নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা

দাম কেন বাড়ে জানেন না ব্যবসায়ীরা

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:২৪ | প্রকাশিত : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:১৭
ফাইল ছবি

দৃশ্যমান কোনো কারণ না থাকলেও নিত্যপণ্যের বাজারে গত দুই সপ্তাহ ধরেই দামবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে কেন দাম বাড়ছে তার যৌক্তিক কোনো কারণও দেখাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই অপরাপর নিত্যপণ্যের গায়েও তার ছোঁয়া লেগেছে।

দফায় দফায় বাড়ছে আদা, রসুন, ভোজ্যতেল, ডাল, চালসহ মরিচ ও হলুদগুড়ার দাম। পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে শুনলেই মজুদ রাখা পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন বাড়য়ে দিচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এভাবে প্রতিদিনই ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় নির্বিচারে পকেট কাটা পড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের।

রোজার প্রায় তিন মাস আগে থেকেই ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাজারে আদৌ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রতি বছরই রমজান মাস সামনে রেখে আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে নেয়ার অঘোষিত একটি চেষ্টা চালিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে অস্থির বাজারের পেছনেও ব্যবসায়ীদের তেমন অপচেষ্টা কাজ করছে কিনা, খতিয়ে দেখে আগাম ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়া নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং বাজারকে অস্থির করে তোলা সভ্য সমাজের কাজ নয়। বাড়িয়ে দেওয়া নিত্যপণ্যের দাম পরে কমে এসেছে তেমন নজিরও খুব কম। এ অবস্থায় সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম যৌক্তিক রাখার বিকল্প নেই বলেই তাদের পরামর্শ।

দাম বাড়ার সঠিক কারণ কি তাও জানাতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। পাইকারি কিংবা খুচরা কোনো পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাই নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি নিয়ে সদুত্তর দিতে পারছে না। ফলে সরকার ও জনগণকে জিম্মি করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা নিজ থেকে দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে কিনা সেটি তদারকি করতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডাবল সেঞ্চুরির পর কিছুদিন শিথিল ছিল পেঁয়াজের বাজার। রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধির পর একশর ঘরে নেমে আসে জরুরি এ নিত্যপণ্যের দাম। জনমনে সেই স্বস্তি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দফায় দফায় এই বাড়ে তো এই কিছুটা কমে আসে দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই পণ্যটি।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম। গত সপ্তাহে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া রসুন এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে আদার দাম। বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।

পাইকারি চালের বাজারে বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ার প্রভাব পরেছে খুচরা বাজারে। কেজির প্রতি এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মোটা ও চিকন চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২ টাকা পর্যন্ত বেড়ে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। এক থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মোটা চালের দাম।

গত দুই সপ্তাহ ধরে বেড়েই চলেছে বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আরাফাত জেনারেল স্টোরের মালিক ফরহাদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে জানান, গত দুই সপ্তাহে রূপচাঁদা এবং তীর দুটি প্রতিষ্ঠানের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে এক সপ্তাহ আগে রূপচাঁদার ৫ লিটারের বোতল জাত তেলের দাম ২০ টাকা বেড়েছে। ৫৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া ৫ লিটার তেলের এখন এখন সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৫৫০ টাকা।

একই সময়ে তীর তার পাঁচ লিটারের বোতলে দাম বাড়িয়েছে ৩০ টাকা। ৫০০ টাকায় বিক্রি হওয়া তেল এখন ৫৩০ টাকা। একই সঙ্গে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেই তীরের ২ লিটার বোতল ২০২ টাকা থেকে বেড়ে ২১৮ টাকা এবং ১ লিটারের বোতল ১০২ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানের চলতি সপ্তাহে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত তেলের দাম বাড়িয়েছে রূপচাঁদা। ২১৮ টাকায় বিক্রি হওয়া ২ লিটারের প্রতি বোতল সয়াবিন তেল এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২২৬ টাকায়। আর এক লিটারের বোতলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১১৪ টাকা। এদিকে দাম বাড়ার কারণ জানা নেই খুচরা বিক্রেতাদের।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। একই হারে বেড়েছে দেশি মসুরের দাম। বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। আগামী সপ্তাহে এ দাম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন অনেক খুচরা বিক্রেতা। তবে কি কারণে দাম বাড়তে পারে তার কারণ জানা নেই কারই।

রাজধানীর পলাশী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম যেখানে এক সপ্তাহ আগেও ছিল কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, সেখানে কোনো কারণ ছাড়াই রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গতকাল তা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। কক ও পাকিস্তানি মুরগির দামও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া মাছের বাজারেও লেগেছে দামবৃদ্ধির অপতৎপরতা। রুই, শিং, পাবদা, টেংরা ও সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছ ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তবে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৪৮০ থেকে ৫০০ এবং খাসির মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে দেশে উৎপাদিত সবজিতে বাজার ভরতি হলেও প্রায় সব সবজিরই দাম বেড়েছে। বিক্রেতাদের ভাষ্য, শীতের সবজি বিদায়ের সময়ের কারণে সরবরাহ কম এবং গ্রীষ্মের সবজি এখনও ভালোভাবে বাজারে না আসায় দাম একটু বেশি।

পলাশী বাজারে তাহমিনা আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আসলে কোনো কিছুরই দাম বাড়ানো-কমানোর পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ অন্তত আমাদের দেশে নেই। এখানে ব্যবসায়ীদের মর্জিই চূড়ান্ত।’ এই সরকারি চাকুরের মতে, বর্তমান বাজারে অস্থিরতার পেছনেও ব্যবসায়ীদের সেই মানসিকতাই কাজ করছে।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিষয়টি সরকারের ব্যবস্থাপনার ভুল বলে মনে করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘সরকারে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় একটা গলদ আছে বলে মনে করছি। ব্যবসায়ীদের লাগামহীন আচরণ সরকারি ব্যবস্থাপনারই দুর্বলতা।

তবে এখনও বাজার লাগামছাড়া হয়ে যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের ব্যয় বাড়ছে, আয় বাড়ছে না। এখান থেকে দ্রব্যমূল্যের ওপর একটা প্রভাব পরতে পারে। সরকার ব্যবস্থা নিলে সব কিছু ঠিক হতে পারে।’

(ঢাকাটাইমস/০৫ফেব্রুয়ারি/কেআর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :