শিশুপ্রহরের অপেক্ষায় বইমেলা

তানিয়া আক্তার, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:০৭ | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২০:৫৯

দুই প্রজন্মের বই কিনেছেন সৈয়দ আতাহার আলী। সত্তরোর্ধ্ব বয়স। দুই যুগ আগে মেলায় এসে ছেলের জন্য সুকান্তের একটি বই কিনেছিলেন। এরপর দীর্ঘদিন প্রবাসযাপন শেষে ফিরে এসেছেন শেকড়ে। এবার প্রাণের মেলায় এসেই শিশু কর্নারে গিয়ে নাতির জন্য বই কিনেছেন। এমন বই অনুরাগীর পদচারণে আজ বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে আনন্দ ছড়াচ্ছিল শিশু কর্নার।

অপেক্ষা এখন আগামীকালের শিশুপ্রহরের। এর মধ্য দিয়ে এবারের মেলা তার চিরচেনা রূপে ফিরে যাবে বলে আশা করছেন মেলাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এবারের প্রথম শিশুপ্রহরের জন্য শিশু চত্বর সেজেছে আরও রঙিনভাবে। থাকছে খেলা আর নির্মল বিনোদন নেয়ার সুযোগ। পরিধির পরিসরে দেখাচ্ছে আরো সুন্দর। প্রতিটি স্টলেই রয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। শিশু-কিশোরদের উপযোগী করে তোলা হয়েছে পুরো শিশুচত্বর।

বইমেলার সদস্যসচিব বাংলা একাডেমির ড. জালাল আহমেদ বলেন, 'এবারের শিশুচত্বর বিশেষভাবে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি আমরা। ফলে এই কর্নারকে শিশু-কিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সাজানো হয়েছে।

শিশুপ্রহরের দিনগুলোতে ‘তারুণ্যের বই’ ব্যানারে শিশু-কিশোরদের বই পাঠে উৎসাহিত করা হবে।’

শিশুপ্রহরের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে মেলার সদস্যসচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো রয়েছেই। এ ছাড়া গতবারের চেয়ে বেশিসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত আছেন।’

রংবেরঙের বই খুঁজছে দুই শিশু। নগরীর বনশ্রী থেকে এসেছে তারা। একজন নোহা, আরেকজন নুজাত। মা আর ফুফুর সঙ্গে বেড়াতে আসা দুই বোন বেশ উচ্ছ্বসিত। নোহা বলল, 'ছবিওয়ালা বই বেশি পছন্দ। অনেক রং থাকে সেখানে। আমি অনেক বই কিনতে চাই।'

নোহার মা বলল, 'আজ এসেছি অনেকটা ফাঁকা থাকবে তাই। আগামীকালও আসার ইচ্ছে আছে।'

পুরো শিশুচত্বরে শিশুদের আগ্রহ রংবেরঙের বইয়ের প্রতি। ইকরি মিকরি স্টলের বিক্রয়কর্মী মেনু চিং মারমা ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'রঙের ওপর বই বা ছবিওয়ালা বই সবচেয়ে বেশি খোঁজে শিশুরা। তবে যারা স্কুলে পড়ে তারা বেশি কেনে গল্পের বই।’

বাণিজ্য মেলা আর এসএসসি পরীক্ষার কারণে বইমেলার পঞ্চম দিনও পুরোপুরি জমেনি। আগামীকাল শুক্রবার থেকে আসর জমবে বলে মনে করছেন প্রকাশক ও অন্যরা। শিশুপ্রহরও এতে ভূমিকা রাখবে।

ঝিঙেফুল প্রকাশনীর প্রকাশক গিয়াস উদ্দিন খান বলেন, 'শিশুরা আমাদের মেলার প্রাণ। শিশুদের বই কেনার আনন্দ সবাইকে ছুঁয়ে যায়। মেলা এখনো নিজের রূপ না পেলে আমাদের স্টলে ভালো বিক্রি হচ্ছে শিশুদের বই। আশা করছি শিশুপ্রহরের মধ্য দিয়ে প্রাণ ফিরে পাবে এবারের বইমেলা।'

প্রতি বছরের মতো এবারও শিশুপ্রহরের অপেক্ষায় আছে অনেক অভিভাবক ও শিশু। শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটায় শুরু হবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। আর এর উদ্বোধন করবেন শিশুদের শিল্পী রফিকুন্নবী। সোহরাওয়ার্দীর বর্ধিত অংশে এবারের প্রথম শিশুপ্রহর বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত। এরপর বরাবরের মতো বেলা তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে বইমেলা।

নতুন বই

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, আজ পঞ্চম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৮টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নূহ-উল-আলম লেনিনের বঙ্গবন্ধুবিষয়ক বই ‘রাজনীতিতে হাতেখড়ি ও কলকাতায় শেখ মুজিব’, আগামী প্রকাশনী বের করেছে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা’, কথাপ্রকাশ থেকে ড. এম আবদুল আলীমের স্মৃতিকথা ‘ভাষা সংগ্রামী এম এ ওয়াদুদ’, শোভা প্রকাশ থেকে সৈয়দ শামসুল হকের কিশোর কবিতার বই ‘শ্রেষ্ঠ কিশোর কবিতা’, একই প্রকাশনা থেকে সনজীদা খাতুনের প্রবন্ধের বই ‘রবীন্দ্র কবিতার গহনে’, অবসর প্রকাশনা থেকে রকিব হাসানের গোয়েন্দা কাহিনী ‘দানব রবিন’ প্রভৃতি। মূল মঞ্চ

বিকেল চারটায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় নূহ-উল-আলম লেনিন রচিত ‘রাজনীতিতে হাতেখড়ি ও কলকাতায় শেখ মুজিব’ শীর্ষক আলোচনা।

সৈয়দ হাসান ইমামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মোহীত উল আলম। আলোচনায় অংশ নেন আসাদ মান্নান এবং সাহেদ মন্তাজ। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন নূহ-উল-আলম লেনিন।

প্রাবন্ধিক বলেন, আলোচ্য বইয়ে লেখক অনেকটা নির্মোহ থেকে কীভাবে শেখ মুজিব টুঙ্গিপাড়া জন্মস্থান থেকে বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন তার একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু প্রণিধানযোগ্য রাজনৈতিক আলেখ্য তৈরি করেছেন। শেখ মুজিব তার যৌবনদীপ্ত সময়ে পাকিস্তান-আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান হবার সাথে সাথেই তিনি হৃদয়ঙ্গম করেন যে নতুন দেশটি দিয়ে বাঙালির স্বপ্ন পূরণ হবে না।

নূহ-উল-আলম লেনিনের গ্রন্থটির মূল অনুসন্ধান এ জায়গায় যে কখন থেকে বঙ্গবন্ধুর মানসে দ্বিজাতিতত্ত্বের ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের আবরণে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান থেকে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের কাঠামোয় সৃষ্ট অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ধারণা জন্ম নিল।

কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি ইকবাল আজিজ, ঝর্ণা রহমান, ফারুক মাহমুদ ও মারুফ রায়হান। আবৃত্তি করেন রেজিনা ওয়ালী, মীর বরকত ও নাজমুল আহসান। সংগীত পরিবেশন করেন চন্দনা মজুমদার, কোহিনুর আক্তার গোলাপী, লতিফ শাহ, রুশিয়া খানম ও রাকিবুল ইসলাম রাকিব।

(ঢাকাটাইমস/৬ফেব্রুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :