অভিনন্দন মেয়র তাপস, অভিনন্দন মেয়র আতিকুল

প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:৩১ | আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:০২

আরিফুর রহমান দোলন

শান্তিপূর্ণ ভোটে ঢাকার দুই সিটিতে নতুন মেয়র পেলেন রাজধানীবাসী।  দুই মেয়রই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। ঢাকা দক্ষিণে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও উত্তরে নির্বাচিত হয়েছেন আতিকুল ইসলাম।

রাজধানী ঢাকার দুই নতুন অভিভাবক তথা মেয়রকে জানাই আমাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। নগরবাসীর সেবার লক্ষ্যে তাদের আগামী দিনের পথচলা সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত হোক এই কামনা করি।

আমরা আশা করি, নগরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন দুই সিটির অভিভাবকদ্বয়। এবং তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের কথা ভুলে যাবেন না কখনো। নির্বাচনী প্রচারণায়ও তারা তা-ই বলেছেন। তাদের ওপর আস্থা রেখেছেন নগরবাসী।

নবনির্বাচিত দুই মেয়র নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল মানুষ। পেশাজীবনে সফল আইনজীবী ফজলে নূর তাপস মেয়র হিসেবে নতুন, তবে পরপর তিনবারে ১১ বছর জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে মানুষের পাশে ছিলেন তিনি।  উত্তরে সফল ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম এর আগে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ৯ মাস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে উত্তর সিটির সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে অনুশীলন করে নিয়েছেন তিনি। কাজেই দুজনের কাছে ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা অনেক। তারা এই ক্ষেত্রেও সফল হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

এ ছাড়া তাদের অভিভাবক হয়ে পাশে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মাথাপিছুু আয়, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবসম্পদসহ সামাজিক নানা সূচকে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। ইতিমধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে গণ্য হচ্ছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল, রাজধানীতে মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র- এসব মেগা প্রকল্প আমাদের প্রথম বিশ্বের কাতারে যেতে আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে।

সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার দলের পক্ষে মেয়র মনোনয়নে আস্থা রেখেছিলেন ব্যারিস্টার ফজলে নূূর তাপস ও আতিকুল ইসলামের প্রতি। তিনি যোগ্য মানুষ নির্বাচন করেছেন এবং তারা ঢাকাবাসীর ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ঢাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।  

এখন এই আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিদান দিতে হবে দুই মেয়রকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা দৌড়াতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

দুই নগরপিতা নিশ্চয়ই তাদের অগ্রাধিকার কার্যপরিকল্পনা ইতিমধ্যে সেরে রেখেছেন। তবু আমরা কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে যানজট, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট; সড়ক ও ফুটপাত বেদখল; অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, জলাবদ্ধতা,  মশার উপদ্রব-এসব দিকে জোরালো নজর দেওয়ার কথা বলব। সব শ্রেণির মানুষের ভোগান্তির কারণ ও স্বাচ্ছন্দ্য নাগরিক জীবনের অন্তরায় এসব আপদ। এমনকি বিদেশিরা যখন বাংলাদেশ ভ্রমণে আসে, তারা দেশের প্রকৃতি ও মানুষের প্রশংসা করলেও রাজধানী ঢাকা নিয়ে তাদের মন্তব্য আমাদের জন্য সুখকর হয় না।

রাজধানীর রাস্তাঘাটে বছরজুড়ে নানা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি নগরীর এক নিত্যভোগান্তি। নগরীর বাতাসে ধুলাবালির বড় উৎস এই কাটাকুটি। এ নিয়ে লেখালেখি, সেমিনারে বক্তব্য কম হয়নি। কিন্তু সবই গরলবেল। বলা হয়, বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ের অভাবে এমনটি হয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে এই বচন শুনে মানুষ বিরক্ত। এটি বন্ধ হওয়া দরকার। নিশ্চয় আমাদের দুই মেয়র এদিকে বিশেষ মনোযোগ দেবেন।

একই সঙ্গে নগরবাসীর নাগরিক সচেতনতার দিকটিও আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই। আমরা নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো ঠিকভাবে পালন না করলে দুই মেয়র শত চেষ্টা করেও একটি আদর্শ নগরী উপহার দিতে পারবেন না আমাদের। তাদের সব চেষ্টা আখেরে বিফলে যাবে। তাই পথচলা থেকে শুরু করে প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে আইন মান্য করা, যেখানে-সেখানে ময়লা না ফেলা, পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতাসহ মানবিক দায়িত্বগুলো সম্পর্কে আমরা সজাগ থাকলে সুন্দর ঢাকা উপহার দিতে মেয়রদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।