নদী দখলমুক্তির যুদ্ধে এক বছর

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:৩৬ | আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৬:১০

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে নদী দখলের মহোৎসব চলছিল দেশের বিভিন্ন স্থানে। নদীর তীরভূমি দখল করে নানা স্থাপনা গড়ে তুলেছিল প্রভাবশালীরা। ফলে নদী হারায় তার স্বাভাবিক গতিপথ ও সৌন্দর্য। নদীর হারানো রূপ ফিরিয়ে আনতে গত বছরের ২৯ জানুয়ারি আটঘাঁট বেঁধে নামে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ঢাকা নদীবন্দর থেকে শুরু হয় নদী উদ্ধারের কর্মযজ্ঞ।

নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। উচ্ছেদে ভাঙা পড়ে প্রভাবশালী সাংসদ, দুদক কর্মকর্তাসহ নানা প্রভাবশালী ব্যক্তির আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। ভাঙা পড়ে সরকারি সেবা সংস্থা বিটিসিএলের ভবন। আমিন-মোমিন হাউজিং নামের হাউজিং কোম্পানি তুরাগ নদের একটি চ্যানেল দখল করে সেখানে বিশাল হাউজিং গড়ে তুলেছিল। সেটি উচ্ছেদের পর পুরো হাউজিংটি খনন করে পুনরায় পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনে বিআইডব্লিউটিএ। এছাড়াও দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন হাউজিং প্রতিষ্ঠানের গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সংস্থাটির ভাষায়, ২০১৯ সাল ঢাকা নদী বন্দরের জন্য ‘সর্বজনীন প্রত্যয়ের বছর’।

এক বছরে চার পর্বে পরিচালিত ৫০ দিনের উচ্ছেদ অভিযানে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট চার হাজার ৭৭২টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে উদ্ধার হয় তীরভূমির ১২১ একর জায়গা। এসময় উচ্ছেদের পাশাপাশি দখলদারদের জরিমানাও করা হয়েছে। উচ্ছেদকৃত মালামাল উচ্ছেদস্থলেই নিলামে বিক্রি করা হয়।

উচ্ছেদের পর পুনরায় দখল হয়ে যায় তুরাগ তীর। সে অংশটি উদ্ধারে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আরও একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিআইডব্লিউটিএ। বাকি অংশগুলোতেও আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ'র যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর) এ কে এম আরিফ উদ্দিন।

পরিচালিত অভিযানে একাধিকবার বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে সংস্থাটিকে। দখলদারদের হামলায় আহত হয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ'র বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা। বুড়িগঙ্গার তীরে উচ্ছেদ অভিযানকালে দখলদারদের হামলায় আহত হয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান। হামলা হয়েছে উচ্ছেদে নেতৃত্বদানকারী সংস্থাটির যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিনের ওপর। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে।

উচ্ছেদের পাশাপাশি নদীকে তার হারানো রূপ ফিরিয়ে দিতে কাজ করছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে নদীতীরে সীমানা খুঁটি সংস্থানের কাজ শেষের পথে। এরপর তীরভূমিতে হাঁটার রাস্তা তৈরি, সবুজায়ন, লাইটিং, ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণসহ বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু নদী ও শীতলক্ষ্যা নদীকে বিনোদনের স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে আরিফ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দখলে-দূষণে ঢাকার চারপাশের মুমূর্ষু নদীগুলোকে উদ্ধারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে বিআইডব্লিউটিএ’র নেতৃত্বে গত বছর ২৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল নদী-মুক্তযুদ্ধ। আমরা এখনো মাঝ দরিয়ায়। যুদ্ধ এখনো চলছে। দরিয়া পাড়ি দিয়ে তীরে পৌঁছাতেই হবে আমাদের। এর কোনো বিকল্প নেই। পিছু হটার সুযোগ নেই। দেশপ্রেম, সাহস, সততা, উদ্যম আর আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে এ যুদ্ধে জিততেই হবে আমাদের। নইলে যে ক্ষমা করবে না বাংলাদেশ। ক্ষমা করবে না দুগ্ধদায়িনী মা-রূপী আমাদের এই নদীগুলো।

নদীকে দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করার প্রত্যয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নর্দমায় পরিণত হয়ে যাওয়া ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখল-দূষণমুক্ত করে পরিচ্ছন্ন প্রবহমান নদীতে পরিণত করে নদীর পাড়ে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও সবুজ বেষ্টনি গড়ে তুলে ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করবো ইনশাল্লাহ।’

(ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/কারই/জেবি)