১২৩ বছরের উমেশ চন্দ্র পাঠাগার
খুলনায় শুনলাম শত বছর আগের এক নারীর কথা। তিনি পরিচিত জনহিতৈষী কাজের জন্য। ধারণা করা হয় তিনি গণিকা ছিলেন। শত বছর আগে খুলনায় পুকুর খনন, স্কুলে জমি দান করেছেন। আগ্রহ হলো আরেকটু জানতে।
সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী বললেন, তথ্য উমেশ চন্দ্রতে খুঁজতে পারেন। মনে পড়ল, গতবার লোক গবেষক বাসুদেব বিশ্বাস বাবলা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন একজন গ্রন্থাগারিকের সাথে। এবারও তিনিই নম্বর দিলেন। উমেশচন্দ্র পাঠাগারের সংরক্ষক শ্যামলদাকে ফোন করে বলেছিলাম, ঢাকা থেকে এসেছি। গোলকমণিকে নিয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায় কিনা? শ্যামলদা বললেন- আপনি কষ্ট করে আসবেন? আগে আমি যেয়ে খুঁজে দেখি। তিনি খুঁজে বের করে বিকেলে ফোন করলেন। এমনকি ফটোকপি করে রাখবেন কিনা তাও জানতে চাইলেন।
বিস্ময়ের সাথে পাঠাগারে গেলাম ও মোবাইল ফোনেই ছবি তুলে নিয়ে এলাম। পাঠাগারের বয়স আর শ্যামলদার এই আন্তরিকতার বিবেচনায় হুট করে সিদ্ধান্ত নিলাম, এই পাঠাগারের সদস্য হতে হবে। ওই মুহূর্তে অত টাকা সাথে ছিল না। পরদিন যেয়ে আজীবন সদস্য হলাম। তখন পাঠাগারের ভেতর খুব মৃদু স্বরে বেজে চলেছে রবীন্দ্র সঙ্গীত। শ্যামলদা শুনছেন। শ্যামল দেবনাথ ১৯৭৬ সাল থেকে আগলে রাখছেন এই পাঠাগার। আমি বের হয়ে আসার পর সাথে যারা ছিলেন তাঁরা বললেন, শ্যামলদা না থাকলে যে কী হবে এই পাঠাগারের! এমন আন্তরিক গ্রন্থাগারিক আমি রাজধানীতে পাইনি। শ্যামলদা খুলনা চারুকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তবে আমার কাছে প্রথম পরিচয়, এমন একজন মানুষ যার জন্য অন্য শহর থেকে আসা একজন মানুষও মুহূর্তের সিদ্ধান্তে, হাজার পাঁচেক টাকা দিয়ে সদস্য হয়ে আসতে পারে একটি পুরনো গ্রন্থাগারের। উমেশ চন্দ্র পাঠাগারের বয়স এখন ১২৩ বছর।
এদিকে যশোর পাবলিক লাইব্রেরির বয়স ১৬৯। সম্ভবত এটি দেশের অন্যতম প্রাচীন পাঠাগার। যশোরের গ্রন্থাগারে গিয়েছিলাম তালপাতার বই দেখতে। একজন বয়স্ক ভদ্রলোক প্রথমে বিস্মিত হলেন আগ্রহের বিষয় শুনে। পরে আমি বিস্মিত হলাম তাঁর গল্প শুনে। আব্দুর রহিম চাচা এখানে আছেন ১৯৫৪ সাল থেকে। ৬৬ বছর ধরে তিনি বই সংরক্ষণ, যত্ম করেন। বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করে না বই রেখে। অবসর হয়েছে বহু আগে। তবুও প্রতিদিন গুটিগুটি পায়ে চলে আসেন লাইব্রেরিতে। আমার মতো কেউ গেলে বিপুল আগ্রহে তালপাতার পুঁথি বা পুরনো বই বের করে শুরু করেন তা সংগ্রহের ইতিহাস বলা।
আজ জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। আব্দুর রহিম চাচা ও শ্যামলদার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। রহিম চাচা লিখে রেখেছেন...আলোচনা সংক্ষিপ্ত করুন। আমি তাই আলোচনা এখানেই শেষ করলাম।
(ঢাকাটাইমস/৫ফেব্রুয়ারি/এজেড)