নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে চার কারিগরি দল

টিউবওয়েলের গ্যাসকূপে তলিয়েছে শহীদ মিনার, ডুবছে বিদ্যালয় ভবন

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২০:২৮ | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:১৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বায়েক ইউপির শেরেবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন টিউবওয়েলের কূপ থেকে দুই দিন ধরে অবিরাম বের হচ্ছে গ্যাস। সঙ্গে উঠছে বালি ও পানি। গ্যাস নির্গমনের ফলে গর্ত বড় হয়ে তলিয়ে গেছে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি। একটি ভবনের অর্ধেক বালির নিচে ডুবেছে। হুমকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়ের দুটি ভবন।

এই গ্যাস নিয়ন্ত্রণে পেট্রোবাংলার চারটি কারিগরি দল কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন।

বিপদের আশঙ্কায় আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয় অধিবাসীদের মাঝে। নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে কসবা থানার পুলিশ ও বিজিবি।

গতকাল বুধবার বিকট শব্দে এই কূপ থেকে গ্যাস নির্গমন শুরু হয়। ঢাকার পেট্রোবাংলা থেকে আসা কারিগরি দল পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করছে। তারা জানিয়েছে, তিন দিন পর্যবেক্ষণের পর বলা যাবে এটি বন্ধ করা যাবে কি না।

গ্যাস নির্গমনস্থলের পাশে লাল পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন বিদ্যালয়ের আশপাশে ভিড় করছে উৎসুক মানুষ।

বায়েক ইউপি চেয়ারম্যান ও শেরেবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল মামুন ভূঁইয়া জানান, বিদ্যালয়ের পুরনো টিউবওয়েলটি অকেজো হয়ে পড়ায় সরকারিভাবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে একটি টিউবওয়েল বসানোর কাজ চলছিল। ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৫৪০ ফুট গভীরে যাওয়ার পর বালি ও পানির স্তর পাওয়ায় ফিল্টার লাগানোর জন্য পাইপ ওপরে তোলা হচ্ছিল।

প্রায় ১৫০ ফুট ওপরে তোলার পর হঠাৎ বিকট শব্দে গ্যাস উদগীরণ হতে থাকে। প্রচণ্ড বেগে গ্যাসের সঙ্গে উঠছে বালু ও পানি। এই অবস্থা দেখে টিউবওয়েল মিস্ত্রিরা ভয়ে দূরে সরে যান।

গ্যাসের সঙ্গে বালু উঠে আসার কারণে বিদ্যালয়ের দুটি ভবন হুমকির মুখে। একটি ভবন অর্ধেক বালির নিচে চলে যাচ্ছে। আরেকটি ভবনের মধ্যে হালকা কাঁপুনি তৈরি হয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক।

এ ছাড়া গ্যাস ওঠার জায়গায় গর্ত বড় হয়ে তলিয়ে গেছে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি। বালি ও পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ একাকার হয়ে গেছে।

এ পরিস্থিতির দ্রুত নিরসন না হলে বিদ্যালয়ের প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা নিয়ে শঙ্কিত এলাকাবাসী। পাশেই অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানেও একটি নলকূপের পাইপ থেকে গ্যাস নির্গমন হয়।

বুধবার রাতে পেট্রোবাংলা থেকে এসেছে চার সদস্যের একটি কারিগরি দল। তারা পরীক্ষা করে দেখছেন এবং ঢাকায়ও বিভিন্ন নমুনা পাঠাবেন পরীক্ষা করার জন্য। আরও কয়েকজন কারিগরি কর্মকর্তা আসবেন পর্যবেক্ষণ করার জন্য।

সালদা গ্যাসফিল্ডের প্লান্ট অপারেটর রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘গভীর রাত থেকে পেট্রোবাংলার কারিগরি দল নমুনা সংগ্রহের কাজ করছে। বিকট শব্দ এবং প্রচণ্ড বেগে গ্যাস-পানি ও বালি ওঠার কারণে কাজ করতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে। ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্ত নেবে বাপেক্স কর্র্তৃপক্ষ।’ ভালো সংবাদ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা।

আজ বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভূঁইয়া জীবন। তিনি জানান, বিষয়টি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী নসরুল হামিদকে জানিয়েছেন তারা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পেট্রোবাংলা থেকে আসা টেকনিক্যাল টিম কাজ করছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সব ধরনের ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৬ফেব্রুয়ারি/কেএম/মোআ)