পরাজয়েও বড় অর্জন দেখছে বিএনপি

প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:০৪

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত দুই মেয়রপ্রার্থী বিপুল ভোটে হারলেও প্রচারণাকালে যে জনসমর্থন দেখা গেছে সেটিকে এক রকম জয় হিসেবেই নিয়েছে দলটি। ভোটে পরাজয়ে ক্ষতি নয় বরং বেশকিছু অর্জনই দলের নীতিনির্ধারকদের চোখে ধরা পড়ছে। আর এসব অর্জন দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে সহায়ক হবে বলেই মনে করছে দলটি।

শনিবার ঢাকার ভোটের ফল কার্যত প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। আলোচিত এই নির্বাচনে ভোট কম পড়া নিয়ে কথা উঠেছে সব মহলেই। এই নির্বাচনে দুই সিটিতে মেয়রপদে লড়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হেভিওয়েট চার মেয়রপ্রার্থী। বিএনপির দুই তরুণ তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন উত্তর-দক্ষিণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে বিপুল ভোটে হেরেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের কাছে।

হেরে গেলেও এতে খুব বেশি ক্ষতি দেখছে না দলটি। বরং বেশ কিছু অর্জন দেখছেন নীতিনির্ধারকরা, যা আগামী দিনে আন্দোলন কর্মসূচিতে সহায়ক হবে বলে মনে করছে বিএনপি। এই দুই রাজনীতিকে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

তাদের ভাষ্য, ঢাকা মহানগরের রাজনীতিতে বিভেদ দূর করে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা, মামলায় জর্জরিত ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা, ইভিএমের বিরোধিতা করার যৌক্তিকতা প্রমাণ করাসহ বেশ কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। বেশ কিছু ভুলত্রুটিও সামনে এসেছে।

নেতাদের দাবি, নির্বাচনের আগে সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতি যে তাদের অনুকূলে থাকবে না এটা তারা নিশ্চিত ছিলেন। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্বাচনী কার্যক্রমের শুরু থেকে শেষ অবধি মাঠে থেকেছে দলটির নেতাকর্মীরা। ফলাফল নিয়ে গোজামিলের অভিযোগ করলেও দুই মেয়র প্রার্থী যে পরিমাণ ভোট পেয়েছেন তাকেও অর্জনের খাতায় রাখছেন তারা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে সেটা প্রমাণ হয়েছে। মানুষের কানে পৌঁছাতে পেরেছি অন্যায়ভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় করতে পেরেছি।’

নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় থাকা নেতারা বলছেন, ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে কম হওয়ায় সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে এটা স্পষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আমরা যে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম তাও প্রমাণ হয়েছে। ভোটে না আসলে এটা প্রমাণের সুযোগ ছিল না।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেই যে গ্রহণযোগ্য হবে এটা বাস্তবসম্মত কথা না। যারা মেয়র হয়েছেন তারা কতভাগ মানুষের ভোটে নির্বাচিত সেটাও দেখতে হবে। আওয়ামী লীগের লোকজনই যায়নি ভোট দিতে। তাহলে কি নির্বাচন হলো?’

তবে প্রচারণার শুরু থেকে মাঠ দাঁপিয়ে বেড়ালেও নির্বাচনের দিন ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীদের সেইভাবে সক্রিয় অবস্থান না থাকাকে সাংগঠনিক ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করছেন কেউ কেউ। এ জন্য মূলদল ও অঙ্গ সংগঠনের ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন নেতাকর্মীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলে মহানগরের অনেক নেতারা দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন। কিন্তু শেষে এসে সেটা আর দেখা যায়নি। বিশেষ করে ভোটের দিন তেমন কেউ মাঠেই ছিলেন না। মাঠে থাকলে পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা হলেও বদলে যেত।’

কি কারণে এমনটা হয়েছে- জানতে তিনি বলেন, ‘কমিটি নিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ আছে। উত্তরের সভাপতি দেশে নেই। সাধারণ সম্পাদককেও প্রকাশ্যে তেমন দেখা যায় না। বাকিরা কি করবে?’

এদিকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় দক্ষিণ সিটিতে মহানগরের সভাপতি হাবিব-উন-নবী সোহেলকে প্রতিদিন মাঠে দেখা গেলেও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারকে খুব একটা দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়েও অনেকে কথা বলেছেন আড়ালে আবডালে।

ইভিএমের বিরোধিতার যৌক্তিকতা প্রমাণে বিএনপি সক্ষম হয়েছে দাবি করেছেন ঢাকা উত্তরের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘সিইসি, ড. কামাল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো মানুষের আঙুলের ছাপ মেলেনি। এই জটিলতার কারণে বহু মানুষ ভোট দিতে পারেননি। ইভিএমে ভোট নিয়েও ফলাফল ঘোষণা করতে হয়েছে মধ্যরাতে। এসব কি প্রমাণ করে না এটাকে যতটা সহজ বলা হয়েছিল আসলে ততটাই জটিল?’

ইশরাক-তাবিথে মুগ্ধ হাইকমান্ড

মেয়রপদে প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর সমালোচনা হয়েছিল বিএনপির। তবে নানা বাধা বিপত্তির পরও শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকেছেন ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আউয়াল। দুই তরুণ প্রার্থী প্রচারণায় মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছেছেন। বিশেষ করে প্রথমবারের মতো রাজনীতির মাঠে নেমেও মানুষের মাঝে ইশরাক হোসেন জায়গা করে নিয়েছেন বলে মনে করছেন নেতারা। তাদের মতে, ভোটের হিসেবেও তা প্রমাণ হয়েছে।

বয়সে তরুণ ও উচ্চশিক্ষিত এই দুই প্রার্থীকে নিয়ে আগামী দিনে মহানগরে ভালো নেতৃত্বেরও আশা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। বিএনপি মহাসচিব এই দুই প্রার্থীর বিষয়ে বলেন, ‘এরা সম্ভাবনাময় তরুণ। তারা ডায়নামিক। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা সেটা প্রমাণ করতে পেরেছেন।’

(ঢাকাটাইমস/০৫ফেব্রুয়ারি/বিইউ/ডিএম)