ঝুঁকি নিয়ে ইটভাটায় কাজ করছে শিশুরা

প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:০২

জাকির হোসেন, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ইটভাটাগুলোতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে স্বল্প পারিশ্রমিকে শিশু-কিশোরদের সম্পৃক্ত করে একদিকে যেমন মজুরি বৈষম্যের সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে শিশুশ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছেন ভাটা মালিকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের আইসঢাল এলাকায় ফাইভ স্টার ব্রিকস্ ফিল্ডে কাজ করছে স্কুলপড়–য়া বেশ কয়েকজন শিশু। তারা কাঁচা ইটের পাইয়ে থাকা ইটগুলো রোদে শুকানোর কাজ করে। প্রতিটি পাইয়ে প্রায় দুই হাজার থেকে ২২শ’ কাঁচা ইট থাকে। এ পরিমাণ ইট উল্টিয়ে দিয়ে শুকানোর জন্য প্রতিটি শিশুকে দেয়া হয় ২০ টাকা। অথচ এ কাজ করানোর জন্য একজন বয়স্ক শ্রমিক নিয়োগ করা হলে তাকে দিতে হতো কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

একই রকম দৃশ্য দেখা যায় বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর সোনাখুলিতে সম্পূর্ণরূপে কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা এমএমবি ইটভাটায়। এখানে নিয়মিত কাজ করে এমন দুইজন শিশু শ্রমিক। তাদের একজন হলো সোনাখুলি মুন্সিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র মো. শাহিন (৭)। সে ওই এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে। অন্যজন উপজেলা কাশিরাম ইউনিয়নের পশ্চিম বেলপুকুর হলদিয়া পাড়ার মমিনুল ইসলামের ছেলে নাজমুল (৮)। সেও একই স্কুলের ছাত্র ও শাহিনের সহপাঠী।

এরকম অসংখ্য শিশু উপজেলার প্রায় ৪২টি ইটভাটায় সচরাচর কাজ করছে। অনেক শিশুকে দেখা গেছে ইটভাটার মূল প্লাটফরমের উপরিভাগে কাজ করছে। তাছাড়া অনেকে চুল্লিতে কয়লা বা কাঠ দেয়ার কাজও করছে। যা খুবই ঝুঁকিপুর্ণ। অনৈক সময় তারা মাটির গাদা তৈরির জন্য মাটিভর্তি ট্রলি ঠেলে নিয়ে যাওয়ার কাজ করতেও বাধ্য হয়।

এ ব্যাপারে এমএম ব্রিকস-এর স্বত্ত্বাধিকারী আতিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা কাজ করছে তাতে কী হয়েছে। তারা কি খুব কষ্টদায়ক কোনো কাজে নিয়োজিত? গরিব মানুষ এখানে কাজ করার বিনিময়ে যতটুকু আয় করছে তাতে তাদের পরিবারের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে সহযোগিতাই তো হচ্ছে।

ফাইভ স্টার ব্রিকস্ ফিল্ডের মালিকদের একজন জয়নাল আবেদীন জানান, শিশুরা স্কুল ছুটির সময় ইটভাটায় কাজ করে। এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া শিশুরা তো এখানকার নিয়মিত শ্রমিক নয়। তাই এ ব্যাপারে কারো নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।  

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিম আহমেদ জানান, এ সংক্রান্ত আইন রয়েছে তবে তা এখনও গ্যাজেটভুক্ত না হওয়ায় সে অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরও যদি আমরা ইটভাটার বিরুদ্ধে আইন অমান্যের কোনো অভিযোগ পাই, তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বিশেষ করে শিশুশ্রম বিষয়ে।

রংপুর বিভাগীয় কল কারখানা পরিদর্শন দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক সোমা রায় জানান, নির্দিষ্ট করে ইটভাটার নাম বলেন। যেখানে শিশু শ্রমিকেরা কাজ করছে। তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

(ঢাকাটাইমস/৪ফেব্রুয়ারি/কেএম/এলএ)