে ইতোমধ্যেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে রিট করেছিলেন। আদালত সেই রিটের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত সেশন ফি আদায় না করার জন্য নিদের্শ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ যথাযথভাবে পালনের জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেয়া হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে আবদুল মান্নান আকন্দ বলেন, বগুড়া জেলা প্রশাসক আদালতের সেই রায়কে আমলে না নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গলা কাটা ফি আদায়ের সুযোগ করে দিয়েছেন।

গত বছরের ২ জুলাই আদালত এসব অবৈধ টাকা ফেরত দিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেন। এই আদেশ কপি জেলা প্রশাসকের হাতে পৌঁছার দুই মাসের মধ্যে টাকা ফেরত নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসককে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আদালতের এই আদেশ সহজে মানবে না প্রতিষ্ঠানগুলো এমন ধারণা থেকেই বগুড়ার অভিভাবকরা দাবি আদায় এবং আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। সম্প্রতি বগুড়ার শুকরা কমিউনিটি সেন্টারে সচেতন অভিভাবদের একটি মতবিনিয় সভা, বগুড়ার সাতমাথায় অভিভাবক সমাবেশ, একাধিকবার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক এবং একাধিকবার সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন তিনি।

অভিভাবকদের অভিযোগ সেশন ফি’র নামে রীতিমত ডাকাতি করছে বগুড়ার নামিদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকার নির্ধারিত নীতিমালার কেউই তোয়াক্কা করছে না। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দৌরাত্ব সীমা অতিক্রম করেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্তানদের ভর্তি করার পরে অনেকটা দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।

অতিরিক্ত সেশন ফি ছাড়াও বাজার থেকে চার-পাঁচগুন বেশি টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বই, খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ বাধ্য হয়ে কিনতে হয়। এমন কি স্কুল ড্রেসও প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হয়। নামিদামী এসব স্কুল কলেজগুলোতে একবার কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হলে পর্যায়ক্রমে নানা বাহানায় একের পর এক খাত দেখিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এসব খাত দেখলে যে কেউ পিলে চমকে যাবে।

এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রশিদ বইয়ের মধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা আদায় করে সেই রশিদ বইটাও কিনতে হয় তাদের কাছে। কম্পিউটার ল্যাব, বিদ্যুৎ বিল, খেলাধুলা, পাঠাগার, নেম প্লেট, কেন্দ্র ফি, দরিদ্র তহবিল, সিলেবাস ফি, প্রসপেকটাস ফি। প্রসপেকটাস মূলত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ পাঁচ-দশ বছরেও ম্যাগাজিন প্রকাশ না করেও প্রতিবছর ম্যাগাজিন ফি নিচ্ছে। ফি নেয়া হচ্ছে মিলাদ মাহফিলেও।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমন ডাকাতি কারবার বন্ধ করতে বগুড়ার একজন সমাজসেবী আব্দুল মান্নান আকন্দ হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। তিনি জনস্বার্থে গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি একটি রিট পিটিশন করেন। রিটকারীর আইনজীবী মোশারফ হোসেন মনির জানান, জনস্বার্থে বগুড়ার একজন সমাজসেবী আব্দুল মান্নান আকন্দ মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। ওই রিটের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২ জুলাই হাইকোর্টের বিচারক জে.বি.এম হাসান এবং বিচারপতি খায়রুল আলমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ একটি আদেশ দেন। আদেশে উল্লেখ করা হয় মাত্রাতিরিক্ত সেশন ফি গ্রহণকারী বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি নীতিমালার বাইরে নেয়া বাড়তি টাকা অভিভাবকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। হাইকোর্টের এই আদেশ বগুড়ার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যও প্রযোজ্য হবে।

রিটকারী আব্দুল মান্নান আকন্দ বলেন, বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশন ফির নামে রীতিমত ডাকাতি চলছে। আমি এসব ডাকাতি বন্ধের প্রতিবাদ আজীবন করে যাবো। তিনি বলেন, যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আদালতের রায়কে আবারো অবজ্ঞা করে তাহলে স্কুলগুলোর সামনে গিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :