বর্ষায় ভাঙনের ঝুঁকিতে রাজশাহীর পদ্মাপাড়

রিমন রহমান, রাজশাহী
| আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:১৬ | প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০২০, ১৮:১৪

গেল ভরা মৌসুমে পানির তোড়ে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের বেশকিছু এলাকা নাজুক হয়ে পড়েছে। বাঁধের ব্লক একটির পাশ থেকে আরেকটি সরে গেছে। তখন জরুরিভাবে বালুর বস্তা ফেলে এসব এলাকায় ভাঙন ঠেকানো হয়েছে। তারপর পানি চলে গেছে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে আর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের স্থায়ী সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে আসছে বর্ষায় ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে রাজশাহী নগরীর নবাবগঞ্জ ঘোষপাড়া এলাকা।

এর পাশাপাশি নগরীর শ্রীরামপুর এলাকাটিও পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদীর তীর রক্ষা বাঁধ সংস্কার-সংরক্ষণের কোনো কাজ করছে না। ফলে আতঙ্কিত রয়েছেন পদ্মাপাড়ের বিপুলসংখ্যক মানুষ। তারা আগামী ভরা মৌসুমেই নিজেদের বাসস্থান হারানোর আশঙ্কা করছেন। তাই আগামী বর্ষার আগেই তারা পাড় সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর পুলিশ লাইন থেকে পশ্চিমে নবাবগঞ্জ ঘোষপাড়া, কেশবপুর ঘোষপাড়া ও গোয়ালপাড়া এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ থাকলেও তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধের ব্লক একটি আরেকটি থেকে দূরে সরে গেছে। সেসব স্থানে বালুর বস্তা দেয়া হয়েছে। এসব এলাকায় প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বাস। বেশিরভাগেরই বাড়িতে ঢোকার প্রধান দরজা বাঁধের উপর। বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হলে মুহূর্তেই পদ্মায় নেমে যাবে বাড়িগুলো।

কেশবপুর গোয়ালপাড়া এলাকার বাসিন্দা লিজা বেগমের বাড়ির সামনে বাঁধের ব্লকগুলো এক সারি থেকে আরেকটি সারি তিন থেকে চার ইঞ্চি পর্যন্ত সরে গেছে। লিজা বেগম জানালেন, গত অক্টোবরে পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তাদের এলাকায় তীররক্ষা বাঁধে ধস নামে। এর আগের বছরও বাঁধের ব্লক একটু একটু করে সরে যেতে যায়। দুই বছরই বালুর বস্তা ফেলা হয়। কিন্তু স্থায়ীভাবে বাঁধটি আর সংস্কার করা হয়নি। এতে তারা উদ্বিগ্ন।

স্থানীয় বাসিন্দা আসগর আলী বলেন, পদ্মা যখন উত্তাল থাকে তখন বালুভর্তি বস্তা ফেলা হয়। স্থায়ীভাবে শুষ্ক মৌসুমে সংস্কার করা হয় না। আসগরের অভিযোগ, পানিতে বালুর বস্তা ফেলে সরকারি অর্থ লোপাট করা হয়। আর তাই শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ীভাবে বাঁধটি সংস্কার করা হয় না।

নগরীর টি-বাঁধ সংলগ্ন শ্রীরামপুর এলাকাটিও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। গত ২১ ডিসেম্বর সকালে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এলাকাটি পরিদর্শনে যান। তিনি এলাকার বাসিন্দা আশোক রায় এবং তার ভাই প্রদীপ রায়ের বাড়িতেও ঢোকেন। এ দুই ভাই সংসদ সদস্যকে তখন জানান, গত ভরা মৌসুমেই তাদের বাড়ির অর্ধেক ভেঙে গেছে। এবার স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা না হলে ভরা মৌসুমে পুরো বাড়িটাই নদীতে নেমে যাবে।

তখন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, পদ্মার ভাঙন থেকে রাজশাহী শহরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলেছি। এ ব্যাপারে কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি তাদের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি।

জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম বলেন, রাজশাহীর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কারের জন্য একটা প্রকল্প প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যেই পাঠানো হয়েছে। তবে দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা এখনও পাইনি। আর নগরীর তালাইমারী থেকে নবাবগঞ্জ ঘোষপাড়া এলাকার জন্য আরেকটি বড় প্রকল্প প্রস্তুত করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব প্রক্রিয়াগুলো শেষ করে কাজে হাত দেয়া হবে। আর স্থায়ী সংস্কারের আগে যদি নদীতে পানি চলে আসার কারণে ভাঙন দেখা দেয়, তাহলে জরুরিভাবেই সেটা মোকাবিলা করা হবে। (ঢাকাটাইমস/৩১জানুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :